ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ফুলবাড়ী উপজেলায় মতবিনিময় সভা Logo তানোরে যাতায়াতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ Logo মাগুরাতে এসএমসি’র পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo রূপগঞ্জে সাংবাদিকের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন Logo অর্থনৈতিক শুমারি উপলক্ষে স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত Logo প্রত্যন্ত গ্রামে নারী ফুটবল প্রীতি ম্যাচ উপভোগ করলেন হাজারো দর্শক Logo বাঘায় উপজেলা শুমারি স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত Logo কুষ্টিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা Logo ফরিদপুরে দুই দিনব্যাপী তথ্য মেলা অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ঠাকুরগাঁওয়ে দিনে ৪ বিয়ে বিচ্ছেদ, এগিয়ে নারীরা

কোনো দম্পতির বিয়ের বয়স ছয় মাস, কারও দুবছর, আবার কারও পাঁচ বছর পেরিয়েছে। অনেকের বিয়ের বয়স এক দশক পেরিয়ে হয়েছেন দুই-এক সন্তানের অভিভাবক। স্বামী-স্ত্রীর এমন দীর্ঘদিনের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। কয়েক বছর আগেও বিয়ে বিচ্ছেদের এমন ঘটনা ঠাকুরগাঁওয়ে কম শোনা গেলেও বর্তমানে বিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

প্রতিদিন গড়ে বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে চারটি করে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সংসারে বনিবনা না হওয়া, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের কারণে দিন দিন বেড়ে চলছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা।

 

জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত ৮ মাসে জেলায় বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে ১১শ। এর মধ্যে নারীর মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়েছে ৬০০টি, ছেলের মাধ্যমে হয়েছে ৩০০টি আর পারিবারিকভাবে হয়েছে ২০০টি।

 

স্থানীয় সমাজকর্মী আবু মহিউদ্দিন বলেন, বিয়ে বিচ্ছেদ সমাজে একটি ব্যাধির মতো হয়ে গেছে। বিয়ে বিচ্ছেদ প্রতিকারের জন্য সচেতনতা জরুরি। বর্তমান সমাজে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই বেশিরভাগ সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটি পরিবারের সুন্দর সম্পর্কের যে প্রয়োজনীয়তা এসব নিয়ে সমাজের সবাইকে সচেতন করা দরকার। বিয়ে বিচ্ছেদ কমানোর জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হবে।

 

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বিয়ে বিচ্ছেদ অনেক বেড়ে গিয়েছে। বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের জন্য অনেকগুলো কারণ থাকে। আমি গত ১ মাসে যতগুলো তালাক করেছি বেশিরভাগই মেয়েপক্ষ থেকে হয়েছে। ছেলেপক্ষ থেকে বা উভয়পক্ষ থেকে তালাক খুবই কম। আর মেয়েপক্ষ থেকে বিচ্ছেদের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সংসারে বনিবনা না হওয়া ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন প্রধান কারণ। আমরা চেষ্টা করি একটি বিচ্ছেদের আগে যেন কোনোভাবে সেটাকে আটকানো যায়, কিন্তু তারপরও তা সম্ভব হয় না। আর একটি বিচ্ছেদের জন্য অনেকগুলো মানুষকে সেটার কুফল ভোগ করতে হয়।

 

ঠাকুরগাঁও শহরের হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিয়ে করেছি প্রায় ৪০ বছর। স্ত্রী আর আমি দুজন মিলে বিয়ের এতদিন পার করলাম। সংসারে অনেক ঝগড়া-বিবাদ হয়। আমরা সেগুলো নিজেদের মধ্যো আলোচনা করে ঠিক করে নেই। কিন্তু কোনো দিনও বিচ্ছেদ হবে এমনটা আমরা চিন্তাও করিনি। আমাদের সন্তানদেরও একই শিক্ষা দিয়েছি।

 

ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পরিবারে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে সব সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু এখন দেখা যায়, সামান্য সমস্যা হলেই ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিবারের বাঁধনগুলো এখন খুবই দুর্বল। তাই আমাদের সবার প্রয়োজন পরিবারের যে গুরুত্ব এটা বোঝা এবং সবাইকে এ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া।

 

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন বলেন, আদালতে এখন যতগুলো বিচ্ছেদের জন্য আসে তার মধ্যে মেয়েপক্ষ থেকে বেশি আসে। সংসারে স্বামী-স্ত্রী মিল না হওয়ার কারণেই তালাক হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, সংসার জীবনে সমস্যাগুলো সমাধান করে একে অপরের ভুলত্রুটি মেনে নিয়ে চলাই জীবন।

 

 

জেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক সাধারণত তিন প্রকার। ছেলেপক্ষ থেকে তালাক, মেয়েপক্ষ থেকে তালাক ও উভয়পক্ষ থেকে তালাক। এ বছর মেয়েপক্ষ থেকে তালাক বেশি হয়েছে। পারিবারিকভাবে তালাকের সংখ্যা খুবই কম।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

error: Content is protected !!

