ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় শুক্রবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে মাঠে থাকা রোপা জাতের আমন, নাসিক জাতের পেঁয়াজ, মাসকলাই, বিভিন্ন জাতের ফল, বিভিন্ন জাতের সবজি ও সৌখিন চাষীদের বরই ক্ষেত তলিয়ে গেছে। অনেক পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। টানা বৃষ্টিতে নিচু এলাকায় ফসলের ক্ষেতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
অতিবৃষ্টির কারণে এসব কৃষকের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। অনেক কৃষক কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছে। ঋনের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে গেছে ঋণগ্রস্ত কৃষকরা। ক্ষেত থেকে পানি বের করে ফসল রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আল মাহামুদ আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বাঁকাইল গ্রামের বাসিন্দা। অনার্স পাশ করে ঘুরেছিলেন চাকুরীর পিছনে মেলেনি সেই কাঙ্খিত চাকুরী। চাকুরীর আশা ছেড়ে দিয়ে বাবার প্রায় ১০৬ শতাংশ জমিতে ৫০০ পিচ ভারতিয় বল সুন্দরী জাতের বরই চাঁরা, ৬০০ শত শষা গাছ ও ৩০ শতাংশ জমিতে ভেন্ডির চারা রোপন করেছেন। নিয়মিত পরিচর্জা করতেন। সর্বক্ষণ উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে রাখতেন যোগাযোগ। তাদের কথা মতো যত্ন নিতেন গাছের প্রতি। ইতোমধ্যে প্রতিটি বরই গাছের পিছনে এ প্রর্যন্ত ১২০০ টাকা খরচ হয়েছে। গাছে ফুল এসেছে ধিরে ধিরে বড় হচ্ছে মাহামুদের স্বপ্নগুলো বাস্তবে ডানা
মেলতে শুরু করেছে। রোববার সকালে নিজের ক্ষেতে গিয়ে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা তার স্বপ্নে গড়া বরই ক্ষেত। অতিবৃষ্টিতে গাছ গুলো
মাটির সাথে মিশে গেছে। অনেক গাছ ভেঙে গেছে তার স্বপ্নগুলো ফিকে হতে শুরু করেছে।
আল মাহামুদ জানান, প্রথমে জমি নির্ধারণ করেছি প্রায় ১০৬ শতাংশ। বাড়ি থেকে টাকা দিয়েছে সে টাকার বাহিরে কৃষি ব্যাংক থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে রাজশাতী জেলা থেকে প্রায় ৫০০ পিচ ভারতীয় বল সুন্দরী জাতের বরই গাছের চারা সংগ্রহ করেছি। ওই জমিতে ৬০০ টি শষার গাছ লাগিয়েছি, ইতোমধ্যে ২০৬ কেজি শষা বিক্রি করেছি, এখন গাছগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে, ৩০ শতাংশ জমিতে ভেন্ডি গাছ করেছি, কিছু ভেন্ডি বিক্রি করেছি। শুক্রবার রাত থেকে যে ভাবে বৃষ্টি হয়েছে তাতে করে আমার সমস্থ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। শতাধিক বরই গাছ ভেঙে গেছে। গাছ প্রতি আমার ১২০০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন গাছে ফুল এসেছে প্রতি গাছে প্রায় ৪০ কেজি বরই হবে বলে আশা করছিলাম। এখন সব স্বপ্নই অন্ধকারে রুপ নিয়েছে। আজকে
সোমবার সকালেও বৃষ্টি হয়েছে চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার। সর্বাত্মক চেষ্টা করছে নালা কেটে ক্ষেত থেকে পানি বের করে দেওয়ার জন্য। একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে আছি।
মাহামুদের মতো অনেক শিক্ষিত বেকারের স্বপ্ন অতিবৃষ্টিতে ফিকে হতে শুরু করেছে। বানা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে হাদী সাখাওয়াত হোসেন ওরফে কচি জানান, ১৫ একর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ করেছি। টানা বৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট হয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
পৌরসভার কুসুমদী গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা মৎস্য চাষী সমিতির সভাপতি তামিম আহম্মেদ মিলন জানান, তার লিজ নেওয়া দুটি পুকুরের মাছ অতিবৃষ্টিতে চলে গেছে। সেখানে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার জানা মতে উপজেলার চরনারানদিয়াসহ বেশ কিছু এলাকায় একাধিক পকুর অনাবৃষ্টিতে তলিয়ে মাছ চলে গেছে। এতে করে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে মৎস্য চাষীদের।
আলফাডাঙ্গা কৃষি অফিসার তুষার সাহা জানান, শুক্রবার রাত থেকে সারা দেশের মতো ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বৃষ্টি হয়েছে। এতে মাসকলাই ও বিভিন্ন জাতের সবজীর ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। বরই চাষীদের ক্ষেতে পানি প্রবেশ করে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের নালা কেটে পানি বের করে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সোমবার দুপুরের পর থেকে আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করেছে। আশা রাখি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষেত থেকে পানি নেমে যাবে।
প্রিন্ট