রাজশাহীর তানোরের বাধাইড় ইউনিয়নের (ইউপি) নারায়নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম জেঁকে বসেছে। স্মার্ট বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশা দেখে যেকেউ আঁতকে উঠবে। একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমান কোনো সুযোগ-সুবিধাও এখানে নাই। সরেজমিন গত ৩০ জুন রোববার দুপুরে দেখা গেছে স্কুলে মাত্র ৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, তবে সকল শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলো না। স্কুলে কমনরুম নাই, শিক্ষক আছে কম্পিউটার নাই, লাইব্রেরিয়ান আছে লাইব্রেরী নাই, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও বিজ্ঞানাগার নাই, মানসম্মত টয়লেট ও নলকুপ নাই, সিমানা প্রাচীর ও খেলার মাঠ নাই, বেড়া-তাঁটির ঝুঁকিপূর্ণ মাটির ঘরে পড়ানো হচ্ছে।
জানা গেছে, বিগত ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজনৈতিক নেতার ইচ্ছে পুরুণে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিগত ১৯৯৪ সালে এমপিওভুক্তকরণ করা হয়। স্কুলে শিক্ষক রয়েছে ১২ জন ও কর্মচারী ৫ জন।
স্থানীয়রা জানান, কম্পিউটার শিক্ষক নিজেই তেমন কম্পিউটার চালাতে পারেন না বা দক্ষ নয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তারা দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার শিক্ষা (হাতে-কলমে) অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা বলেন, সরেজমিন তদন্ত করলেই এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। এছাড়াও স্কুুুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়া হয় না।এ ঘটনায় এলাকার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে স্কুলের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে গত বৃহস্পতিবার এলাকাবাসি ডাকযোগে স্থানীয় সাংসদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়রা বলছে, কম্পিউটার পরিচালনা করতে না পারলেও সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে বসে বসে সরকারি বেতন-ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন শিক্ষক যেটা নীতিমালা পরিপন্থী।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, নীতিমালায় বলা আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার শিক্ষককে ওয়েবসাইট তৈরীসহ (অনলাইন)-এর যাবতীয় কাজ করতে হবে। এছাড়াও কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে সরকার অনুমোদিত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি {নেকটার}, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি {নেকটার বগুড়া}, ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি মেহেরপুর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর {মশরপুর নওগাঁ} এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট অর্জনকারীদের এমপিওভুক্ত করা যাবে বলে জানান, ডিআইএ কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, শিক্ষক মুুুুঞ্জুয়ারা তেমন কম্পিউটার পরিচালনা করতে না পারায় স্কুলের সিংহভাগ কাজ বাইরে থেকে করতে হয়। এতে একদিকে প্রতিষ্ঠানের যেমন অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি প্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরের মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কয়েকটি পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে স্কুলের উন্নয়নে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্ত্ত একটি টাকারও উন্নয়ন কাজ না করে এসব টাকা নয়ছয় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কম্পিউটার শিক্ষক সব কাজ পারে না এই অভিযোগ সঠিক নয়, তবে স্কুলে কম্পিউটার রুম না থাকায় বাইরে থেকে কাজ করতে হয়, যেটা অনেক স্কুল করে থাকে। আর নিয়োগ কিভাবে হয় কারা দেয় সেটা সবাই জানে, নিয়োগে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।
এ বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান তৌহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, স্কুলে লাইব্রেরী না থাকলে সেই দায় তো তার নয়।
এ বিষয়ে কম্পিউটার শিক্ষক মুুুুঞ্জুয়ারা বলেন, কম্পিউটারের দু’একটা জটিল কাজ বাইরে থেকে করা হয সত্য, তবে ক্লাস না নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
এ বিষয়ে স্কুলের সভাপতি কাউসার আলী বলেন, তিনি নামেই সভাপতি স্কুলের কোনো বিষয়ে তাকে সেইভাবে কিছু জানানো হয় না। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট