গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মধ্য বনগ্রাম গ্রামে বাংলা ভিস্তা কার্বন ইন্ড্রাষ্টিজ লিমিটেড নামে, অনুমতি ছাড়াই চলছে পাটকাঠির ছাই থেকে কার্বন তৈরির কারখানা চারকোল। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শত শত মানুষ।
জানা যায়, চারকোল কারখানা স্থাপন করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, শিল্প কারখানার অনুমোদিত কাগজ, ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদিত কাগজ, স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু চারকোল কারখানাটি কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই চালু রেখেছে। ফলে ওই এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নানা ধরনের রোগে ভুগছে মানুষ। অবৈধভাবে জনবসতি এলাকাতে গড়ে ওঠা এই চারকোল কারখানাটি এখন এলাকার মানুষের কাছে মৃত্যু ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি জমিতে দিনদিন ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাবে।
স্বরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মধ্য বনগ্রাম গ্রামের শহীদ মুন্সির জায়গা ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেছেন কারখানা। কারখানার চুল্লিতে শ্রমিকরা তাদের কোন সেফটি ছাড়াই কাজ করে চলছে। এতে কার্বনের ধোঁয়ায় শ্রমিকদের জীবন ঝুকিতে পড়ছে।
পাটকাঠির ছাই থেকে তৈরি করা কার্বন চীনে রপ্তানি করা হয়। যা চীনে মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ, কার্বন পেপার, ফটোকপির কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশ ও প্রসাধন তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসী বর্তমানে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছেন। কারখানার কারণে আশেপাশের এলাকার ফসলি জমিরও উৎপাদন কমে যাবে। কৃষকরা জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও ফলন বাড়াতে পারবে না। তারা এ অবৈধ চারকোল কারখানা বন্ধের দাবি জানান।
মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডঃ রায়হান ইসলাম শোভন বলেন, চারকোল কারখানা থেকে যে ধোঁয়া নির্গত হয় তাতে অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড মিশ্রিত হওয়ায় এর মধ্যে কিছু বিষাক্ত পদার্থ থাকে। এ কারণে এ ধোঁয়া ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর। এ থেকে মানুষের শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা হতে পারে। ক্রনিক ব্রংকাইটিস ডিজিজ হতে পারে। এমনকি অনেক দিন এই ধোঁয়ার সংস্পর্শ থাকলে মানুষের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগ ও কোষ্টকাঠিন্য রোগও দেখা দিতে পারে।
মুকসুদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দীন শেখ বলেন, চারকোল কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি আশেপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে আশেপাশের মাঠের ফসল ও ফল গাছের পরাগায়নও শুকিয়ে যায় এবং পরাগায়ন ব্যাহত হয়। এছাড়া ফসলের জন্য উপকারী যেসব পতঙ্গ বিশেষ করে মৌমাছি সেগুলো এই এলাকাতে থাকে না। সেজন্য ব্যাপক আকারে পরাগায়নের অভাবে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
কারখানার ম্যানেজার লিয়াকত হোসেন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি তবে এখনো পাইনি। অন্য কাগজপত্র কি কি আছে তা আমি বলতে পারছি না। আমার কাছে কোন কাগজ নেই, কাগজপত্র মালিকের নিকট ঢাকায় আছে।
কারখানা মালিক, জুবায়ের ভুইয়ার নিকট কারখানার কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মোট আটটি কারখানা চলে, আমি কারখানায় আসলে আপনাকে সাক্ষাতে বলবো।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, বিভিন্ন লোক দিয়ে ফোন করে আমার নিকট থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে। বাকি কাগজপত্র আছে কিনা আমার জানা নাই।
গোপালগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, এই কারখানার ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিল, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু এখোনও দেওয়া হয়নি, ছাড়পত্র না পেয়ে কারখানা চালিয়ে থাকলে এটা আইন বহির্ভূত। কোন ভাবেই কারখানা চালু করতে পারে না।
- আরও পড়ুনঃ ভেড়ামারায় কৃষকদের মধ্যে বীজ ও সার বিতরণ
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, এরকম কারখানা মুকসুদপুরে গড়ে উঠেছে আমার জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম, আমি তদন্তপূর্বক ব্যাবস্থা নিবো।
প্রিন্ট