ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ডাবলিনে গ্রেটার মৌলভীবাজার অ্যাসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের বার্ষিক সভা Logo নোয়াখালী চাটখিলে চাঁদা না পেয়ে প্রবাসীকে হত্যার হুমকি Logo খোকসায় ১ম হওয়া শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ও সকল এ+ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা Logo সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী’র ৪ শত কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক Logo বেনাপোলে যুবদলের যৌথ কর্মীসভা Logo পাংশা সরকারী কলেজে জুলাই শহিদ দিবস পালিত Logo যশোরের কেশবপুরে সমাজসেবক বদরুন্নাহার রেশমা চিরনিদ্রায় শায়িত Logo ‘জুলাই শহীদ দিবস–২৫’ উপলক্ষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণ সভা Logo কৃষি বিজ্ঞানী ড. আলী আফজাল ফুটবল টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে মহম্মদপুর Logo কুষ্টিয়া চাঁদা তোলা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

উপসম্পাদকীয়

পরিপ্রেক্ষিতঃ নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্ন ফাঁস

নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে স্কুলে স্কুলে চলছে ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন। যা আগে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা হিসেবে প্রচলিত ছিলো। সারাদেশে এবারই প্রথম ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্বে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তৈরিকৃত প্রশ্নপত্র প্রধান শিক্ষকদের নিকট পাঠানো হয় পরীক্ষার আগের দিন বিকেলে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রশ্ন প্রধান শিক্ষকদের নিকট পাঠানোর পরপরই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। শুধু প্রশ্ন ফাঁসই নয়, উত্তরও মিলছে ইউটিউবে। এমন অভিযোগও উঠেছে।

 

‘ষান্মাসিক মূল্যায়নের উল্টোপিঠ’ শিরোনামে শিক্ষা বিষয়ক গবেষক মাছুম বিল্লাহ তার একটি লেখায় লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা যদি এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন পান, তাহলে তো পড়ার টেবিলে বসবেন না, শ্রেণিকক্ষের কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করবে না-এমন মন্তব্য অনেকেই করেছেন এবং আমরাও বুঝি। যদিও এনসিটিবি থেকে বলা হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও বড় কোনো সমস্যা নেই। প্রশ্ন যেভাবে হয়েছে তাতে বিষয়টি ঠিক কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন যারা আগে পেয়েছেন এবং যারা পাননি–এই দুই গ্রপের অবস্থা তো দুই রকম হবেই।’ তিনি লেখাটির এক পর্যায়ে উল্লেখ করেন, ‘গ্রুপ ওয়ার্কে সব সময়ই দেখা যায়, যারা ভালো পারফরমার তারাই পুরো বিষয়টিকে নিজেদের দখলে রাখে। অর্থাৎ অন্যান্য সহপাঠী বা সহকর্মীদের ওপর কর্তৃত্ব ফলায়। যারা একটু দুর্বল তারা কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন না। ফলে দুর্বল আরো দুর্বল হয়। কারণ, তাদের নিজেদের কিছু করতে হয় না, সহজেই ফাঁকি দেয়া যায়।’

 

ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি প্রশ্ন নিয়ে অনেকেই নানান মন্তব্য করেছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একজন স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন ‘ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স করে সিক্সে ভর্তি হতে হবে।’

 

ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজির প্রশ্নে কমিউনিটি গ্রিন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ডায়ালগ লিখতে হয়েছে। অথচ কমিউনিটি গ্রিন সম্পর্কে কোন ধারণাই বইয়ে নেই। তাহলে ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী কীভাবে এই কথোপকথন (ডায়ালগ) লিখবে। কমিউনিটি গ্রিন সম্পর্কে যে অনুচ্ছেদটি দেয়া হয়েছে তাতে ‘সাসটেইনএবল লিভিংস, কমিউনিটি গ্রিন’ এর মতো বেশ কয়েকটি জটিল শব্দ আছে, যা ষষ্ঠ শ্রেণিতে মানায় না বলেই আমার মত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন জনৈক শিক্ষক হতাশা ব্যক্ত করে মন্তব্য করেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য যে প্রশ্নপত্র করা হয়েছে তা দেখে প্রথমে আমিই হিমসিম খেয়েছি।’

 

প্লাবন ঘোষ নামের এক ইংরেজি শিক্ষক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, ‘একজন শিক্ষক হয়ে সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীর ধ্বংস দেখা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে মনে হয় কষ্টের। অসহায়ত্বের কারণে সবচেয়ে অপরাধবোধে ভুগতে হচ্ছে শিক্ষকদেরকে।’

 

বিভিন্ন বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে আমরা হতবাক। বইয়ের কিছুই যদি পরীক্ষায় না আসে তাহলে বাচ্চারা বই পড়তে চাইবে কেন? আর প্রশ্নপত্র এবং উত্তর পরীক্ষার আগের রাতেই ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে এ পরীক্ষায় আমাদের ছেলেমেয়েরা কী শিখবে?’ অভিভাবকদের অভিযোগ, ‘আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে পরদিন অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যাচ্ছে।’

 

এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়েছে।

 

অরূপ সাহা নামের এক অভিভাবক আক্ষেপ প্রকাশ করে ফেসবুকে মন্তব্য করেন, ‘এখন না পারলে বই দেখে লেখা যাবে, সহপাঠীদের সাহায্য নেয়া যাবে, শিক্ষকের সাহায্য নেয়া যাবে। আগে আমরা পরীক্ষা দেবার আগে সব মাথায় ঢুকিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতাম। আর এখনের বাচ্চারা তো জানেই, না পারলে পরীক্ষার হলে নকলের ব্যবস্থা আছে। কি শিখবে আমাদের বাচ্চারা?’

 

এদিকে বর্তমান কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষকরাও দ্বিধাদ্বন্দে। উপজেলার অনেক প্রধান শিক্ষক এবং বিষয় শিক্ষকরাও বুঝে উঠতে পারেননি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক পরীক্ষার আগের দিন প্রধান শিক্ষকের নিকট প্রেরিত প্রত্যেক বিষয়ের প্রশ্নপত্রের সাথে এক সেট শিক্ষক নির্দেশনা দেয়া থাকে। কিন্তু নির্দেশনাটি বেশি পৃষ্ঠার হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান থেকেই নির্দেশনাটি প্রিন্ট দেওয়া হচ্ছে না। আবার অনেকের নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবের কারণেও শুধুমাত্র প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করে বিদ্যালয়ের ছাত্র অনুযায়ী প্রয়োজনমত ফটোকপি করে পরীক্ষা নিলেও শিক্ষক নির্দেশনাটি প্রিন্ট দিচ্ছেন না। কিন্তু শিক্ষক নির্দেশনা ছাড়া কোনভাবেই শিক্ষার্থীর যোগ্যতা মূল্যায়ন সম্ভব নয়। অথচ নতুন এ পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদের কোন প্রশিক্ষণ দেওয়াতো হয়নিই, স্পষ্ট ধারণাও সারা দেশের শিক্ষকরা পায়নি। নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিও চূড়ান্ত করা হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। অ্যাপসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অগ্রগতির মূল্যায়নের রেকর্ড রাখার কথা থাকলেও এখনো উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই অ্যাপসের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেননি। অনেকে জানেনও না। প্রত্যেক বিষয় শিক্ষকের নিজস্ব স্মার্ট ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অগ্রগতির মূল্যায়ন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক শিক্ষকের স্মার্ট ফোনই নেই। অনেকের স্মার্ট ফোন থাকলেও চালাতে পারেন না।

 

এ পরিস্থিতিতে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। আর এভাবে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস হলে এবং ইউটিউবে উত্তর মিললে আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসানোই মুশকিল হবে।

 

বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেছেন, ‘যুগের প্রয়োজনেই কারিকুলাম আপডেট করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গেলে আমাদের এই শিক্ষাক্রমে যেতে হবে।’

এখন দেখা যাক, নতুন কারিকুলামে পড়ালেখা করে পরবর্তী প্রজন্ম বিশ্বের সাথে কতটা খাপ খাওয়াতে পারে। সময়ই তার জবাব দেবে।

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ডাবলিনে গ্রেটার মৌলভীবাজার অ্যাসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের বার্ষিক সভা

error: Content is protected !!

