ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ভেড়ামারায় ক্রেতা ডেকে অর্ধেক দামে তরমুজ বিক্রিঃ তবুও ক্রেতা নেই বাজারে

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দিন দিন তরমুজের দাম কমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। দাম কমলেও প্রত্যাশানুযায়ী দেখা মিলছে না ক্রেতার। হঠাৎ ক্রেতারা তরমুজ বিমুখ হওয়ায় লোকসানের বোঝায় মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে শহর ও গ্রামে তরমুজের দামে হেরফের রয়েছে।

 

তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও এ উপজেলায় অর্ধেক দামেও ক্রেতারা কিনছে না তরমুজ। রমযানের শুরুর দিকে তরমুজের আকাশচুম্বি দামের ফলে নাকাল ছিলো সাধারণ মানুষ।

 

ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও পরিবার নিয়ে তরমুজ খাওয়ার সুযোগ হয়নি নিম্ম-মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের।

 

রমযানকে উপলক্ষ করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় অপরিপক্ক তরমুজ বাজারজাত করেন। অনেক ক্রেতাই সে সময় বেশ চড়া দামে ৮০ টাকা কেজি দরে তরমুজ ক্রয় করলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী সেই কালার ও মিষ্টি না আসায় ঠকেছেন।

 

এ ক্ষোভ থেকেই তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং তা ভাইরাল হয়। এ সময় স্লোগান উঠে অন্তত এক সপ্তাহ তরমুজ না কিনে সেইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিরব প্রতিবাদ জানানোর।

 

মঙ্গলবার(২,এপ্রিল) সকালে ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সরেজমিন দেখা যায়, গত সপ্তাহেও যে তরমুজটি ৪০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটি এখন ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি করলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। দেশের অন্য সব জেলা-উপজেলায় রমযান উপলক্ষে কেজি মাপে তরমুজ বিক্রি রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে প্রশাসন।

 

কিন্তু ভেড়ামারায উপজেলা প্রশাসন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও বাজার মনিটরিং করছে না বলে অভিযোগ জনসাধারণের।

জনসাধারণের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগের সুরে বলেন, অসাধু তরমুজ ব্যবসায়ী সহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের জরিমানাসহ সতর্ক করা অতীব প্রয়োজন।

 

কথা হয় তরমুজ ক্রেতা নুর জাহান বিবির সঙ্গে। তিনি জানান, শিশু নাতি শান্তকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে নাতি বায়না ধরে তরমুজ খাবে। শুনেছি এখনো এসব পরিপক্ক না হওয়ায় সুমিষ্ট না। তারপরও নাতির আবদারে ১৬০ টাকা দিয়ে একটি কিনলাম।

 

শহর মার্কেটে তরমুজ বিক্রেতা রাজু,মোজাম্মেল জানান, রমজানের শুরুতে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করলেও এখন তা অর্ধেকে নেমে এসে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দওে বিক্রি হচ্ছে তারপরও ক্রেতা নেই বললেই চলে। ক্রেতা ডেকে ডেকে অর্ধেক দামে বিক্রি করছি। তারপরও ক্রেতারা কিনতে চায় না।

 

তরমুজ ব্যবসায়ী আমজাদ বলেন, তরমুজ ব্যবসায় ধস নেমেছে। তরমুজের কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন ক্রেতারা। যেহেতু, তরমুজ পচনশীল একটি পণ্য তাই মাইকিং করে বিক্রি করছি। কেজি প্রতি তরমুজ ৩০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৩৫ টাকা। কিন্তু, এরপরও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।

 

তিনি বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে তরমুজের দাম কমতে শুরু করেছে। সঙ্গে আশানুরূপ ক্রেতা মিলছে না বলেও হতাশ তারা।

 

তরমুজ কিনতে আসা আক্কাস আলী বলেন, বেশি দাম থাকায় আগে আমরা তরমুজ কিনতে পারিনি। আজকে বাজারে তরমুজের দাম কম। আমার মতো অনেকেই তরমুজ কিনতে পারছেন। বাজার মনিটরিং জোরদার থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের আরো নাগালে চলে আসবে।

 

স্থানীয় সংবাদকর্মী ইসমাইল হোসেন বাবু বলেন, কয়দিন আগেও ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা হয়েছে। আজ হঠাৎ মাইকিংয়ের মাধ্যমে শুনি ৩০ টাকা কেজিতে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। একটু সস্তায় পেয়ে নিজের জন্য ও আমার গরিব এক প্রতিবেশীর জন্য একটা তরমুজ কিনলাম।

 

 

এ বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছা করে দাম বাড়িয়ে যাতে পণ্য বিক্রি করতে না পারেন সে বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

