ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বাঘায় সূর্যমূখী ফুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

হলুদ গালিচার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন প্রকৃতপ্রেমীরা

এবারই প্রথমসাড়ে ৩বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন খানপুর এলাকার কৃষক সালাম আলী,রাব্বি হোসেন ও কামরুল ইসলাম। তার পাশের ২বিঘা জমিতে চাষ করেছেন কার্তিক প্রামানিক ও তার ভাই গনেশ প্রামানিক। কৃষি বিভাগের প্রনোদণা কর্মসূচির আওতায় প্রমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন তাদের মতো আরো কয়েকজন কৃষক।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা সদর থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর গ্রাম। বাঘা-লালপুর নদীর তীর রক্ষা বাঁধের সড়ক হয়ে যাওয়ার পথে গ্রামটির দক্ষিনে পদ্মার চরে অসংখ্য সূর্যমুখীর খেত নজর কাড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বাতাসে দোল খাচ্ছে। হলুদ গালিচার সূর্যমূখী ফুলে শুধু কৃষকের মুখে হাসিই ফোটেনি, উৎপাদন-ফলনেও আশায় বুক বেঁধেছে তারা। মরা সূর্যমুখীর ফুলের দানায় শেষ হাসিও হাসবেন কৃষক।

 

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবরাই প্রথম ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ হয়েছে। গড়গড়ি, বাজুবাঘা ইউনিয়ন ও আড়ানি পৌরসভা এলাকার ১০ জন কৃষককে প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে অন্য ফসলেরআবাদ নিয়ে পড়ে থাকত কৃষকরা। এসব জমির গাছে ফুল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শতভাগ জমিতেই ভালো বীজ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

 

স্থানীয়রা জানান, সূর্যমুখীর বাগানগুলো এখন প্রকৃতপ্রেমীদের উপভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। কেউ এসে সেই খেতের ছবি তুলেন, কেউবা পরিবার পরিজন নিয়ে আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।তারা জানান, পড়ন্ত বিকালে সূর্যমুখীর বাগানগুলো প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় থাকে বেশি। গড়গড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, মাঠ ভরা সূর্যমুখী ফুল দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় তাদের।

সোমবার (০১-০৪-২০২৪) সরেজমিন দেখা গেছে, অন্য ফসল ছেড়ে এবার কয়েকজন কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে সূর্যমূখী ফুলচাষ ।

কৃষক সালাম আলী জানান, ১ বিঘা জমি লীজ নিতে লেগেছে ২০ হাজার টাকা। জমির লীজ বাদে, বিঘা প্রতি ২৫ হাজার টাকা খরচ করে সাড়ে ৩বিঘা জমিতে ৩জন মিলে সূর্যমুখী লাগিয়েছিলেন। সবমিলে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা।আখ কেটে সাথী ফসল হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন রাব্বি হোসেন ।
বলেন, তারা দুই ভাই ধানের পাশাপাশি সবজির আবাদ করেন কৃষক কার্তিক প্রামানিক ভাই গনেশ প্রমানিক। তবে কৃষি অফিসারের পরামর্শে এবারই প্রথমদুই ভাই ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছে। কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শে পরিচর্যা করছেন। খেত ভালো হইছে।

 

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিব জানান, সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম, খাটুনি নেই, লাভও আছে। বিঘা প্রতি বীজ লাগে ১ কেজি। সার লাগে ৭০ কেজি ডিএপি ও এমওপি ২৫ কেজি। প্রনোদণা হিসেবে কৃষক প্রতি ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সারসহ ১কেজি করে কাবেরি চ্যাম্পিয়ন হাইব্রিড সুর্যসুখী বীজ দেওয়া হয়েছে। ১১০ থেকে ১২০ দিনের মাথায় ফুল থেকে বীজ পাওয়া যায়। বৈশাখের শেষের দিকে এ ফসল কর্তন করা যাবে। বিঘা প্রতি ফলন হবে সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫মণ। ১মণ বীজ থেকে ৮-১০ কেজি তৈল পাওয়া যাবে। ফুলের বীজ থেকে শর্ষে ভাঙানোর মেশিনের মাধ্যমে তেল তৈরি করা যায়। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছে।

 

 

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকতা কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন,মাটির অদ্রতা বুঝে ২বার সেচ দিতে হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই তেমন হয় না।সূর্যমুখীর বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে, সূর্যমুখীতে তা নেই।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, অতিরিক্ত উপ পরিচালক(শস্য) মোছাঃ সাবিনা বেগম বলেন, দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতসহ তেল জাতীয় ও দানা জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তারে প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করা হয়েছে। সূর্যমুখীতে উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

তানোরে হিমাগারে রাখা আলুতে গাছ

error: Content is protected !!