উপসম্পাদকীয়

পরিপ্রেক্ষিতঃ নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্ন ফাঁস

আপডেট টাইম : ০৪:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
দীপঙ্কর পোদ্দার অপু :

নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে স্কুলে স্কুলে চলছে ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন। যা আগে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা হিসেবে প্রচলিত ছিলো। সারাদেশে এবারই প্রথম ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্বে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তৈরিকৃত প্রশ্নপত্র প্রধান শিক্ষকদের নিকট পাঠানো হয় পরীক্ষার আগের দিন বিকেলে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রশ্ন প্রধান শিক্ষকদের নিকট পাঠানোর পরপরই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। শুধু প্রশ্ন ফাঁসই নয়, উত্তরও মিলছে ইউটিউবে। এমন অভিযোগও উঠেছে।

 

‘ষান্মাসিক মূল্যায়নের উল্টোপিঠ’ শিরোনামে শিক্ষা বিষয়ক গবেষক মাছুম বিল্লাহ তার একটি লেখায় লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা যদি এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন পান, তাহলে তো পড়ার টেবিলে বসবেন না, শ্রেণিকক্ষের কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করবে না-এমন মন্তব্য অনেকেই করেছেন এবং আমরাও বুঝি। যদিও এনসিটিবি থেকে বলা হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও বড় কোনো সমস্যা নেই। প্রশ্ন যেভাবে হয়েছে তাতে বিষয়টি ঠিক কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন যারা আগে পেয়েছেন এবং যারা পাননি–এই দুই গ্রপের অবস্থা তো দুই রকম হবেই।’ তিনি লেখাটির এক পর্যায়ে উল্লেখ করেন, ‘গ্রুপ ওয়ার্কে সব সময়ই দেখা যায়, যারা ভালো পারফরমার তারাই পুরো বিষয়টিকে নিজেদের দখলে রাখে। অর্থাৎ অন্যান্য সহপাঠী বা সহকর্মীদের ওপর কর্তৃত্ব ফলায়। যারা একটু দুর্বল তারা কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন না। ফলে দুর্বল আরো দুর্বল হয়। কারণ, তাদের নিজেদের কিছু করতে হয় না, সহজেই ফাঁকি দেয়া যায়।’

 

ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি প্রশ্ন নিয়ে অনেকেই নানান মন্তব্য করেছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একজন স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন ‘ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স করে সিক্সে ভর্তি হতে হবে।’

 

ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজির প্রশ্নে কমিউনিটি গ্রিন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ডায়ালগ লিখতে হয়েছে। অথচ কমিউনিটি গ্রিন সম্পর্কে কোন ধারণাই বইয়ে নেই। তাহলে ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী কীভাবে এই কথোপকথন (ডায়ালগ) লিখবে। কমিউনিটি গ্রিন সম্পর্কে যে অনুচ্ছেদটি দেয়া হয়েছে তাতে ‘সাসটেইনএবল লিভিংস, কমিউনিটি গ্রিন’ এর মতো বেশ কয়েকটি জটিল শব্দ আছে, যা ষষ্ঠ শ্রেণিতে মানায় না বলেই আমার মত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন জনৈক শিক্ষক হতাশা ব্যক্ত করে মন্তব্য করেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য যে প্রশ্নপত্র করা হয়েছে তা দেখে প্রথমে আমিই হিমসিম খেয়েছি।’

 

