ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

হাতিয়ায় স্বামী জীবিত, থাকার পরও বিধবা ভাতা পাচ্ছেন দুই নারী

স্বামী জীবিত থাকলেও তিন বছর ধরে ‘বিধবা’ ভাতা পাচ্ছেন ! নিজেকে কাগজিক বিধবা বানিয়ে তালিকাভুক্ত হয়ে বছরের পর বছর বিধবা ভাতার টাকা নিচ্ছেন কিছু নারী। এ রকম চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে হাতিয়ার পৌর এলাকা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে। ভ‚য়া বিধবা ভাতা সুবিধা পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাগুলোতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভাতা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ।

ঘটনার জানাজানির সূত্রপাত ঘটে হাতিয়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মধ্য লক্ষিদিয়া গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী কুলসুমা বেগমের বিধবা ভাতা উত্তোলনের মাধ্যমে। কুলসুমা বেগম গত তিন বছর ধরে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা হিসেবে ভাতার আওতায় বিধবা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। তার ভাতা পরিশোধের বই নং ৫৫৮। ভাতার বইতে স্বামীকে মৃত দেখানো হলেও আজও তিনি জীবিত আছেন। এমন কি তার পরিবারের অন্য সদস্যরা সুস্থ্য হওয়ার পরেও পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা।

বিষয়টি কানাঘুষা হতেই এলাকাতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অথচ কুলসুমা বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম হাতিয়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের চরলটিয়া গ্রাামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। তিনি উপজেলা সদর ওছখালী পুরাতন বাজারের একজন ব্যবসায়ী।

একই এলাকার মৃত আমিরুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না বেগম নামে এক মহিলা ২০২১ সাল থেকে পাচ্ছেন বিধবা ভাতা। তার ভাতা পরিশোধের বই নং ৪৫৯। ভূয়া কাগজপত্র এবং তথ্য গোপন করে স্বামীকে মৃত দেখিয়ে এ ভাতা উত্তোলন করছেন তিনি। অথচ তার স্বামী আমিরুল ইসলাম এখনো জীবিত এবং স্বাবলম্বী।

শুধু কুলসুমা ও স্বপ্না বেগম নয়, জনপ্রতিনিধিদেরকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ভাতা সহ সকল ধরণের ভাতার সুবিধা নিচ্ছেন অনেকে। অথচ সমাজে এখনো অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে যারা ভাতা পাওয়ার উপযোগী হলেও কিন্তু তারা ভাতা পাচ্ছেনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, জনপ্রতিনিধি এবং দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে সমাজ সেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এসকল অনিয়ম করছেন। জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ইচ্ছেমত নাম্বার দিয়ে একাউন্ট করে নিজেদের পচন্দের লোকদেরকে ভাতিয়ে পায়িয়ে দিচ্ছেন। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ঝাড়ুদার রোকেয়া বেগম (৫২)  খবরের কাগজ কে  জানান, আমি কয়েকবার এলাকার ওয়ার্ড মেম্বারের মাধ্যমে বিধবা ভাতার আবেদন করেও আজ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হতে পারিনি।

এ ব্যাপারে কুলসুমা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি প্রথমে ভাতা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন, তাই আমার বাড়ির পাশের একজন আমাকে রহমত কমিশনারের সাথে কথা বলে ভাতার কার্ড ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন।

আমিরুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই, তাই অভাব অনটনের কারণে আমি বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করেছিলাম। আবেদনের পরিপেক্ষিতে আমাকে ভাতা দেয়া হয়।

হাতিয়া পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রহমত উল্লাহর কাছে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি খবরের কাগজের প্রতিবেদকে  বলেন, এখানে সমাজসেবা অফিসেও সরাসরি অনেক কাজ হয়ে থাকে, রাজনৈতিক বিবেচনায়ও কিছু কাজ হয়ে থাকে, অনেক কাজেই আমরা অবহিত থাকি না।

এবিষয়ে হাতিয়া সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাজী  ইমরান হোসেন খবরের কাগজ কে  বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয় অবগত হলাম। অফিসিয়ালি তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে উদ্যোক্তার মাধ্যমে আবেদন করা ফরমগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যয়নে নেয়া হয়।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

