ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

চা বিক্রি করেই সংসার চলে শামীমের

শাহাগোলা রেলওয়ে ষ্টেশনের অবস্থা এক সময় রমরমা ছিল। সেই রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশে একটি ছোট ঝুপরি ঘরেই শামীম মিয়া ১৯৮৮ সালে প্রথম লাল চা দিয়েই চায়ের দোকান শুরু করে। সময়টা এখন থেকে  প্রায় ৩৭বছর আগে এরপর থেকে একটানা ভাবে চা বিক্রি করে যাচ্ছে শামীম মিয়া। শাহাগোলা রেলওয়ে ষ্টেশন আগের মত জমজমাট নেই ষ্টেশন মাষ্টারের অফিস এখন তালা বদ্ধ থাকে। এক সময় এই ষ্টেশনে ৪/৫ টি লোকাল মেল ট্রেন থামত এখন শুধু একটি রকেট মেল ট্রেন থামে।
এই ট্রেনটি খুলনা টু চিলাহাটি ২৪ আপ ২৩ ডাউন। আর একটি ট্রেন সরকারি ভাবে চলে সেটি হলো উত্তরা। এই উত্তরা ট্রেনটি শাহাগোলা ষ্টেশনে থামে। উত্তরা ট্রেনটি রাজশাহী টু পার্বতীপুর ৩৪ আপ ৩২ ডাউন। এই দুটি ট্রেন থামলেও টিকেট সংগ্রহের ব্যাবস্থা না থাকায় যাএীদের পদচারনা কম। এরপর ও শত প্রতিকুলতার মধ্যে ও টিকে আছে শামীম মিয়ার চায়ের দোকানটি।
শামীম মিয়ার বয়স এখন প্রায় ৫৩ বছর। তার বাড়ী আএাই উপজেলার শাহাগোলা গ্রামে। ৩৭ বছর ধরে চা বিক্রি করছেন শামীম। ছোট বেলায় তার বাবা মা মারা গেছে। মা বাবা না থাকায় প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা আর্জন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। শামীম মিয়া তাই আক্ষেপ করেই বললেন আমি চা বিক্রি করে সংসার চালাই তারপরেও আমি আমার সন্তানদের শিক্ষিত করতে চাই। আমার এক ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও এক মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।  এখনও তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। চা বিক্রি করেই খরচ জোগান। এখন দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই সারা বছর চলে তার সংসার খরচ। তবে শামীম মিয়ার চায়ের একটা সুনাম রয়েছে। শামীম টি ষ্টল শাহাগোলা ষ্টেশনের ঐতিহ্য।
নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর ও জয়পুরহাট এর বিভিন্ন উপজেলা জুরে ট্রেনের যাত্রী না হলেও বিভিন্ন অঞ্চল ও দুর দুরান্ত থেকে আসে চা পিপাসুরা চা পান করতে, কেউ বা আসে মটরসাইকেল যোগে, কেউ বা ট্রেনে, আবার অনেকে সান্তাহার, রাণীনগর ও আত্রাই থেকে সিএনজি যোগে এসে চা পানের জন্য শামীম টি ষ্টলে অপেক্ষা করতে থাকে।
গত বুধবার শাহাগোলা ষ্টেসনে গিয়ে দেখা যায় শামীম মিয়া চা তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে। সে জানান সকাল ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে তার দোকানে চা বিক্রি করে থাকেন। সে আরও বলেন, প্রতিদিন তার দোকানে দুধ প্রয়োজন হয় ৮০-৯০ কেজি। চা পাতি লাগে দেড় থেকে দুই কেজি। চিনি লাগে ১৬-১৮ কেজি। প্রয়োজনীয় দুধ পাশ্ববর্তী গ্রাম পিরপাড়া, খাঁপাড়া, সরদারপাড়া ও মজিদপাড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
শামিম আক্ষেপ করে বলেন, জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় লাভের অঙ্কটা কম হয়। শামিম মিয়া বলেন, আমি একজন গরিব মানুষ চা বিক্রি করে স্বচ্ছল ভাবে সংসার চালাই। আমার কোন সহায় সম্পত্তি নেই। আমি সরকারি কোন সাহায্য পাই না।
শামিম টি ষ্টলের চায়ের সম্পর্কে তারাটিয়া মাষ্টারমাইন্ড বিয়াম কলেজের অধ্যক্ষ ডি.এস জাহিদ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন শামিম মিয়ার দোকানের চা পানে তৃপ্তি আানে মনে। তার দোকানের চায়ের প্রসংশা সর্বজন স্বীকৃত। স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস.এম মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, শামিম মিয়া দীর্ঘ দিন ধরে চা বিক্রি করছেন। তার চায়ের সুনাম রয়েছে। সে যদি সরকারি কোন সাহায্য না পেয়ে থাকে তবে তাকে ভবিষ্যতে  সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

