ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo শার্শায় শিয়াল মারার ফাঁদে কৃষকের মৃত্যু    Logo তানোরে একতা যুব সংঘের নিজস্ব অর্থায়নে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন Logo ফরিদপুর পাসপোর্ট অফিসে ৩ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন দালাল আটক Logo দুর্নীতিবাজ-মাফিয়াদের রাজনীতি চাই না”— ঝালকাঠিতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঘোষণা Logo কুষ্টিয়ায় পাউবোর কোটি টাকার তেল চুরির অভিযোগে দুদকের অভিযান Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছেলের বউকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুর গ্রেফতার Logo ঠাকুরগাঁওয়ে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৩ বিষয়ে ফেল Logo কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অস্ত্র-মাদকসহ আটক ১ Logo কুষ্টিয়া পৌরসভার গেটে আবর্জনা ফেলে কর্মবিরতিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ঠাকুরগাঁওয়ে পাউবো কর্মকর্তার কোটি টাকার কাঠ বাণিজ্য, বিপাকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা

ঠাকুরগাঁওয়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এস এম রিয়াজুল হক। ২০১৯ সাল থেকে এ পদে কর্মরত রয়েছেন তিনি। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও গোপনে গাছ কেনা, কনস্ট্রাকশন ভবনে কাঠ সরবরাহ, বিক্রি ও মজুদ করেছেন তিনি। পৌরশহরের কয়েকটি  সমিলে সরেজমিনে দেখা যায়, ফাড়াবাড়ি অটোস্ট্যান্ড মোড়ে সাইফুলের মিলে কাঁঠাল গাছের গুড়ি, সেনুয়া ব্রিজের পাশে বাবুর মিলে কাঁঠাল ও মেহগনী গাছের গুড়ি সহ মৌসুমির মিল, ফারুকের মিল সহ প্রায় সব কটি মিলে তার রয়েছে কোটি টাকার কাঠের গুড়ি।

 

সমিলগুলো থেকে কাঠের বিভিন্ন আকৃতি করে সেগুলো মজুদ করে রাখেন দুটি গোডাউনে। সরকারি কর্মকর্তার এমন কাঠ বাণিজ্যে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী ও সমিলের মালিকরা। চড়া দামে কাঠ কিনে মজুদ করায় বাজার ধরে রাখতে পারছেন না তারা। কর্মকর্তার এমন গোপন ব্যবসার আর কোটি টাকার আয় নিয়েও নানান প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

 

পৌরশহরের নিশ্চিন্তপুর ও তেলী পাড়ায় কাঠ মজুদ করার জন্য দু’টি গোডাউন রয়েছে তার। বিভিন্ন সমিল থেকে প্রস্তুত করা কাঠ মজুদ করে রাখা হয় গোডাউনে। দিনের বেলা সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যবসার গোমর ফাঁস থেকে বাঁচতে গভীর রাতে গোডাউন থেকে ট্রাকে করে কাঠ অন্যত্র পাঠান তিনি। তাতেও নিস্তার হয়নি এ সরকারি কর্মকর্তার। রাতের বেলা কাঠ সরিয়ে নেওয়ার সময় গণমাধ্যমের মুখে পড়েন তিনি।

 

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ এর বিধিমালার ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমোদন ছাড়া, সরকারি কাজ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন না। অন্য কোনো চাকরি বা কাজ গ্রহণ করতে পারবেন না। স্থানীয় সমিলের মালিক মোহাম্মদ বাবু বলেন, শহরের প্রত্যেকটা মিলে তার কয়েক কোটি টাকার কাঠ কেনা রয়েছে। আমরা যদি ৫০ টাকা দাম বলে , থাকি সে ৭০ টাকা দিয়ে সে সব কাঠ কিনে গোডাউনে রেখে দেয়। তার জন্য আমরা ব্যবসা করতে পারি না। তিনি এত টাকা কোথা থেকে পান। আর চাকরীর পাশাপাশি ব্যবসা কিভাবে করেন।

 

কাঠ ব্যবসায়ী আরিফ হাসান বলেন, আমাদের কয়েক মাস থেকে ব্যবসাকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। তিনি সবকিছু বেশি দামে কিনে নেন। সেগুলো আবার গোডাউনে মজুদ করে রাখেন। ঠাকুরগাঁও জেলা সহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। তার টাকার কাছে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

চাকুরীর পাশাপাশি একই কর্মস্থলে ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম রিয়াজুল হক বলেন, আমি কয়েক দফায় ৪০ হতে ৪৫ লাখ টাকার কাঠ কিনেছি। রংপুরে দু’টি ভবনের কনস্ট্রাকশনের জন্য কিনে দু’টি গোডাউনে রেখেছি। তবে এটি আমার ব্যবসা না। আর সব সমিলে আমার কাঠ কেনা রয়েছে। সবার হক আদায়ে আমি এটি করেছি।