ঠাকুরগাঁওয়ে দিনে ৪ বিয়ে বিচ্ছেদ, এগিয়ে নারীরা

আপডেট টাইম : ০৪:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতনিধি :

কোনো দম্পতির বিয়ের বয়স ছয় মাস, কারও দুবছর, আবার কারও পাঁচ বছর পেরিয়েছে। অনেকের বিয়ের বয়স এক দশক পেরিয়ে হয়েছেন দুই-এক সন্তানের অভিভাবক। স্বামী-স্ত্রীর এমন দীর্ঘদিনের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। কয়েক বছর আগেও বিয়ে বিচ্ছেদের এমন ঘটনা ঠাকুরগাঁওয়ে কম শোনা গেলেও বর্তমানে বিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

প্রতিদিন গড়ে বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে চারটি করে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সংসারে বনিবনা না হওয়া, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের কারণে দিন দিন বেড়ে চলছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা।

 

জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত ৮ মাসে জেলায় বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে ১১শ। এর মধ্যে নারীর মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়েছে ৬০০টি, ছেলের মাধ্যমে হয়েছে ৩০০টি আর পারিবারিকভাবে হয়েছে ২০০টি।

 

স্থানীয় সমাজকর্মী আবু মহিউদ্দিন বলেন, বিয়ে বিচ্ছেদ সমাজে একটি ব্যাধির মতো হয়ে গেছে। বিয়ে বিচ্ছেদ প্রতিকারের জন্য সচেতনতা জরুরি। বর্তমান সমাজে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই বেশিরভাগ সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটি পরিবারের সুন্দর সম্পর্কের যে প্রয়োজনীয়তা এসব নিয়ে সমাজের সবাইকে সচেতন করা দরকার। বিয়ে বিচ্ছেদ কমানোর জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হবে।

 

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বিয়ে বিচ্ছেদ অনেক বেড়ে গিয়েছে। বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের জন্য অনেকগুলো কারণ থাকে। আমি গত ১ মাসে যতগুলো তালাক করেছি বেশিরভাগই মেয়েপক্ষ থেকে হয়েছে। ছেলেপক্ষ থেকে বা উভয়পক্ষ থেকে তালাক খুবই কম। আর মেয়েপক্ষ থেকে বিচ্ছেদের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সংসারে বনিবনা না হওয়া ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন প্রধান কারণ। আমরা চেষ্টা করি একটি বিচ্ছেদের আগে যেন কোনোভাবে সেটাকে আটকানো যায়, কিন্তু তারপরও তা সম্ভব হয় না। আর একটি বিচ্ছেদের জন্য অনেকগুলো মানুষকে সেটার কুফল ভোগ করতে হয়।

 

ঠাকুরগাঁও শহরের হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিয়ে করেছি প্রায় ৪০ বছর। স্ত্রী আর আমি দুজন মিলে বিয়ের এতদিন পার করলাম। সংসারে অনেক ঝগড়া-বিবাদ হয়। আমরা সেগুলো নিজেদের মধ্যো আলোচনা করে ঠিক করে নেই। কিন্তু কোনো দিনও বিচ্ছেদ হবে এমনটা আমরা চিন্তাও করিনি। আমাদের সন্তানদেরও একই শিক্ষা দিয়েছি।

 

ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পরিবারে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে সব সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু এখন দেখা যায়, সামান্য সমস্যা হলেই ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিবারের বাঁধনগুলো এখন খুবই দুর্বল। তাই আমাদের সবার প্রয়োজন পরিবারের যে গুরুত্ব এটা বোঝা এবং সবাইকে এ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া।

 

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন বলেন, আদালতে এখন যতগুলো বিচ্ছেদের জন্য আসে তার মধ্যে মেয়েপক্ষ থেকে বেশি আসে। সংসারে স্বামী-স্ত্রী মিল না হওয়ার কারণেই তালাক হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, সংসার জীবনে সমস্যাগুলো সমাধান করে একে অপরের ভুলত্রুটি মেনে নিয়ে চলাই জীবন।

 

 

জেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক সাধারণত তিন প্রকার। ছেলেপক্ষ থেকে তালাক, মেয়েপক্ষ থেকে তালাক ও উভয়পক্ষ থেকে তালাক। এ বছর মেয়েপক্ষ থেকে তালাক বেশি হয়েছে। পারিবারিকভাবে তালাকের সংখ্যা খুবই কম।


প্রিন্ট