কুষ্টিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়া নিয়ে শংকা তৈরি হয়েছে। এরইমধ্যে ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোকজন কয়েকবার কাজ শেষ না করেই উধাও হয়ে গেছেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনও অর্ধেকের বেশি কাজ বাকি রয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কুষ্টিয়াসহ তিন জেলার কয়েক লাখ মানুষ।
২০২১ সালের ১২ মার্চ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া ও ঝাউদিয়া সড়কে মরা নদীর ওপর প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে জেডি নামে পাবনার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণকাজ শেষে সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও প্রায় অর্ধেকের বেশি কাজ বাকি। চারটি পিলারের আংশিক ও দুই তীরে কিছু কাজ করে যন্ত্রপাতি ফেলে কয়েক দফায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন লাপাত্তা হয়ে যায়। বর্তমানে আবার সেতুর কাজ শুরু হলেও তাতে তেমন একটা গতি নেই।
গুরুত্বপূর্ণ সেতুটির নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রীতার কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুসহ কুষ্টিয়া সদরের ৭টি ইউনিয়নের মানুষ চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে এ অঞ্চলের বাস চলাচল। অন্যদিকে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট-বড় যানবাহন। স্থানীয় এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, কয়েক দফা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়ার পর তারা নামমাত্র কাজ শুরু করে। কিন্তু কয়েকদিন কাজ করার পর ভেকু মেশিন ফেলে উধাও হয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় তাগাদা দেওয়ার পর স¤প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও বর্তমানে কচ্ছপগতিতে কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দু’পাশে নামমাত্র কিছু কাজ হয়েছে। তবে মূল অবকাঠামো নির্মাণের কোনো কাজই হয়নি। এক সময় এই সড়ক দিয়ে কুষ্টিয়া হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু পর্যন্ত বাস চলাচল করত। কিন্তু সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় প্রায় দুই বছর ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাসহ তিন জেলার কয়েক লাখ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে স্থানীয়দের পাশাপাশি পাশের আরও দুটি জেলার মানুষজনকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার তারা সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার অনুরোধ জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
কাজটির ঠিকাদার নুরুজ্জামান মিয়া জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার পর হঠাৎ করেই নির্মাণসামগ্রীর দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সমন্বয় করা মুশকিল হচ্ছে। যে কারণে আমরা নির্ধারিত সময়ে কাজটি সম্পন্ন করতে পারিনি। তারপরও জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা আবারও কাজ শুরু করেছি। সেতুটির নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সময় বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়েছে।
এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মন্ডল জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নানা অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি শেষ করতে গড়িমশি করেছে। সর্বশেষ তাদেরকে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তবে কাজ যতদূর এগিয়েছে তাতে করে জুনের মধ্যে কাজটি শেষ হবে না।
প্রিন্ট