চা বিক্রি করেই সংসার চলে শামীমের

আপডেট টাইম : ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪
মোঃ আব্দুল জব্বার ফারুক, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :
শাহাগোলা রেলওয়ে ষ্টেশনের অবস্থা এক সময় রমরমা ছিল। সেই রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশে একটি ছোট ঝুপরি ঘরেই শামীম মিয়া ১৯৮৮ সালে প্রথম লাল চা দিয়েই চায়ের দোকান শুরু করে। সময়টা এখন থেকে  প্রায় ৩৭বছর আগে এরপর থেকে একটানা ভাবে চা বিক্রি করে যাচ্ছে শামীম মিয়া। শাহাগোলা রেলওয়ে ষ্টেশন আগের মত জমজমাট নেই ষ্টেশন মাষ্টারের অফিস এখন তালা বদ্ধ থাকে। এক সময় এই ষ্টেশনে ৪/৫ টি লোকাল মেল ট্রেন থামত এখন শুধু একটি রকেট মেল ট্রেন থামে।
এই ট্রেনটি খুলনা টু চিলাহাটি ২৪ আপ ২৩ ডাউন। আর একটি ট্রেন সরকারি ভাবে চলে সেটি হলো উত্তরা। এই উত্তরা ট্রেনটি শাহাগোলা ষ্টেশনে থামে। উত্তরা ট্রেনটি রাজশাহী টু পার্বতীপুর ৩৪ আপ ৩২ ডাউন। এই দুটি ট্রেন থামলেও টিকেট সংগ্রহের ব্যাবস্থা না থাকায় যাএীদের পদচারনা কম। এরপর ও শত প্রতিকুলতার মধ্যে ও টিকে আছে শামীম মিয়ার চায়ের দোকানটি।
শামীম মিয়ার বয়স এখন প্রায় ৫৩ বছর। তার বাড়ী আএাই উপজেলার শাহাগোলা গ্রামে। ৩৭ বছর ধরে চা বিক্রি করছেন শামীম। ছোট বেলায় তার বাবা মা মারা গেছে। মা বাবা না থাকায় প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা আর্জন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। শামীম মিয়া তাই আক্ষেপ করেই বললেন আমি চা বিক্রি করে সংসার চালাই তারপরেও আমি আমার সন্তানদের শিক্ষিত করতে চাই। আমার এক ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও এক মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।  এখনও তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। চা বিক্রি করেই খরচ জোগান। এখন দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই সারা বছর চলে তার সংসার খরচ। তবে শামীম মিয়ার চায়ের একটা সুনাম রয়েছে। শামীম টি ষ্টল শাহাগোলা ষ্টেশনের ঐতিহ্য।
নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর ও জয়পুরহাট এর বিভিন্ন উপজেলা জুরে ট্রেনের যাত্রী না হলেও বিভিন্ন অঞ্চল ও দুর দুরান্ত থেকে আসে চা পিপাসুরা চা পান করতে, কেউ বা আসে মটরসাইকেল যোগে, কেউ বা ট্রেনে, আবার অনেকে সান্তাহার, রাণীনগর ও আত্রাই থেকে সিএনজি যোগে এসে চা পানের জন্য শামীম টি ষ্টলে অপেক্ষা করতে থাকে।
গত বুধবার শাহাগোলা ষ্টেসনে গিয়ে দেখা যায় শামীম মিয়া চা তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে। সে জানান সকাল ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে তার দোকানে চা বিক্রি করে থাকেন। সে আরও বলেন, প্রতিদিন তার দোকানে দুধ প্রয়োজন হয় ৮০-৯০ কেজি। চা পাতি লাগে দেড় থেকে দুই কেজি। চিনি লাগে ১৬-১৮ কেজি। প্রয়োজনীয় দুধ পাশ্ববর্তী গ্রাম পিরপাড়া, খাঁপাড়া, সরদারপাড়া ও মজিদপাড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
শামিম আক্ষেপ করে বলেন, জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় লাভের অঙ্কটা কম হয়। শামিম মিয়া বলেন, আমি একজন গরিব মানুষ চা বিক্রি করে স্বচ্ছল ভাবে সংসার চালাই। আমার কোন সহায় সম্পত্তি নেই। আমি সরকারি কোন সাহায্য পাই না।
শামিম টি ষ্টলের চায়ের সম্পর্কে তারাটিয়া মাষ্টারমাইন্ড বিয়াম কলেজের অধ্যক্ষ ডি.এস জাহিদ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন শামিম মিয়ার দোকানের চা পানে তৃপ্তি আানে মনে। তার দোকানের চায়ের প্রসংশা সর্বজন স্বীকৃত। স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস.এম মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, শামিম মিয়া দীর্ঘ দিন ধরে চা বিক্রি করছেন। তার চায়ের সুনাম রয়েছে। সে যদি সরকারি কোন সাহায্য না পেয়ে থাকে তবে তাকে ভবিষ্যতে  সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

প্রিন্ট