ঢাকা , বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo কামালদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের জায়গা পরিদর্শন করলেন ফরিদপুরের ডিসি Logo পাংশায় মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির ভাতাভোগীদের এসবিসিসি প্রশিক্ষণ শুরু Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে ছেলের মৃত্যু, আহত মা Logo তানোরে গলায় ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা Logo বাংলাদেশ কিন্ডার গার্ডেন অ্যাসোসিয়েশনের পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় হুমায়রা তৃতীয় Logo তানোর পৌরসভা দাখিল মাদরাসা সভাপতি মালেককে সংবর্ধনা Logo তিল চাষে আগ্রহ হারিয়েছে আত্রাইয়ের কৃষকরা Logo রাস-আল-খাইমাহ চেম্বার এর চেয়ারম্যান মোঃ আলী আল নুয়াইমির সঙ্গে কনসাল জেনারেলের সাক্ষাৎ Logo নলছিটিতে ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতির নামে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ Logo রূপগঞ্জে সাংবাদিক রিয়াজ হোসেনের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

তীব্র গরমে ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বেলা বাড়তেই মাথার ওপর যেন আগুন ঢালতে শুরু করে সূর্য। তীব্র গরমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে রোগীর ভিড়। অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি কাবু শিশুরা।

চলতি এপ্রিলের শুরু থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় তীব্র গরমে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে জনজীবন। হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকসহ জ¦র, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগী। সব বয়সের মানুষ ভুগলেও এই গরম সবচেয়ে বেশি কাবু করেছে শিশুদের।

৭মে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ৪০জন শিশু। যা এ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ২৩জন রোগী।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঘুরে দেখা যায়, শিশু বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। প্রতিদিন এ বিভাগ থেকে অর্ধশতাধিক রোগী সেবা নেয় বলে জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও সেবিকারা। কিন্তু তীব্র গরমে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই অবস্থা শিশু ওয়ার্ডেও। প্রতি ঘণ্টায় এখানে রোগীর চাপ বাড়ছে।

ফারাকপুর গ্রামে বাড়ি । চার বছর বয়সী শিশু শুভর হাতে ক্যানোলা লাগানো। তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। মা জরিনা বেগম জানান, ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় ছেলের জ্বর হয়। এক পর্যায়ে তার খিঁচুনি শুরু হয়। ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তির পরামর্শ দেন।

শহরের খাঁপাড়া থেকে আসা অনন্যা রহমান তার মেয়েকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে তার দুই মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা ও জ্বর। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে।

কথা হয় আরেক রোগীর স্বজন মোমেনার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গরমের মাত্রাটা বেড়ে গেছে। তার ভাগ্নি জমির আইসক্রিম ও ফ্রিজের ঠান্ডা পানি বেশি খায়। দিনে একাধিকবার গোসল করে। এরপর তার গলাব্যাথা ও জ্বর আসে। ফার্মেসি থেকে শুরুতে ওষুধ কিনে তাকে খাওয়ান। কিন্তু, তাতে কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সোনিয়া ঘোষ জানান, তাপপ্রবাহ আসলেই শিশুদের অসুখে আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। ফলে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। এই সময়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার পাশের হোটেল থেকে খাবার ও পানীয় পরিহার করতে হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স মোছা: সাপিয়া খাতুন বলেন, ভর্তি রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে চিকিৎসা সামগ্রীর কোনো সংকট নেই বলে জানান তিনি। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আর এম ও) ডা. জুবায়ের রহমান বলেন, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভর্তি রোগী ছাড়াও অনেকেই আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, অতি গরমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিন দিন শিশুসহ অন্যান্য রোগী বাড়ছে। প্রতিবছর এই সময়ে রোগীর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এখন রোগীর যে চাপ আছে, তা আগামী কয়দিনে আরও বাড়তে পারে। রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন ও ওষুধের কোনো সংকট নেই।

 

এক্ষেত্রে তিনি আরো বলেন, গরমে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুবই চিন্তিত। পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরার্মশ দেন এই চিকিৎসক। এ কারণে শিশু রোগীদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

কামালদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের জায়গা পরিদর্শন করলেন ফরিদপুরের ডিসি

error: Content is protected !!

তীব্র গরমে ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

আপডেট টাইম : ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪
ইস্রাফিল হোসেন ইমন, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি :

প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বেলা বাড়তেই মাথার ওপর যেন আগুন ঢালতে শুরু করে সূর্য। তীব্র গরমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে রোগীর ভিড়। অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি কাবু শিশুরা।

চলতি এপ্রিলের শুরু থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় তীব্র গরমে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে জনজীবন। হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকসহ জ¦র, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগী। সব বয়সের মানুষ ভুগলেও এই গরম সবচেয়ে বেশি কাবু করেছে শিশুদের।

৭মে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ৪০জন শিশু। যা এ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ২৩জন রোগী।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঘুরে দেখা যায়, শিশু বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। প্রতিদিন এ বিভাগ থেকে অর্ধশতাধিক রোগী সেবা নেয় বলে জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও সেবিকারা। কিন্তু তীব্র গরমে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই অবস্থা শিশু ওয়ার্ডেও। প্রতি ঘণ্টায় এখানে রোগীর চাপ বাড়ছে।

ফারাকপুর গ্রামে বাড়ি । চার বছর বয়সী শিশু শুভর হাতে ক্যানোলা লাগানো। তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। মা জরিনা বেগম জানান, ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় ছেলের জ্বর হয়। এক পর্যায়ে তার খিঁচুনি শুরু হয়। ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তির পরামর্শ দেন।

শহরের খাঁপাড়া থেকে আসা অনন্যা রহমান তার মেয়েকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে তার দুই মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা ও জ্বর। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে।

কথা হয় আরেক রোগীর স্বজন মোমেনার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গরমের মাত্রাটা বেড়ে গেছে। তার ভাগ্নি জমির আইসক্রিম ও ফ্রিজের ঠান্ডা পানি বেশি খায়। দিনে একাধিকবার গোসল করে। এরপর তার গলাব্যাথা ও জ্বর আসে। ফার্মেসি থেকে শুরুতে ওষুধ কিনে তাকে খাওয়ান। কিন্তু, তাতে কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সোনিয়া ঘোষ জানান, তাপপ্রবাহ আসলেই শিশুদের অসুখে আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। ফলে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। এই সময়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার পাশের হোটেল থেকে খাবার ও পানীয় পরিহার করতে হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স মোছা: সাপিয়া খাতুন বলেন, ভর্তি রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে চিকিৎসা সামগ্রীর কোনো সংকট নেই বলে জানান তিনি। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আর এম ও) ডা. জুবায়ের রহমান বলেন, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভর্তি রোগী ছাড়াও অনেকেই আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, অতি গরমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিন দিন শিশুসহ অন্যান্য রোগী বাড়ছে। প্রতিবছর এই সময়ে রোগীর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এখন রোগীর যে চাপ আছে, তা আগামী কয়দিনে আরও বাড়তে পারে। রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন ও ওষুধের কোনো সংকট নেই।

 

এক্ষেত্রে তিনি আরো বলেন, গরমে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুবই চিন্তিত। পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরার্মশ দেন এই চিকিৎসক। এ কারণে শিশু রোগীদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।


প্রিন্ট