বাঘায় সূর্যমূখী ফুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

আপডেট টাইম : ১০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

এবারই প্রথমসাড়ে ৩বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন খানপুর এলাকার কৃষক সালাম আলী,রাব্বি হোসেন ও কামরুল ইসলাম। তার পাশের ২বিঘা জমিতে চাষ করেছেন কার্তিক প্রামানিক ও তার ভাই গনেশ প্রামানিক। কৃষি বিভাগের প্রনোদণা কর্মসূচির আওতায় প্রমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন তাদের মতো আরো কয়েকজন কৃষক।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা সদর থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর গ্রাম। বাঘা-লালপুর নদীর তীর রক্ষা বাঁধের সড়ক হয়ে যাওয়ার পথে গ্রামটির দক্ষিনে পদ্মার চরে অসংখ্য সূর্যমুখীর খেত নজর কাড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বাতাসে দোল খাচ্ছে। হলুদ গালিচার সূর্যমূখী ফুলে শুধু কৃষকের মুখে হাসিই ফোটেনি, উৎপাদন-ফলনেও আশায় বুক বেঁধেছে তারা। মরা সূর্যমুখীর ফুলের দানায় শেষ হাসিও হাসবেন কৃষক।

 

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবরাই প্রথম ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ হয়েছে। গড়গড়ি, বাজুবাঘা ইউনিয়ন ও আড়ানি পৌরসভা এলাকার ১০ জন কৃষককে প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে অন্য ফসলেরআবাদ নিয়ে পড়ে থাকত কৃষকরা। এসব জমির গাছে ফুল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শতভাগ জমিতেই ভালো বীজ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

 

স্থানীয়রা জানান, সূর্যমুখীর বাগানগুলো এখন প্রকৃতপ্রেমীদের উপভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। কেউ এসে সেই খেতের ছবি তুলেন, কেউবা পরিবার পরিজন নিয়ে আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।তারা জানান, পড়ন্ত বিকালে সূর্যমুখীর বাগানগুলো প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় থাকে বেশি। গড়গড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, মাঠ ভরা সূর্যমুখী ফুল দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় তাদের।

সোমবার (০১-০৪-২০২৪) সরেজমিন দেখা গেছে, অন্য ফসল ছেড়ে এবার কয়েকজন কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে সূর্যমূখী ফুলচাষ ।

কৃষক সালাম আলী জানান, ১ বিঘা জমি লীজ নিতে লেগেছে ২০ হাজার টাকা। জমির লীজ বাদে, বিঘা প্রতি ২৫ হাজার টাকা খরচ করে সাড়ে ৩বিঘা জমিতে ৩জন মিলে সূর্যমুখী লাগিয়েছিলেন। সবমিলে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা।আখ কেটে সাথী ফসল হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন রাব্বি হোসেন ।
বলেন, তারা দুই ভাই ধানের পাশাপাশি সবজির আবাদ করেন কৃষক কার্তিক প্রামানিক ভাই গনেশ প্রমানিক। তবে কৃষি অফিসারের পরামর্শে এবারই প্রথমদুই ভাই ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছে। কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শে পরিচর্যা করছেন। খেত ভালো হইছে।

 

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিব জানান, সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম, খাটুনি নেই, লাভও আছে। বিঘা প্রতি বীজ লাগে ১ কেজি। সার লাগে ৭০ কেজি ডিএপি ও এমওপি ২৫ কেজি। প্রনোদণা হিসেবে কৃষক প্রতি ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সারসহ ১কেজি করে কাবেরি চ্যাম্পিয়ন হাইব্রিড সুর্যসুখী বীজ দেওয়া হয়েছে। ১১০ থেকে ১২০ দিনের মাথায় ফুল থেকে বীজ পাওয়া যায়। বৈশাখের শেষের দিকে এ ফসল কর্তন করা যাবে। বিঘা প্রতি ফলন হবে সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫মণ। ১মণ বীজ থেকে ৮-১০ কেজি তৈল পাওয়া যাবে। ফুলের বীজ থেকে শর্ষে ভাঙানোর মেশিনের মাধ্যমে তেল তৈরি করা যায়। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছে।

 

 

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকতা কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন,মাটির অদ্রতা বুঝে ২বার সেচ দিতে হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই তেমন হয় না।সূর্যমুখীর বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে, সূর্যমুখীতে তা নেই।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, অতিরিক্ত উপ পরিচালক(শস্য) মোছাঃ সাবিনা বেগম বলেন, দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতসহ তেল জাতীয় ও দানা জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তারে প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করা হয়েছে। সূর্যমুখীতে উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।