রাজশাহীর বাঘায় বাজুবাঘা ইউনিয়নের অর্ন্তগত জোতরাঘব বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি বিএম কলেজের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম রবির বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে,অর্থ বাণিজ্যের মাধমে নিয়োগ, একই ব্যক্তিকে একাধিকবার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করাসহ শিক্ষাক-শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের স্থায়ী বহিস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার(২৯ আগষ্ট’২৪) সকালে প্রতিষ্ঠান চলাকালিন সময়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আফম হাসান ওই প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তকালে প্রথিষ্ঠানের ভেতরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তোপের মুখে পড়েন অভিযোগ তদন্তকারি অফিসার আফম হাসান। পরে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায়, শিক্ষক ও স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের বুঝায়ে পরিবেশ শান্ত করেন।
জানা যায়, খানপুর জে.পি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শ্রী তপন কুমার সরকারকে নিয়মবহির্ভূত সভাপতি বানায়ে ২০১৩ সালের সেপেপ্টম্বর মাসের ৩০ তারিখে প্রধান শিক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন রবিউল ইসলাম। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে, বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর সন্ত্রাসী বাহিনীর সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা ভেঙে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেন রবিউল ইসলাম। তার পদ ধরে রাখতে নিয়মমাফিক ম্যানেজিং কমিটি গঠনের তফসীল ঘোষনা পূর্বক নির্বাচন ছাড়াই গোপনে বাঘা পৗর মেয়র আক্কাছ আলীকে একাধিকবার সভাপতি করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সালের এ পর্যন্ত সভাপতি রয়েছেন আক্কাছ আলী।
সভাপতি মেয়র আক্কাছ আলীর যোগসাজসে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বিএম কলেজের ৩ জন প্রভাষক, স্কুল শাখায় ৩ জন কর্মাচরী ও ১ জন সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং এসএসসি ভোকেশনাল শাখায় ১ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য করে আত্মসাৎ করেছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি বিধিমালা। এছাড়াও পরীক্ষার ফ্রি/ফরমফিলাপ বাবদ ছাত্র/ছাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ করা হয়েছে। কতিপয় স্বার্থনেষীদের ম্যানেজ করে ম্যানেজিং কমিটি গঠনসহ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন ও অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনা করেছেন প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম। তার এসব কার্যকলাপে লেখাপড়ার মান নষ্টসহ প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংশস্তুপে পরিনত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের হুমকি স্বরুপ বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে স্থায়ীভাবে তাঁর পদ থেকে বহিস্কারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভসহ উপজেলা নির্বাহি অফিসারের নিকট অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী অভিভাবক- বিদ্যানুরাগীরা ।
এর আগে গত রোববার (২৫ আগষ্ট) একই দাবিতে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সে সময় সেনাবাহিনীর সদস্য ও বাঘা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত ও অবরুদ্ধ শিক্ষককে মুক্ত করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্বারকলিপি প্রদান করেন। বৃহস্পতিবার অভিযোগ তদন্ত করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার (২৯ আগষ্ট) প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানা যায়,গত রোববার থেকে ছুটিতে আছেন প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির বিএম কলেজের শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন,২০১৮ সালের সংশোধনী নীতিমালার ২০ দশমিক ২ এর ধারা মতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্যে করে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিধান থাকলেও সেটি করেননি প্রধান শিক্ষক। বিক্ষোভকারি শিক্ষার্থী মোঃ মিজান ও মোঃ রাকিব বলেন,তারা এমন দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের স্থায়ী বহিস্কার চান।
সেই সময়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ জানান,অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক তাকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দায়িত্ব পালন করাকালিন সময়ে পেশী শক্তি ব্যবহার করে তার অনুপস্থিতে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা ভেঙে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেন রবিউল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে আইনগতভাবে কার্যক্রম চালিয়েও সফলতা আসেনি। তারা প্রধান শিক্ষকরে সকল অপকর্মের বিচার দাবি করে বলেন,এখন সংষ্কার চলছে। কথা বলার সুযোগ হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের দাবি,বৈধপন্থায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি তার। অভিযোগ তদন্তকারি অফিসার আফম হাসান বলেন,প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে তার অনিয়ম পাওয়া গেছে। আরো অনিয়মের বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী-অভিভাবদের দাবি সংক্রান্ত স্বারকলিপি দিয়েছে। বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট