ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ফুলবাড়ী উপজেলায় মতবিনিময় সভা Logo তানোরে যাতায়াতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ Logo মাগুরাতে এসএমসি’র পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo রূপগঞ্জে সাংবাদিকের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন Logo অর্থনৈতিক শুমারি উপলক্ষে স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত Logo প্রত্যন্ত গ্রামে নারী ফুটবল প্রীতি ম্যাচ উপভোগ করলেন হাজারো দর্শক Logo বাঘায় উপজেলা শুমারি স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত Logo কুষ্টিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা Logo ফরিদপুরে দুই দিনব্যাপী তথ্য মেলা অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

যশোরের শান্তিশৃংখলা রক্ষায় একযোগে কাজ করবে প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল

সীমাহীন নৈরাজ্য, লুটপাট, ভাংচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে যশোরে। গত সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর যশোরের হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিজয় মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন। পুড়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ২৩ জন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাংসদ, জনপ্রতিনিধিদের কার্যালয়, বাড়িতে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের বাসাবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর লুটের ঘটনাও রয়েছে। জেলাজুড়ে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে। গত দুই দিন ধরে চলা এই ধ্বংসযজ্ঞ ও নৈরাজ্য থামাতে কোথাও কাউকে দেখা যায়নি। কারফিউ উঠিয়ে দিলেও আতঙ্কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে ভয় পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব দেখে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন জেলাবাসী।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জেলার সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে বিশেষ মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোট বাদে সর্বদলীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। সভায় বক্তারা মত দিয়েছেন, জেলার শান্তিশৃংখলা রক্ষায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে কাজ করবে। পুলিশ তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করবে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে সহযোগিতা করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং করা হবে। মসজিদে মাইকেও ঘোষণা দেয়া হবে সহিংসতা পরিহার করার জন্য। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও আইনজীবী।
মতবিনিময় সভায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আমরা গত ১৭ বছর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলেছি। স্বাধীন গণমাধ্যম, বাক স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকারের কথা বলেছি। আইনের শাসন, মানবাধিকারের কথা বলেছি। আমরাই বলেছিলাম। অন্য কেউ বলতে সাহস পাননি। সেটা পরিণতি পেয়েছে ছাত্রদের আন্দোলন এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। আপনারা মনে করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন তো জেলে, এটা বিএনপির কথা। ভাবেননি কথাটি আমার ছিল না। কথাটি দেশবাসীর ছিল। কথাটি বুঝতে ১৭ বছর সময় গেছে বলেই এতে প্রাণ গেছে, রক্ত ঝরেছে। অপকর্ম করলে কি পরিণতি হয়, সেই উপলব্ধি যদি না করতে পারি, তাহলে আমাদের পরিণতি আরও করুণ হবে। সেই বুঝে যদি শিক্ষা গ্রহণ করি, তাহলে এই পরিবর্তন অর্থবহ হবে।
হোটেল জাবিরে অগ্নিকান্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, হতাহতদের উদ্ধারে আমরা তৎপর ছিলাম। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি।
বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, গত ১৭ বছরের অভিজ্ঞতায় প্রশাসনের প্রতি ইতিবাচক মন্তব্য করার কোন কারণ নেই। এখন লোম বাছতে গেলে কম্বল উজাড় হয়ে যাবে, রাষ্ট্র চলবে না। এখন আমাদেরকে উদার হতে হবে। যার যত বেশি তিক্ত অভিজ্ঞতা, তাকে তত বেশি উদার হতে হবে। এটাই হলো বাস্তবতা। সরকার পতনের পর থেকে আমরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। উনারা যেখানে সমস্যার কথা বলেছেন, আমরা সহযোগিতা করেছি। আবার উনাদের কাছ থেকেও কাঙ্খিত সহযোগিতা পেয়েছি। যশোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় অন্য জেলার তুলনায় ব্যতিক্রম লক্ষ্য করেছি। তারা ব্যতিক্রম ছিলেন বলেই তো যশোর শান্ত ছিল। ছাত্ররা সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর ১৪ বীর অধিনায়ক ও যশোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোস্তফা বলেন, পুলিশ আজ থেকে তাদের কাজ শুরু করবে। এজন্য সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রয়োজন। পুলিশ কাজ শুরু করলে আইনশৃংখরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আইনশৃংখলা রক্ষায় ছাত্র সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রত্যেক উপজেলায় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। কমিউনিটি পুলিশিং টহল দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সহিংসতা নিয়ে যেন গুজব না ছড়ায়, এদিকে সজাগ থাকতে হবে। কেশবপুরে সেনা ক্যাম্প করা হয়েছে। মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার দায়িত্ব পালন করবে এই ক্যাম্প। নওয়াপাড়ার ক্যাম্প অভয়নগর উপজেলার দায়িত্ব পালন করবে। আর সেনানিবাসের ক্যাম্প থেকে চৌগাছা, ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার আইনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করা হবে। কোন সহিংসতার ঘটনা কিংবা আশঙ্কা থাকলে ক্যাম্প কিংবা কন্ট্রোল সেলে অবহিত করতে হবে।
পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আমাদের কৃতকর্মের ফল আমরা পেয়েছি। সমাজে আমাদের প্রতি আস্থা নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো পুলিশ ছাড়া সমাজের শৃংখলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, সেখানে পুলিশ জনগনের আস্থা অর্জন করবে। পুলিশের কোন সদস্য যদি অতি উৎসাহী হয়ে কোন অপরাধ করে থাকে, তালিকা দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, পুলিশের সকল সদস্যই খারাপ নয়। সবাই নিজেকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার হননি। কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করলে শাস্তি পাবেন। আমরা ন্যায় ভিত্তিক পুলিশ পরিচালনা করতে চাই। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবারাউল হাছান মজুমদার বলেন, জেলার শান্তি শৃংখলা রক্ষায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হবে। মসজিদের মাইকে সহিংসতা এড়াতে মানুষকে সচেতন করতে বলা হবে। একই সাথে শুক্রবার মসজিদে মসজিদে সচেতনতার বার্তা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন শান্তিশৃংখলা রক্ষায় করণীয় বিষয়ে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রশাসন ও সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকমীদের অংশগ্রহণে সম্প্রীতি শোভাযাত্রা বের করা হবে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও আইনজীবী মোহাম্মদ ইসহক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্ত্তজা ছোট, জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোরের সম্পাদক তসলিম উর রহমান, গণতান্ত্রিক বাম জোট যশোরের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু, জেলা জামায়াত ইসলামীর শূরা সদস্য অ্যাড. গাজী এনামুল হক, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সিপিবি নেতা মাহাবুবুর রহমান মজনু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) যশোরের সিনিয়র সহ সভাপতি ফকির শওকত, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মুফতি ফিরোজ শাহ্, হেফাজত ইসলামীর নেতা মোঃ নাসিরুল্লাহ, সাংবাদিক শিকদার খালিদ, সরোয়ার হোসেন, জুয়েল মৃধা, মনিরুল ইসলাম, বিএম ফারুক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান, মারুফ হোসেন, ফাহিম আল ফাত্তাহ প্রমুখ।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