হাতিয়ায় স্বামী জীবিত, থাকার পরও বিধবা ভাতা পাচ্ছেন দুই নারী

আপডেট টাইম : ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

স্বামী জীবিত থাকলেও তিন বছর ধরে ‘বিধবা’ ভাতা পাচ্ছেন ! নিজেকে কাগজিক বিধবা বানিয়ে তালিকাভুক্ত হয়ে বছরের পর বছর বিধবা ভাতার টাকা নিচ্ছেন কিছু নারী। এ রকম চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে হাতিয়ার পৌর এলাকা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে। ভ‚য়া বিধবা ভাতা সুবিধা পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাগুলোতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভাতা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ।

ঘটনার জানাজানির সূত্রপাত ঘটে হাতিয়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মধ্য লক্ষিদিয়া গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী কুলসুমা বেগমের বিধবা ভাতা উত্তোলনের মাধ্যমে। কুলসুমা বেগম গত তিন বছর ধরে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা হিসেবে ভাতার আওতায় বিধবা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। তার ভাতা পরিশোধের বই নং ৫৫৮। ভাতার বইতে স্বামীকে মৃত দেখানো হলেও আজও তিনি জীবিত আছেন। এমন কি তার পরিবারের অন্য সদস্যরা সুস্থ্য হওয়ার পরেও পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা।

বিষয়টি কানাঘুষা হতেই এলাকাতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অথচ কুলসুমা বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম হাতিয়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের চরলটিয়া গ্রাামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। তিনি উপজেলা সদর ওছখালী পুরাতন বাজারের একজন ব্যবসায়ী।

একই এলাকার মৃত আমিরুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না বেগম নামে এক মহিলা ২০২১ সাল থেকে পাচ্ছেন বিধবা ভাতা। তার ভাতা পরিশোধের বই নং ৪৫৯। ভূয়া কাগজপত্র এবং তথ্য গোপন করে স্বামীকে মৃত দেখিয়ে এ ভাতা উত্তোলন করছেন তিনি। অথচ তার স্বামী আমিরুল ইসলাম এখনো জীবিত এবং স্বাবলম্বী।

শুধু কুলসুমা ও স্বপ্না বেগম নয়, জনপ্রতিনিধিদেরকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ভাতা সহ সকল ধরণের ভাতার সুবিধা নিচ্ছেন অনেকে। অথচ সমাজে এখনো অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে যারা ভাতা পাওয়ার উপযোগী হলেও কিন্তু তারা ভাতা পাচ্ছেনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, জনপ্রতিনিধি এবং দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে সমাজ সেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এসকল অনিয়ম করছেন। জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ইচ্ছেমত নাম্বার দিয়ে একাউন্ট করে নিজেদের পচন্দের লোকদেরকে ভাতিয়ে পায়িয়ে দিচ্ছেন। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ঝাড়ুদার রোকেয়া বেগম (৫২)  খবরের কাগজ কে  জানান, আমি কয়েকবার এলাকার ওয়ার্ড মেম্বারের মাধ্যমে বিধবা ভাতার আবেদন করেও আজ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হতে পারিনি।

এ ব্যাপারে কুলসুমা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি প্রথমে ভাতা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন, তাই আমার বাড়ির পাশের একজন আমাকে রহমত কমিশনারের সাথে কথা বলে ভাতার কার্ড ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন।

আমিরুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই, তাই অভাব অনটনের কারণে আমি বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করেছিলাম। আবেদনের পরিপেক্ষিতে আমাকে ভাতা দেয়া হয়।

হাতিয়া পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রহমত উল্লাহর কাছে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি খবরের কাগজের প্রতিবেদকে  বলেন, এখানে সমাজসেবা অফিসেও সরাসরি অনেক কাজ হয়ে থাকে, রাজনৈতিক বিবেচনায়ও কিছু কাজ হয়ে থাকে, অনেক কাজেই আমরা অবহিত থাকি না।

এবিষয়ে হাতিয়া সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাজী  ইমরান হোসেন খবরের কাগজ কে  বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয় অবগত হলাম। অফিসিয়ালি তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে উদ্যোক্তার মাধ্যমে আবেদন করা ফরমগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যয়নে নেয়া হয়।