কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ ১০ জুলাই বুধবার সকালে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাস ও হাসপাতালের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন।
হাসপাতালের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় ভোগান্তীতে পড়ছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের রোগী এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় দুইশত শিক্ষার্থীকে ক্লিনিক্যাল ক্লাস করার জন্য প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের সদর হাসপাতালে যেতে হয়। পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা, সদর হাসপাতালের হযবরল অবস্থা, পর্যাপ্ত যন্ত্রাদির অভাবে শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেও বিষয়গুলোর সমাধান হয়নি জানান শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১০ জুলাই) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি পালন শেষে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতাল চালু করার দাবি জানিয়ে এর অনুলিপি কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালকের কাছেও দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়ায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি। কবে নাগাদ অনুমোদন হবে, সে বিষয়েও তথ্য নেই।
জানা যায়, নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের একটি ব্লকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আংশিক বহির্বিভাগ চালু হয়। সেখানে শুধু বহির্বিভাগে কিছু রোগী দেখা হয়। হাসপাতালে রোগী ভর্তি, এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না।
কুষ্টিয়া ও তার পার্শবর্তী অঞ্চলের মানুষের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ না করেই অস্থায়ীভাবে কুষ্টিয়া ম্যাটস ভবন ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালকে কেন্দ্র করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করা হয়।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই হাজারো অনিয়ম ও দূর্নীতি সংঘটিত হয়। পর্যায়ক্রমে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার পরও কলেজ ও হাসপাতাল হস্তান্তরে নানান গড়িমসি দেখা যায়।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৫ ই নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী হাসপাতাল উদ্বোধনের পরও পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মেডিকেল কলেজের ৩য় বর্ষ থেকে ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করার জন্য প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের সদর হাসপাতালে যেতে হয়।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ২০১৯-২০ সেশনের আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আগামী ১ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’
যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, প্রথম দিকে পরিকল্পনায় কিছু ঘাটতি ছিল। পরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে সবকিছু কাটিয়ে কাজ শেষ করা হয়। প্রকল্প পরিচালক সরওয়ার জাহান বলেন, দামি দামি যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এমআরআই, আলট্রাসনো, এক্স-রেসহ অন্তত ১৩ ধরনের দামি যন্ত্রপাতি বেশ কয়েক মাস ধরে প্যাকেটবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতাল চালুর বিষয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রিন্ট