ভেড়ামারায় ক্রেতা ডেকে অর্ধেক দামে তরমুজ বিক্রিঃ তবুও ক্রেতা নেই বাজারে

আপডেট টাইম : ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দিন দিন তরমুজের দাম কমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। দাম কমলেও প্রত্যাশানুযায়ী দেখা মিলছে না ক্রেতার। হঠাৎ ক্রেতারা তরমুজ বিমুখ হওয়ায় লোকসানের বোঝায় মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে শহর ও গ্রামে তরমুজের দামে হেরফের রয়েছে।

 

তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও এ উপজেলায় অর্ধেক দামেও ক্রেতারা কিনছে না তরমুজ। রমযানের শুরুর দিকে তরমুজের আকাশচুম্বি দামের ফলে নাকাল ছিলো সাধারণ মানুষ।

 

ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও পরিবার নিয়ে তরমুজ খাওয়ার সুযোগ হয়নি নিম্ম-মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের।

 

রমযানকে উপলক্ষ করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় অপরিপক্ক তরমুজ বাজারজাত করেন। অনেক ক্রেতাই সে সময় বেশ চড়া দামে ৮০ টাকা কেজি দরে তরমুজ ক্রয় করলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী সেই কালার ও মিষ্টি না আসায় ঠকেছেন।

 

এ ক্ষোভ থেকেই তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং তা ভাইরাল হয়। এ সময় স্লোগান উঠে অন্তত এক সপ্তাহ তরমুজ না কিনে সেইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিরব প্রতিবাদ জানানোর।

 

মঙ্গলবার(২,এপ্রিল) সকালে ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সরেজমিন দেখা যায়, গত সপ্তাহেও যে তরমুজটি ৪০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটি এখন ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি করলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। দেশের অন্য সব জেলা-উপজেলায় রমযান উপলক্ষে কেজি মাপে তরমুজ বিক্রি রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে প্রশাসন।

 

কিন্তু ভেড়ামারায উপজেলা প্রশাসন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও বাজার মনিটরিং করছে না বলে অভিযোগ জনসাধারণের।

জনসাধারণের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগের সুরে বলেন, অসাধু তরমুজ ব্যবসায়ী সহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের জরিমানাসহ সতর্ক করা অতীব প্রয়োজন।

 

কথা হয় তরমুজ ক্রেতা নুর জাহান বিবির সঙ্গে। তিনি জানান, শিশু নাতি শান্তকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে নাতি বায়না ধরে তরমুজ খাবে। শুনেছি এখনো এসব পরিপক্ক না হওয়ায় সুমিষ্ট না। তারপরও নাতির আবদারে ১৬০ টাকা দিয়ে একটি কিনলাম।

 

শহর মার্কেটে তরমুজ বিক্রেতা রাজু,মোজাম্মেল জানান, রমজানের শুরুতে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করলেও এখন তা অর্ধেকে নেমে এসে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দওে বিক্রি হচ্ছে তারপরও ক্রেতা নেই বললেই চলে। ক্রেতা ডেকে ডেকে অর্ধেক দামে বিক্রি করছি। তারপরও ক্রেতারা কিনতে চায় না।

 

তরমুজ ব্যবসায়ী আমজাদ বলেন, তরমুজ ব্যবসায় ধস নেমেছে। তরমুজের কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন ক্রেতারা। যেহেতু, তরমুজ পচনশীল একটি পণ্য তাই মাইকিং করে বিক্রি করছি। কেজি প্রতি তরমুজ ৩০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৩৫ টাকা। কিন্তু, এরপরও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।

 

তিনি বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে তরমুজের দাম কমতে শুরু করেছে। সঙ্গে আশানুরূপ ক্রেতা মিলছে না বলেও হতাশ তারা।

 

তরমুজ কিনতে আসা আক্কাস আলী বলেন, বেশি দাম থাকায় আগে আমরা তরমুজ কিনতে পারিনি। আজকে বাজারে তরমুজের দাম কম। আমার মতো অনেকেই তরমুজ কিনতে পারছেন। বাজার মনিটরিং জোরদার থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের আরো নাগালে চলে আসবে।

 

স্থানীয় সংবাদকর্মী ইসমাইল হোসেন বাবু বলেন, কয়দিন আগেও ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা হয়েছে। আজ হঠাৎ মাইকিংয়ের মাধ্যমে শুনি ৩০ টাকা কেজিতে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। একটু সস্তায় পেয়ে নিজের জন্য ও আমার গরিব এক প্রতিবেশীর জন্য একটা তরমুজ কিনলাম।

 

 

এ বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছা করে দাম বাড়িয়ে যাতে পণ্য বিক্রি করতে না পারেন সে বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।