রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ী গ্রামে ৯৯৫ নং খতিয়ানভুক্ত বিএস ৯৯৭ নং দাগের ২৭ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে পাটিকাবাড়ী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস সরদারের পুত্র মো. সহিদুল ইসলাম এবং একই গ্রামের মৃত প্রধান সরদারের পুত্র রইচ উদ্দিন অরফে রতন ও আক্কাস আলী সরদারের মধ্যে বিরোধ চলছে। আর বিরোধপূর্ণ জমির মালিকানা দাবীদারদের মধ্যকার এক পক্ষ মো. সহিদুল ইসলামের নিকট থেকে ১৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে বিপাকে পড়েছেন একই গ্রামের মৃত শহর আলী প্রামানিকের পুত্র কাদের প্রামানিক ও দুলাল প্রামানিক।
সরেজমিন জানা যায়, মো. সহিদুল ইসলাম ক্রয় সূত্রে উল্লেখিত জমির মালিকানা দাবি করছেন এবং মালিকানার সূত্র ধরে ওই জমি থেকে তিনি ১৩ শতাংশ জমি মৃত শহর আলী প্রামানিকের পুত্র কাদের প্রামানিক ও দুলাল প্রামানিক নিকট বিক্রিও করেছেন। ওই জমির ৮ শতাংশ কাদের প্রামানিক ও দুলাল প্রামানিককে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের জের ধরে এখন পর্যন্ত বাকি ৫ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। এসব নিয়ে উভয় পরিবার সামাজিক বিরোধ ও মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন।
অপর দিকে, বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ী গ্রামে ৯৯৫ নং খতিয়ানভুক্ত বিএস ৯৯৭ নং দাগের ২৭ শতাংশ জমির পৈত্রিক মালিকানা দাবি করেছেন একই গ্রামের মৃত প্রধান সরদারের পুত্র রইচ উদ্দিন অরফে রতন ও আক্কাস আলী সরদার।
আক্কাস আলী সরদার বলেন, পাটিকাবাড়ী মৌজার বিএস খতিয়ান ৯৯৫, বিএস ৯৯৭ নং দাগে ২৭ শতাংশ জমি তিনিসহ তার ভাই রতন আলী ও বোন আনোয়ারা বেগমের নামে বিএস রেকর্ড আছে। উল্লেখিত জমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। দাদা আকুল সরদার মারা যাওয়ার পরে পিতা প্রধান সরদার আরএস খতিয়ান মোতাবেক ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক হয়। আক্কাস আলী সরদারের পিতা মৃত প্রধান সরদার ছিল আক্কাস আলী সরদারের দাদার একমাত্র সন্তান। পরবর্তীতে প্রধান সরদারের মৃত্যুর পর আক্কাস আলী সরদার, ভাই রতন সরদার, বোন আনোয়ারা বেগম ও মনোয়ারা বেগম উক্ত সম্পত্তির মালিক হয়। ২৭ শতাংশ জমির প্রাপ্য অংশ বোন মনোয়ারা বেগমের অন্য জায়গা হতে প্রদান করা হয়। উক্ত ২৭ শতাংশ জমি আক্কাস আলী সরদার, রতন সরদার ও আনোয়ারা বেগমের নামে বিএস রেকর্ড প্রস্তুত হয়েছে এবং আছে। পূর্ব হতে জমিটি আক্কাস আলী সরদার গং মিলে ভোগ দখলে আছে।
গত ১৯/০৫/২০২৩ তরিখে আনুমানিক ১০টার দিকে সহিদুল ইসলাম তার নিজ নামে তৈরিকৃত বিএস ৯৯৫ নং খতিয়ানের ৯৯৭ নং দাগের ২৭ শতাংশ সম্পত্তির মধ্যে ৮ শতাংশ সম্পত্তি কাদের প্রামানিক ও দুলাল প্রামানিকের নিকট বিক্রি করেছেন মর্মে জানান। বাকি ১৯ শতাংশ সম্পত্তি সহিদুল ইসলাম দাবি করলে কাদের প্রামানিক ও দুলাল প্রামানিকের নিকট থাকা দলিল লোকদ্বারা পড়াইয়া আক্কাস সরদার গং নিশ্চিত হন সহিদুল ইসলাম তাদের নামীয় রেকর্ডীয় জমি প্রতারণা করে ৫১৩৫ নং দলিল সৃজন করেছেন।