error: Content is protected !!

যশোরের শান্তিশৃংখলা রক্ষায় একযোগে কাজ করবে প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল

আপডেট টাইম : ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪
কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি :
সীমাহীন নৈরাজ্য, লুটপাট, ভাংচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে যশোরে। গত সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর যশোরের হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিজয় মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন। পুড়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ২৩ জন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাংসদ, জনপ্রতিনিধিদের কার্যালয়, বাড়িতে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের বাসাবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর লুটের ঘটনাও রয়েছে। জেলাজুড়ে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে। গত দুই দিন ধরে চলা এই ধ্বংসযজ্ঞ ও নৈরাজ্য থামাতে কোথাও কাউকে দেখা যায়নি। কারফিউ উঠিয়ে দিলেও আতঙ্কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে ভয় পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব দেখে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন জেলাবাসী।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জেলার সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে বিশেষ মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোট বাদে সর্বদলীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। সভায় বক্তারা মত দিয়েছেন, জেলার শান্তিশৃংখলা রক্ষায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে কাজ করবে। পুলিশ তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করবে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে সহযোগিতা করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং করা হবে। মসজিদে মাইকেও ঘোষণা দেয়া হবে সহিংসতা পরিহার করার জন্য। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও আইনজীবী।
মতবিনিময় সভায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আমরা গত ১৭ বছর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলেছি। স্বাধীন গণমাধ্যম, বাক স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকারের কথা বলেছি। আইনের শাসন, মানবাধিকারের কথা বলেছি। আমরাই বলেছিলাম। অন্য কেউ বলতে সাহস পাননি। সেটা পরিণতি পেয়েছে ছাত্রদের আন্দোলন এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। আপনারা মনে করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন তো জেলে, এটা বিএনপির কথা। ভাবেননি কথাটি আমার ছিল না। কথাটি দেশবাসীর ছিল। কথাটি বুঝতে ১৭ বছর সময় গেছে বলেই এতে প্রাণ গেছে, রক্ত ঝরেছে। অপকর্ম করলে কি পরিণতি হয়, সেই উপলব্ধি যদি না করতে পারি, তাহলে আমাদের পরিণতি আরও করুণ হবে। সেই বুঝে যদি শিক্ষা গ্রহণ করি, তাহলে এই পরিবর্তন অর্থবহ হবে।
হোটেল জাবিরে অগ্নিকান্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, হতাহতদের উদ্ধারে আমরা তৎপর ছিলাম। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি।
বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, গত ১৭ বছরের অভিজ্ঞতায় প্রশাসনের প্রতি ইতিবাচক মন্তব্য করার কোন কারণ নেই। এখন লোম বাছতে গেলে কম্বল উজাড় হয়ে যাবে, রাষ্ট্র চলবে না। এখন আমাদেরকে উদার হতে হবে। যার যত বেশি তিক্ত অভিজ্ঞতা, তাকে তত বেশি উদার হতে হবে। এটাই হলো বাস্তবতা। সরকার পতনের পর থেকে আমরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। উনারা যেখানে সমস্যার কথা বলেছেন, আমরা সহযোগিতা করেছি। আবার উনাদের কাছ থেকেও কাঙ্খিত সহযোগিতা পেয়েছি। যশোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় অন্য জেলার তুলনায় ব্যতিক্রম লক্ষ্য করেছি। তারা ব্যতিক্রম ছিলেন বলেই তো যশোর শান্ত ছিল। ছাত্ররা সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর ১৪ বীর অধিনায়ক ও যশোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোস্তফা বলেন, পুলিশ আজ থেকে তাদের কাজ শুরু করবে। এজন্য সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রয়োজন। পুলিশ কাজ শুরু করলে আইনশৃংখরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আইনশৃংখলা রক্ষায় ছাত্র সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রত্যেক উপজেলায় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। কমিউনিটি পুলিশিং টহল দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সহিংসতা নিয়ে যেন গুজব না ছড়ায়, এদিকে সজাগ থাকতে হবে। কেশবপুরে সেনা ক্যাম্প করা হয়েছে। মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার দায়িত্ব পালন করবে এই ক্যাম্প। নওয়াপাড়ার ক্যাম্প অভয়নগর উপজেলার দায়িত্ব পালন করবে। আর সেনানিবাসের ক্যাম্প থেকে চৌগাছা, ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার আইনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করা হবে। কোন সহিংসতার ঘটনা কিংবা আশঙ্কা থাকলে ক্যাম্প কিংবা কন্ট্রোল সেলে অবহিত করতে হবে।
পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আমাদের কৃতকর্মের ফল আমরা পেয়েছি। সমাজে আমাদের প্রতি আস্থা নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো পুলিশ ছাড়া সমাজের শৃংখলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, সেখানে পুলিশ জনগনের আস্থা অর্জন করবে। পুলিশের কোন সদস্য যদি অতি উৎসাহী হয়ে কোন অপরাধ করে থাকে, তালিকা দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, পুলিশের সকল সদস্যই খারাপ নয়। সবাই নিজেকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার হননি। কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করলে শাস্তি পাবেন। আমরা ন্যায় ভিত্তিক পুলিশ পরিচালনা করতে চাই। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবারাউল হাছান মজুমদার বলেন, জেলার শান্তি শৃংখলা রক্ষায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হবে। মসজিদের মাইকে সহিংসতা এড়াতে মানুষকে সচেতন করতে বলা হবে। একই সাথে শুক্রবার মসজিদে মসজিদে সচেতনতার বার্তা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন শান্তিশৃংখলা রক্ষায় করণীয় বিষয়ে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রশাসন ও সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকমীদের অংশগ্রহণে সম্প্রীতি শোভাযাত্রা বের করা হবে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও আইনজীবী মোহাম্মদ ইসহক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্ত্তজা ছোট, জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোরের সম্পাদক তসলিম উর রহমান, গণতান্ত্রিক বাম জোট যশোরের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু, জেলা জামায়াত ইসলামীর শূরা সদস্য অ্যাড. গাজী এনামুল হক, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সিপিবি নেতা মাহাবুবুর রহমান মজনু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) যশোরের সিনিয়র সহ সভাপতি ফকির শওকত, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মুফতি ফিরোজ শাহ্, হেফাজত ইসলামীর নেতা মোঃ নাসিরুল্লাহ, সাংবাদিক শিকদার খালিদ, সরোয়ার হোসেন, জুয়েল মৃধা, মনিরুল ইসলাম, বিএম ফারুক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান, মারুফ হোসেন, ফাহিম আল ফাত্তাহ প্রমুখ।

প্রিন্ট