রাজশাহীর তানোরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবাদমান দু’পক্ষের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবারের উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আব্দুল মজিদ বাদি হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান সজিবকে প্রধান আসামি করে মোট ৮ জনের নামে তানোর থানায় মামলা করেছেন। এই মামলায় পুলিশ আব্দুল হান্নান নামের একজনকে আটক ও জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।
এদিকে মামলার ৮ জন আসামির মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সজিব, রেজাউল ইসলাম, আফরোজ ও মোজাফফর হোসেন ঘটনা স্থলে ছিলেন না।
গণমাধ্যম কর্মীদের করা ভিডিও ফুটেজ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে ঘটনার সত্যতা মিলবে। স্থানীয়রা বলছে, পারিবারিক বিরোধের প্রতিশোধ নিতে মামলায় তাদের জড়ানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) ধানোরা মাঠে সাধারণ কৃষকদের জমি জোরপুর্বক ইজারা দিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এ ঘটনায় স্কীমের কৃষকেরা বাদি হয়ে মজিদুল ও আজিজুলের বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর ১৬৫৫ ও ১৮১ নম্বর দাগে অবস্থিত বিএমডিএর গভীর নলকুপের বৈধ অপারেটর রেজাউল ইসলাম বাবু।
কিন্তু ধানোরা সরদার পাড়া গ্রামের মৃত তাহার আলীর পুত্র মজিদুল ও আজিজুল গভীর নলকুপের বৈধ অপারেটর রেজাউল ইসলাম বাবুকে জোরপূর্বক বিতাড়িত করে গভীর নলকুপ জবরদখল করেছে। তারা ভুয়া সমিতি করে কৃষকদের কাছে জমি নিয়ে চাঁদাবাজি করছে। তারা কৃষকের অগোচরে তাদের জমি মৌসুমী আলু চাষিদের কাছে সেচসহ সাড়ে ১৬ হাজার টাকা বিঘা ইজারা দিয়ে কৃষকদের সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা দিচ্ছেন। এভাবে প্রতি বিঘা জমিতে তারা কৃষকের ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে আত্মসাৎ করছে।
স্কীমের কৃষকদের মতামতের ভিত্তিতে সমিতি গঠনের দাবিতে কৃষকেরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নীতিমালা অনুযায়ী অপারেটর গভীর নলকুপ পরিচালনা করবে এবং সমিতি সেচ সুবিধা নিশ্চিত ও আয়-ব্যয়ের হিসেব-নিকেশ দেখভাল করবেন। কিন্তু অপারেটর বা সমিতির সভাপতি কোনো অবস্থাতেই কৃষকের জমি ইজারা দিতে পারবেন না।
এদিকে কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান তার কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেন। এ সময় কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী ফরহাদ উপস্থিত ছিলেন। ইউএনও সাহেব উভয় পক্ষের কথা শোনেন। এবং তিনি নির্দেশনা দেন কৃষকের জমি কৃষকেরা ইজারা দিবেন স্ট্যাম্পে লেখা পড়ার মাধ্যমে। কৃষকের জমি সমিতির সভাপতি বা অপারেটর ইজারা দিতে পারবেন না।
এছাড়াও স্কীমভুক্ত কৃষকেরা মতামতের ভিত্তিতে সমিতি গঠন করবেন, কৃষকেরা চাইলে সেচ কার্ড দিয়ে সেচ নিবেন। কেউ সেচ নিতে বাধা দিতে পারবে না।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উভয় পক্ষের লোকজন ইউএনও অফিস থেকে বেরিয়ে আশার পর আব্দুল মজিদ প্রতিপক্ষ আব্দুল হান্নানের পিতাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে।
এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় আগা খাঁনকেও কিল-ঘুষি দিয়ে ধাওয়া করে। এদিকে সংঘর্ষের আগেই মোস্তাফিজুর রহমান সজিব, মোজাফফর, রেজাউল ও আফরোজ উপজেলা ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যায়। গণমাধ্যম কর্মীদের করা ভিডিও ফুটেজ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে ঘটনার সত্যতা মিলবে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আব্দুল মজিদের করা মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মজিদ তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান সজিবের হুকুমে তার ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং এক জনকে আটক করা হয়েছে, অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।
প্রিন্ট