প্রতিকারে সহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আক্কাস আলী সরদারের ভাই রতন সরদার বাদি হয়ে রাজবাড়ীর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর মামলা (নং ৪১১/২৩, ধারা-৪২০, ৪৬৩/ ৪৬৮/ ৪৭১ পেনাল কোড) দায়ের করে। মামলার তদন্তে সিআইডি রাজবাড়ীর উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান ০৪/০৬/২০২৪ তারিখে প্রদত্ত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মামলাটির সার্বিক তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ, জেলা রেকর্ড রুম হতে সংগৃহীত বিএস খতিয়ান, পাংশা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হতে বিতর্কিত জমির দলিল সংক্রান্তে কাগজ পত্রাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বিএস ৯৯৫ নং খতিয়ানের ২৭ শতাংশ সম্পত্তি বিবাদী সহিদুল ইসলামের নামে কোন বিএস রেকর্ড প্রস্তুত হয় নাই বা কোন নামজারী ও জমাখারিজ প্রস্তুত হয় নাই। বিবাদী সহিদুল ইসলাম বিএস ৯৯৫ নং খতিয়ানটি জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে বিবাদী সহিদুল ইসলামের নাম যুক্ত করে বিএস ৯৯৫ নং নতুন খতিয়ান প্রস্তুত করে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেওয়ায় বিবাদী সহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারার অপরাধ প্রাথমিক ভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
এদিকে, সহিদুল ইসলাম জানান, আরএস রেকর্ডীয় প্রজা গোপাল মন্ডল অরফে গফুর মন্ডল শরীকগণের সহিত নালিশী খতিয়ানের অন্যান্য দাগের আপোষ ছাহাম সূত্রে আরএস ৭১৫ নং দাগের সম্পত্তিতে ভোগ দখলে থাকাবস্থায় এসএ জরিপ চলাকালীন ১৭/০৪/৬২ তারিখে ১৭৩০ নং কবলা দলিল মূলে আরএস ৭১৫ নং দাগের ২৭ শতাংশ সম্পত্তিসহ অন্যান্য দাগ খতিয়ানের মোট ৪৪১ শতাংশ সম্পত্তি মো. কেছমত আলী প্রামানিক, মো. এছমাইল প্রামানিক, মো. এয়াকুব আলী প্রামানিকের নিকট বিক্রি করে। কবলা গ্রহীতাগণ ২১৩/২ নং খতিয়ানে নিজেদের নামে নাম পত্তন করেন।
১৭/০৪/৬২ তারিখের কবলা গ্রহীতা মো. এয়াকুব আলী প্রামানিক সম্পত্তিতে ভোগ দখলে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার এক পুত্র মো. ইয়াছিন আলী, তিন কন্যা মোছা. পরিজান নেছা, মোছা. রাহেলা খাতুন ও মোছা. জহুরা খাতুন এবং স্ত্রী মোছা. ছামিরণ নেছা ওয়ারেশ হন। মো. এয়াকুব আলী প্রামানিকের ওয়ারেশগণ ভোগদখলে থাকাবস্থায় মোছা. পরিজান নেছা, মোছা. রাহেলা খাতুন, মোছা. জহুরা খাতুন এবং নাবালক মো. ইয়াছিন আলীর পক্ষে গার্জিয়ান মাতা স্বয়ং মোছা. ছামিরন নেছা গত ৫/১/৯১ তারিখের ১২৩ নং খোষ কবলা দলিল মূলে আর এস ৭১৫ নং দাগ যাহা বিএস ৯৯৭ নং দাগের ২৭ শতাংশ সম্পত্তি সহিদুল ইসলামের নিকট বিক্রি করে। ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে তিনি রেকর্ড সংশোধনের জন্য রাজবাড়ীর বিজ্ঞ পাংশা সহকারী জজ আদালতে ১৪১/২৩ নং মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় রতন আলী ও আক্কাস আলী সরদারসহ মোট ৩৪ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে পরস্পর বিরোধী মতামত পাওয়া গেছে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব জোরালো হচ্ছে। জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ যে কোন মুহুর্তে সংঘাতে রূপ নিতে পারে।