প্লাবন ঘোষ নামের এক ইংরেজি শিক্ষক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, ‘একজন শিক্ষক হয়ে সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীর ধ্বংস দেখা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে মনে হয় কষ্টের। অসহায়ত্বের কারণে সবচেয়ে অপরাধবোধে ভুগতে হচ্ছে শিক্ষকদেরকে।’

 

বিভিন্ন বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে আমরা হতবাক। বইয়ের কিছুই যদি পরীক্ষায় না আসে তাহলে বাচ্চারা বই পড়তে চাইবে কেন? আর প্রশ্নপত্র এবং উত্তর পরীক্ষার আগের রাতেই ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে এ পরীক্ষায় আমাদের ছেলেমেয়েরা কী শিখবে?’ অভিভাবকদের অভিযোগ, ‘আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে পরদিন অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যাচ্ছে।’

 

এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়েছে।

 

অরূপ সাহা নামের এক অভিভাবক আক্ষেপ প্রকাশ করে ফেসবুকে মন্তব্য করেন, ‘এখন না পারলে বই দেখে লেখা যাবে, সহপাঠীদের সাহায্য নেয়া যাবে, শিক্ষকের সাহায্য নেয়া যাবে। আগে আমরা পরীক্ষা দেবার আগে সব মাথায় ঢুকিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতাম। আর এখনের বাচ্চারা তো জানেই, না পারলে পরীক্ষার হলে নকলের ব্যবস্থা আছে। কি শিখবে আমাদের বাচ্চারা?’

 

এদিকে বর্তমান কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষকরাও দ্বিধাদ্বন্দে। উপজেলার অনেক প্রধান শিক্ষক এবং বিষয় শিক্ষকরাও বুঝে উঠতে পারেননি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক পরীক্ষার আগের দিন প্রধান শিক্ষকের নিকট প্রেরিত প্রত্যেক বিষয়ের প্রশ্নপত্রের সাথে এক সেট শিক্ষক নির্দেশনা দেয়া থাকে। কিন্তু নির্দেশনাটি বেশি পৃষ্ঠার হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান থেকেই নির্দেশনাটি প্রিন্ট দেওয়া হচ্ছে না। আবার অনেকের নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবের কারণেও শুধুমাত্র প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করে বিদ্যালয়ের ছাত্র অনুযায়ী প্রয়োজনমত ফটোকপি করে পরীক্ষা নিলেও শিক্ষক নির্দেশনাটি প্রিন্ট দিচ্ছেন না। কিন্তু শিক্ষক নির্দেশনা ছাড়া কোনভাবেই শিক্ষার্থীর যোগ্যতা মূল্যায়ন সম্ভব নয়। অথচ নতুন এ পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদের কোন প্রশিক্ষণ দেওয়াতো হয়নিই, স্পষ্ট ধারণাও সারা দেশের শিক্ষকরা পায়নি। নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিও চূড়ান্ত করা হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। অ্যাপসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অগ্রগতির মূল্যায়নের রেকর্ড রাখার কথা থাকলেও এখনো উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই অ্যাপসের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেননি। অনেকে জানেনও না। প্রত্যেক বিষয় শিক্ষকের নিজস্ব স্মার্ট ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অগ্রগতির মূল্যায়ন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক শিক্ষকের স্মার্ট ফোনই নেই। অনেকের স্মার্ট ফোন থাকলেও চালাতে পারেন না।

 

এ পরিস্থিতিতে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। আর এভাবে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস হলে এবং ইউটিউবে উত্তর মিললে আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসানোই মুশকিল হবে।

 

বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেছেন, ‘যুগের প্রয়োজনেই কারিকুলাম আপডেট করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গেলে আমাদের এই শিক্ষাক্রমে যেতে হবে।’

এখন দেখা যাক, নতুন কারিকুলামে পড়ালেখা করে পরবর্তী প্রজন্ম বিশ্বের সাথে কতটা খাপ খাওয়াতে পারে। সময়ই তার জবাব দেবে।

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।


প্রিন্ট