 

গভীর রাতে গোডাউন থেকে কাঠি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দিনের বেলা আপনারা এসেছেন। ভাবলাম ঝামেলা হবে সে জন্য রংপুর পাঠিয়ে দিচ্ছি। ঠাকুরগাঁও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবসা করার সুযোগ নেই। এটি প্রমাণিত হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

ঠাকুরগাঁওয়ে পাউবো কর্মকর্তার কোটি টাকার কাঠ বাণিজ্য, বিপাকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা

আপডেট টাইম : ০৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :

ঠাকুরগাঁওয়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এস এম রিয়াজুল হক। ২০১৯ সাল থেকে এ পদে কর্মরত রয়েছেন তিনি। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও গোপনে গাছ কেনা, কনস্ট্রাকশন ভবনে কাঠ সরবরাহ, বিক্রি ও মজুদ করেছেন তিনি। পৌরশহরের কয়েকটি  সমিলে সরেজমিনে দেখা যায়, ফাড়াবাড়ি অটোস্ট্যান্ড মোড়ে সাইফুলের মিলে কাঁঠাল গাছের গুড়ি, সেনুয়া ব্রিজের পাশে বাবুর মিলে কাঁঠাল ও মেহগনী গাছের গুড়ি সহ মৌসুমির মিল, ফারুকের মিল সহ প্রায় সব কটি মিলে তার রয়েছে কোটি টাকার কাঠের গুড়ি।

 

সমিলগুলো থেকে কাঠের বিভিন্ন আকৃতি করে সেগুলো মজুদ করে রাখেন দুটি গোডাউনে। সরকারি কর্মকর্তার এমন কাঠ বাণিজ্যে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী ও সমিলের মালিকরা। চড়া দামে কাঠ কিনে মজুদ করায় বাজার ধরে রাখতে পারছেন না তারা। কর্মকর্তার এমন গোপন ব্যবসার আর কোটি টাকার আয় নিয়েও নানান প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

 

পৌরশহরের নিশ্চিন্তপুর ও তেলী পাড়ায় কাঠ মজুদ করার জন্য দু’টি গোডাউন রয়েছে তার। বিভিন্ন সমিল থেকে প্রস্তুত করা কাঠ মজুদ করে রাখা হয় গোডাউনে। দিনের বেলা সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যবসার গোমর ফাঁস থেকে বাঁচতে গভীর রাতে গোডাউন থেকে ট্রাকে করে কাঠ অন্যত্র পাঠান তিনি। তাতেও নিস্তার হয়নি এ সরকারি কর্মকর্তার। রাতের বেলা কাঠ সরিয়ে নেওয়ার সময় গণমাধ্যমের মুখে পড়েন তিনি।

 

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ এর বিধিমালার ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমোদন ছাড়া, সরকারি কাজ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন না। অন্য কোনো চাকরি বা কাজ গ্রহণ করতে পারবেন না। স্থানীয় সমিলের মালিক মোহাম্মদ বাবু বলেন, শহরের প্রত্যেকটা মিলে তার কয়েক কোটি টাকার কাঠ কেনা রয়েছে। আমরা যদি ৫০ টাকা দাম বলে , থাকি সে ৭০ টাকা দিয়ে সে সব কাঠ কিনে গোডাউনে রেখে দেয়। তার জন্য আমরা ব্যবসা করতে পারি না। তিনি এত টাকা কোথা থেকে পান। আর চাকরীর পাশাপাশি ব্যবসা কিভাবে করেন।

 

কাঠ ব্যবসায়ী আরিফ হাসান বলেন, আমাদের কয়েক মাস থেকে ব্যবসাকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। তিনি সবকিছু বেশি দামে কিনে নেন। সেগুলো আবার গোডাউনে মজুদ করে রাখেন। ঠাকুরগাঁও জেলা সহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। তার টাকার কাছে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

চাকুরীর পাশাপাশি একই কর্মস্থলে ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম রিয়াজুল হক বলেন, আমি কয়েক দফায় ৪০ হতে ৪৫ লাখ টাকার কাঠ কিনেছি। রংপুরে দু’টি ভবনের কনস্ট্রাকশনের জন্য কিনে দু’টি গোডাউনে রেখেছি। তবে এটি আমার ব্যবসা না। আর সব সমিলে আমার কাঠ কেনা রয়েছে। সবার হক আদায়ে আমি এটি করেছি।

 

গভীর রাতে গোডাউন থেকে কাঠি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দিনের বেলা আপনারা এসেছেন। ভাবলাম ঝামেলা হবে সে জন্য রংপুর পাঠিয়ে দিচ্ছি। ঠাকুরগাঁও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবসা করার সুযোগ নেই। এটি প্রমাণিত হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


প্রিন্ট