যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনে আর কোনো বাধা থাকল না। মামলার রায় পক্ষে থাকায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলছে সদস্য চাঁদা আদায়। চেম্বার অব কমার্সের মোট সদস্য ১০ হাজার ৮শ’। অথচ ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার চাঁদা পরিশোধের শেষ সময় হলেও ২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেল পর্যন্ত চাঁদা দিয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬শ’৭৭ জন সদস্য। ৮ হাজারেরও বেশি সদস্য এখনও চাঁদা দেননি। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা চাঁদা পরিশোধ করেননি তারা ভোটার হতে পারবেন না।
যে কারণে এবারের নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বাদ পড়তে পারেন ওই ৮ হাজার সদস্য। আগামী ৩০ নভেম্বর তিন শ্রেণির ২১ জন নির্বাহী সদস্য প্রাথী নির্বাচিত হবেন। তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হবেন সভাপতি ও সম্পাদক মন্ডলী। আর ওই নির্বাচন আগামী ১২ ডিসেম্বর।
এ বিষয়ে যশোর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সর্বশেষ নির্বাচিত সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, তার কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একটি অংশ মামলা করেন। যে কারণে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবুও নতুন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় না।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে একটি মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাচন থেমে যায়। সেই থেকে কমিটি ছাড়া চলছে যশোরের ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনটি। দীর্ঘ ১০ বছর নির্বাচন না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা যায়নি। একজন সরকারি কর্মকর্তা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মামলা জটিলতা কাটিয়ে বিগত বছরগুলোতে কয়েক দফা তফসিল ঘোষণার পরও হয়নি ভোটগ্রহণ।
এর আগে ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দুই বছরের জন্যে সংগঠনটির হাল ধরেন। এটাই ছিল সংগঠনটির সর্বশেষ নির্বাচন। তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি একে আজাদের হস্তক্ষেপে নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর ২০১২ সালের ৩ মার্চ তারা দায়িত্ব পান। নির্বাচিত ওই কমিটি নতুন ভবনে তাদের কার্যক্রমও শুরু করে। দুই বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংগঠনের বিধি অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল।
এ তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণের দিন ছিল ওই বছরের ১২ জুলাই। তফসিল ঘোষণার দিন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ওই কমিটির অধীনে নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এমনকি নোটিশ বোর্ডে টাঙানো তফসিল ছিঁড়ে নিয়ে যান কয়েক ব্যবসায়ী। এরপর নির্বাচন ভেস্তে যায়। এরপর সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটি মেয়াদের শেষ দিন ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর যশোর সদর ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করে প্রশাসনের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। একই দিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।
২০১৪ সাল থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সময় দু’দফা তফসিল ঘোষণা করলেও নানা জটিলতার কারণে নির্বাচন করতে পারেননি। ২০১৫ সালের ১৬ মে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আরিফকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করে তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া মা ফাতেমা ফিস হ্যাচারির সত্বাধিকারী ফিরোজ আহমেদ মামলা ঠুকে দেন। এতে ভোটের আগের দিন নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।
এদিকে ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যশোর চিফ জুডিশিয়াাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রায় দেন নির্বাচনে কোনো বাধা নেই। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর আবারো যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপ- পরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুবকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ভোট গ্রহণের দিন ছিল ২৮ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ব্যবসায়ীদের একটি অংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে হয়নি। এরপর ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসাদুল হক। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় পর্যায়ক্রমে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগন।
এর মাঝে আবারো আরেক দফা নির্বাচনী প্রস্তুতি পন্ড হয় ২০২৩ সালে। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি জাল আয়কর সনদ দিয়ে ভোটার করানো হয়েছে অভিযোগ তুলে মেসার্স পারভেজ ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান যশোর সদর সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। এ মামলায় ওই বছরের ৮ জানুয়ারি ব্যবসায়ী ঐক্য প্যানেলের ১৮ প্রার্থী বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। পরে ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদের ১৮ প্রার্থী বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এদিন বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন। একইসাথে যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হওয়ায় ভোটার তালিকা পুণরায় যাচাই এবং যদি কোনো অসঙ্গতি থাকে তা দূর করে দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করার আদেশ দেন বিচারক।
এরপর চলতি মাসে হালনাগাদ ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৮শ’ সদস্যের তালিকা করে সদস্য চাঁদা আহবান করা হয়েছে নির্বাচন পরিচলনা বোর্ডের পক্ষে। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের আহবায়ক ও যশোর সিনিয়র সহকারী কমিশনার আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত তফসিলে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ নভেম্বর কার্যনির্বাহী কমিটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন হবে। এদিন ২১ জন নির্বাহী সদস্যকে নির্বাচিত করা হবে। সাধারণ শ্রেণির সদস্য থেকে ১২ জন, সহযোগী সদস্য শ্রেণি থেকে ৬ জন এবং টাউন এ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ থেকে ৩ জন সদস্যকে নির্বাচিত করা হবে। আর আগামী ১২ ডিসেম্বর সভাপতি ও সম্পাদক মন্ডলী নির্বাচিত করা হবে। এর জন্য সদস্যদের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাঁদা পরিশোধ করতে বলা হয় এক মাস আগে থেকে।
এ বিষয়ে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা মোরাদ আলী জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো জটিলতা নেই। চেম্বার অব কমার্স এখন প্রস্তুত। মামলা ও প্রশাসনিক জটিলতা কেটেছে। সদস্য চাঁদা নেয়ার তারিখ শেষ হলেই ভোটার তালিকা হাল নাগাদ করা হবে। এ নির্বাচনে ৩টি প্যানেল লড়াইয়ের মাঠে নামতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
১৯৭৩ সাল থেকে চেম্বার অব কমার্সে সদস্য সংখ্যা ১০ হাজার ৮শ’। মাথাপ্রতি চাঁদা কমপক্ষে ৩শ’৫০ থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বকেয়া আছে। সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বরই চাঁদা দেয়ার শেষ সময়। কিন্তু রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাঁদা দিয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬শ’৭৭ জন। যে কারণে বাকি ৮ হাজারের বেশি সদস্য ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন।
নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের আহবায়ক ও যশোর সিনিয়র সহকারী কমিশনার আনোয়াার হোসেন জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন বোর্ড প্রয়োজনবোধে তফসিল সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনসহ পূণবিজ্ঞপ্তি প্রদান করতে পারবে। নির্বাচনের তারিখের পূর্ববর্তী ১২০ দিনের মধ্যে অর্থ্যাৎ যারা গত ২ আগস্ট ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত সদস্য হয়েছেন এবং ২০২৪- ২০২৫ অর্থবছরের প্রাপ্য চাঁদা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করেননি এমন কোনো সদস্য নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।