ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, আগুন, ৪ সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ

চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। এ সময় আওয়ামী লীগের অফিস, ট্রাফিক বক্স ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। সে সময় সংবাদ সংগ্রহকালে চার সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হন।

 

গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকরা হলেন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস, একাত্তর টিভির শাহীন আলী ও তাদের দুই ক্যামেরাপারসন।

 

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। আজ সন্ধ্যার একটু আগে শহরের পিটিআই রোডের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে।

 

ভাঙচুরের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে গেলে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে। এসময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আন্দোলনকারীরা হানিফের আলিশান বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এসময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই নেতার বাড়ি এবং টং ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়।

 

রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১টার সময় ও পরে বিকেল ৫টার সময় কুষ্টিয়ার শহরের প্রাণকেন্দ্র মজমপুরে ও শহরের এন. এস রোডে এ ঘটনা ঘটে।এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

 

এর আগে আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর করে এবং সড়কের বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের ধাওয়া ও রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন অলিগলিতে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

 

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ঘোষণা অনুযায়ী কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারীরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর থেকে শুরু হয়ে চৌড়হাস মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালিত হয়। সেখান থেকে তারা আবারও মজমপুরে আসেন। এরপর তারা এসএস রোডে যান। তাদের পাশাপাশি বিক্ষোভে অনেক অভিভাবক, সাধারণ মানুষ, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের যোগ দিতে দেখা গেছে। এসময় মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে কুষ্টিয়া শহর। বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নামে।

একদফা দাবির অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এর আগে আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর করেন এবং সড়কের বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশের ধাওয়া, রাবার বুলেট, ছররা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন অলিগলিতে আশ্রয় নেন।

 

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস বলেন, আমি ও আমার ক্যামেরাপারসনসহ কয়েকজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছি। ক্যামেরা পারসনের শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় ছররা গুলি ঢুকে আছে। আমরা স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছি।

 

বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। এরপর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের সাদ্দাম বাজার হয়ে চৌড়হাস মোড়ে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান নিতে দেখা যায়।

 

এ সময় আন্দোলনকারীরা স্লোগান দেন, আমার ভাই কবরে, বিচার চাই বিচার চাই, ভুয়া ভুয়া, পুলিশ ভুয়া, খুনি খুনি, পুলিশ খুনি, সরকারের পদত্যাগ চাই, আমার ভাইদের হত্যার বিচার চাই, দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিবো রক্ত, সরকারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে।

 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

 

আজ রবিবার সকাল থেকেই কুষ্টিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেককে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে দেখা গেছে।

 

 

এ ছাড়া সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে যায়নি। পথে গণপরিবহন ও মানুষের উপস্থিতি অনেক কম ছিলো।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, আগুন, ৪ সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ

আপডেট টাইম : ১১:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
ইসমাইল হোসেন বাবু, ষ্টাফ রিপোর্টার :

চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। এ সময় আওয়ামী লীগের অফিস, ট্রাফিক বক্স ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। সে সময় সংবাদ সংগ্রহকালে চার সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হন।

 

গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকরা হলেন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস, একাত্তর টিভির শাহীন আলী ও তাদের দুই ক্যামেরাপারসন।

 

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। আজ সন্ধ্যার একটু আগে শহরের পিটিআই রোডের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে।

 

ভাঙচুরের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে গেলে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে। এসময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আন্দোলনকারীরা হানিফের আলিশান বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এসময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই নেতার বাড়ি এবং টং ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়।

 

রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১টার সময় ও পরে বিকেল ৫টার সময় কুষ্টিয়ার শহরের প্রাণকেন্দ্র মজমপুরে ও শহরের এন. এস রোডে এ ঘটনা ঘটে।এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

 

এর আগে আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর করে এবং সড়কের বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের ধাওয়া ও রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন অলিগলিতে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

 

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ঘোষণা অনুযায়ী কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারীরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর থেকে শুরু হয়ে চৌড়হাস মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালিত হয়। সেখান থেকে তারা আবারও মজমপুরে আসেন। এরপর তারা এসএস রোডে যান। তাদের পাশাপাশি বিক্ষোভে অনেক অভিভাবক, সাধারণ মানুষ, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের যোগ দিতে দেখা গেছে। এসময় মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে কুষ্টিয়া শহর। বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নামে।

একদফা দাবির অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এর আগে আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর করেন এবং সড়কের বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশের ধাওয়া, রাবার বুলেট, ছররা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন অলিগলিতে আশ্রয় নেন।

 

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস বলেন, আমি ও আমার ক্যামেরাপারসনসহ কয়েকজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছি। ক্যামেরা পারসনের শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় ছররা গুলি ঢুকে আছে। আমরা স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছি।

 

বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। এরপর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের সাদ্দাম বাজার হয়ে চৌড়হাস মোড়ে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান নিতে দেখা যায়।

 

এ সময় আন্দোলনকারীরা স্লোগান দেন, আমার ভাই কবরে, বিচার চাই বিচার চাই, ভুয়া ভুয়া, পুলিশ ভুয়া, খুনি খুনি, পুলিশ খুনি, সরকারের পদত্যাগ চাই, আমার ভাইদের হত্যার বিচার চাই, দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিবো রক্ত, সরকারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে।

 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

 

আজ রবিবার সকাল থেকেই কুষ্টিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেককে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে দেখা গেছে।

 

 

এ ছাড়া সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে যায়নি। পথে গণপরিবহন ও মানুষের উপস্থিতি অনেক কম ছিলো।


প্রিন্ট