ফরিদপুরের মধুখালীতে প্রতিবন্ধী এক অসহায় কিশোরীকে প্রেমের সর্ম্পকের ফাঁদে ফেলে তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তোলেন ওই এলাকার এক যুবক। বর্তমানে ওই তরুনী ৫ মাসের অন্তঃস্বত্তা। তরুণীটি অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে ওই যুবকের পরিবারের কাছে বিষয়টি ওই কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা জানালেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি যুবকের পরিবার।
উপায়ন্তর না পেয়ে গত ৪ জুন ভুক্তভোগী কিশোরীর পিতা বাদী হয়ে ওই যুবকের নামে মধুখালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে মামলা দায়েরের ৫দিন অতিবাহিত হলেও ওই যুবককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে ওই প্রতিবন্ধী কিশোরীর (১৪) সঙ্গে একই গ্রামের হারান শেখের ছেলে হৃদয় শেখ (২২) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীর সাথে শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তোলে হৃদয়। একপর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়ে। এরপর হৃদয় ও তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানালে তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
এরই মধ্যে সময় চলে যায় ৫মাস। ওই কিশোরী বর্তমানে ৫ মাসের অন্তঃস্বত্তা। প্রতিবন্ধী ওই কিশোরী বিষয়টি হৃদয় ও তার পরিবারকে জানালে তারা কোনো কথা শোনেনি। বাধ্য হয়ে ওই কিশোরী এক পর্যায়ে হৃদয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠলে কিশোরীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় হৃদয় ও তার পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয়ভাবে হৃদয়ের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় ওই কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওই কিশোরীর পরিবার।
মধুখালী সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীতে বাড়ি ওই প্রতিবন্ধী কিশোরীর। প্রায় ৭ বছর আগে হঠাৎ পড়ে গিয়ে ওই কিশোরীর শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়। কোনোরকমে চলাফেরা করতে পারেন তিনি। এছাড়া কথাও তেমন বলতে পারেন না।
ভুক্তভোগী ওই প্রতিবন্ধী কিশোরী বলেন, হৃদয় আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নানান স্বপ্ন দেখাতো। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সাথে শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে আমি অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে হৃদয় আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি হৃদয়ের দৃষ্ঠান্তমূলক বিচার চাই।
ওই প্রতিবন্ধী কিশোরীর পিতা অভিযোগ করে বলেন, আমার প্রতিবন্ধী মেয়েটার জীবন শেষ করে দিয়েছে হৃদয়। আমরা গরীব বলে কোন বিচার পাবো না। আমার মেয়ে এখন ৫ মাসের অন্তঃস্বত্তা, সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না আমরা। হৃদয়রা প্রভাবশালী হওয়ায় বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে আমাদের।
এদিকে বিষয়টি জানার পর ওই কিশোরীর সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে যান মহিলা পরিষদ মধুখালী সাংগঠনিক জেলা শাখার সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য সুরাইয়া সালাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ আক্তার মিনা সহ মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। ওই কিশোরীর সাথে কথা বলে তাকে সব ধরনের সহায়তার আশ^াস দিয়েছেন মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
মহিলা পরিষদের মধুখালী সাংগঠনিক জেলা শাখার সভাপতি সুরাইয়া সালাম বলেন, আমরা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি। ওই কিশোরীকে আইনী সহ সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি আরো বলেন, হৃদয়কে গ্রেফতারে থানার ওসির সাথে কথা হয়েছে, তিনি দ্রুতই হৃদয়কে গ্রেফতার করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে মামলার পর থেকেই হৃদয় শেখ পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে হৃদয় শেখের বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যরা এবিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই কিশোরীর পিতা হৃদয় শেখ কে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। হৃদয় শেখকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
প্রিন্ট