স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বহিঃবিভাগের প্রাথমিক চিকিৎসার ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে। ২০২২- ২৩ অর্থ বছরে সরকারিভাবে অডিট আপত্তি দিলেও টনক নড়েনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বরং অতিরিক্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যাংকে অ্যাকাউন্টে জমা রাখছেন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের কথিত বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে ব্যয় দেখিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকা বিক্রি করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৮৫ টাকা, মার্চ মাসে ২ লাখ ২২ হাজার ৬২০ টাকা, এপ্রিল মাসে ১ লাখ ৭১ হাজার ১৫৫ টাকা, মে মাসে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা, জুন মাসে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৬৫ টাকা, জুলাই মাসে ২ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা, আগস্ট মাসে ২ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ২ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৫ টাকা, অক্টোবর মাসে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৮০ টাকা, নভেম্বর মাসে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৫০ টাকা, ডিসেম্বর মাসে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৩০ টাকা।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ২ লাখ ৩ হাজার ৫৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৫ টাকা, মার্চ মাসে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৫০ টাকা, এপ্রিল মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ১৫ টাকা, মে মাসে ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৮০ টাকা, জুন মাসে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬০ টাকা, জুলাই মাসে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৫৫ টাকা, আগস্ট মাসে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮১০ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ২ লাখ ৩১ হাজার ১০৫ টাকা, অক্টোবর মাসে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা, নভেম্বর মাসে ২ লাখ ২৮ হাজার ২৪০ টাকা, ডিসেম্বর মাসে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮০৫ টাকা।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৮১৫ টাকা, মার্চ মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৫ টাকা, এপ্রিল মাসে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯১৫ টাকা, মে মাসে ২ লাখ ৩২ হাজার টাকা, জুন মাসে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৫ টাকা, জুলাই মাসে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৫ টাকা, আগস্ট মাসে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৫ টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এসব টাকা হাসপাতালের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।
সূত্র জানায়, হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ আখতারুজ্জামান ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্যত্র বদলী হন। তখনকার সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা ছিলো ৩ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৬ টাকা। এরপর ৯ মার্চ ডাক্তার হারুন অর রশিদ নতুন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি উদ্বৃত্ত অর্থের হিসাব নিকাশ বুঝে নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে প্রতি মাসে ৮ জন স্বেচ্ছাসেবীকে ৩১ হাজার টাকা বেতন প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ল্যাব সহকারী রফিকুল ইসলামকে ৫ হাজার টাকা, কম্পিউটার অপারেটর কামাল হোসেনকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, ল্যাব সহকারী খাদিজা খাতুনকে ৪ হাজার টাকা, ল্যাব সহকারী শিহাব হোসেনকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, ল্যাব সহকারী ওয়াইজ উদ্দিনকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে দায়িত্বরত রোকনকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা, সিদ্দিককে ৫ হাজার টাকা ও সাথীকে ৭ হাজার টাকা।
এছাড়া এই টাকা দিয়ে রিএজেন্ট, স্টেশনারী মালামাল, কম্পিউটার মেরামত, রিপোটিং প্যাডসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মচারী জানান, সরকারিভাবে রিএজেন্ট, স্টেশনারীসহ নানা ধরণের মালামাল বরাদ্দ রয়েছে। তারপরও কেন বাড়তি দামে টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে এসব মালামাল কিনতে হবে এটা বোধগম্য নয়।
তিনি আরো জানান, প্যাথলজি বিভাগে সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ল্যাব সহকারী রয়েছে। অথচ স্বেচ্ছাসেবকের নামে ৪ জন ল্যাব সহকারী রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে আসার পরও তাদের টিকিট বিক্রির টাকায় বেতন দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একজন জানান, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত ৫ টাকায় টিকিট বিক্রির বিপুল অর্থ নয়ছয়ভাবে বিভিন্ন কাজে খরচ করা হচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বহির্বিভাগের টিকিট ৫ টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু তাদের কাছ থেকে ১০ টাকা মূল্য রাখা হচ্ছে। রোগীরা প্রশ্ন করলে টিকিট বিক্রিতে দায়িত্বরতরা সন্তোষজনক উত্তর দেন ন।
এই বিষয়ে হাসপাতালের প্রধান করণিক রেজওয়ান আহমেদ জানান, টিকিটের উদ্বৃত্ত টাকা প্রতি মাসে ভারপ্রাপ্ত ক্যাশিয়ার মুরাদ হোসেনের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে সোনালী ব্যাংক কালেক্টরেট শাখার যৌথ অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ছাড়া সরকারি হাসপাতালে ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকা করার কোন নিয়ম নেই। জেলা হাসপাতাল স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছিল। বিগত দিনে কয়েক লাখ টাকার অডিট আপত্তি এসেছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩ সদস্যের একটি অডিট টিম ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকায় বিক্রি নিয়ম বর্হিভূত বলে গেছেন। ফলে আবারও অডিট আপত্তি আসতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হারুন অর রশিদ আরো জানান, টিকিট বিক্রির উদ্বৃত্ত টাকা হাসপাতালের নানা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হচ্ছে। কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করা হচ্ছে তার সঠিক হিসাব আমাদের কাছে রয়েছে।