ঢাকা , বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

মেয়ের শোকে বিলাপ করছেন মা বিউটি বেগম

মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন, তাই হন্নে হয়ে নিজের ফোন খুঁজছেন মা বিউটি বেগম। কখনো ফোনের জন্য চিৎকার করে সারা বাড়ি মাতম করে ফিরছেন। ফোন পেলেই মেয়ে বৃষ্টি খাতুনের কাছে ঢাকায় যাবেন। ছোট মেয়ে বর্ষা মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। প্রতিবেশীরা যেনো শোকে পাথর হয়ে গেছেন।

শুক্রবার দুপুর ২টা। রাজধানী ঢাকার বেইলী রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শ্বাস্ত্রী (যার আসল নাম বৃষ্টি খাতুন) এর গ্রামের বাড়ি খোকসা বনগ্রাম পশ্চিম পাড়ায় সবে খবর পৌঁছেছে। তখন সেখানে শুরু হয় শোকের মাতম । নিহতের মাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়েছেন প্রতিবেশীরা। গ্রামের বাড়ি থাকেন মা বিউটি বেগম ও ছোট বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা।

নিহত বৃষ্টির গ্রামের বাড়িতে ইডেন কলেজের একটি ক্রেস্ট পাওয়া যায়। সেখানে অভিশ্রুতি বৃষ্টি নামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সমস্ত কাগজ পত্রে বৃষ্টি খাতুন নাম পাওয়া গেছে।

নিহত সাংবাদিকের বাবা শাবলুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দরিদ্র বাবার তিনটিই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে বৃষ্টি খাতুন সবার বড়। মেজো মেয়ে ঝর্ণা রাজবাড়ী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি রাজবাড়ী থেকেই পড়াশুনা করেন। বৃষ্টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। বিসিএস ক্যাডার হওয়া স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ইডেন কলেজে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে স্নাতক পড়েছেন। উচ্চ শিক্ষা শেষ করার আগে বিসিএস কোচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

 

নিহতের মেজ বোন ঝর্ণা জানান, অভিশ্রুতি বৃষ্টি নামে একটি ফেজবুকের একটি আইডি চালাতেন বৃষ্টি। এ ছাড়া সে কখনো অন্য ধর্ম গ্রহণ করেননি। তিনমাস আগে বাড়ি এসেছিল। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য।

নিহতের ছোট বোন বর্ষা জানান, গতকাল দুপুরে মায়ের সঙ্গে বৃষ্টির শেষ বার মুঠো ফোনে কথা হয়। বৃষ্টি সাংবাদিকতা করলেও বাড়ি থেকে মা টাকা পাঠাতেন। বড় বোনের মৃত্যুতে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।

নিহতের চাচা জোয়াদ আলী জানান, ঢাকায় ছোট চাকরি করে দুই মেয়েকে বাইরে রেখে শিক্ষিত করার চেষ্টা করতেন সবুজ। গত ঈদেও বাড়ি এসেছিল বৃষ্টি। সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ করেছে মেয়েটি। সুস্থ মেয়েটি নাকি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।

বেতবাড়িয়া ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মজিদও বুষ্টির অকাল মৃত্যুতে সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, মেয়েটি মেধাবী ছিল।

বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করে বৃষ্টি। স্বাধীন চেতা ছিল। ছোটবেলা থেকে সে সরকারি বড় চাকরির স্বপ্ন দেখতো।

 

একই গ্রামের বাসিন্দা খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আখতার জানান, মেয়েটির বাবাকে আগে থেকেই চিনি। তার তিন মেয়ে তাও জানি। কিন্তু নামের পরিবর্তন বা অন্য ধর্ম গ্রহণের বিষয়ে কখনো শুনিনি।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

মেয়ের শোকে বিলাপ করছেন মা বিউটি বেগম

আপডেট টাইম : ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ মার্চ ২০২৪

মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন, তাই হন্নে হয়ে নিজের ফোন খুঁজছেন মা বিউটি বেগম। কখনো ফোনের জন্য চিৎকার করে সারা বাড়ি মাতম করে ফিরছেন। ফোন পেলেই মেয়ে বৃষ্টি খাতুনের কাছে ঢাকায় যাবেন। ছোট মেয়ে বর্ষা মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। প্রতিবেশীরা যেনো শোকে পাথর হয়ে গেছেন।

শুক্রবার দুপুর ২টা। রাজধানী ঢাকার বেইলী রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শ্বাস্ত্রী (যার আসল নাম বৃষ্টি খাতুন) এর গ্রামের বাড়ি খোকসা বনগ্রাম পশ্চিম পাড়ায় সবে খবর পৌঁছেছে। তখন সেখানে শুরু হয় শোকের মাতম । নিহতের মাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়েছেন প্রতিবেশীরা। গ্রামের বাড়ি থাকেন মা বিউটি বেগম ও ছোট বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা।

নিহত বৃষ্টির গ্রামের বাড়িতে ইডেন কলেজের একটি ক্রেস্ট পাওয়া যায়। সেখানে অভিশ্রুতি বৃষ্টি নামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সমস্ত কাগজ পত্রে বৃষ্টি খাতুন নাম পাওয়া গেছে।

নিহত সাংবাদিকের বাবা শাবলুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দরিদ্র বাবার তিনটিই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে বৃষ্টি খাতুন সবার বড়। মেজো মেয়ে ঝর্ণা রাজবাড়ী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি রাজবাড়ী থেকেই পড়াশুনা করেন। বৃষ্টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। বিসিএস ক্যাডার হওয়া স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ইডেন কলেজে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে স্নাতক পড়েছেন। উচ্চ শিক্ষা শেষ করার আগে বিসিএস কোচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

 

নিহতের মেজ বোন ঝর্ণা জানান, অভিশ্রুতি বৃষ্টি নামে একটি ফেজবুকের একটি আইডি চালাতেন বৃষ্টি। এ ছাড়া সে কখনো অন্য ধর্ম গ্রহণ করেননি। তিনমাস আগে বাড়ি এসেছিল। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য।

নিহতের ছোট বোন বর্ষা জানান, গতকাল দুপুরে মায়ের সঙ্গে বৃষ্টির শেষ বার মুঠো ফোনে কথা হয়। বৃষ্টি সাংবাদিকতা করলেও বাড়ি থেকে মা টাকা পাঠাতেন। বড় বোনের মৃত্যুতে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।

নিহতের চাচা জোয়াদ আলী জানান, ঢাকায় ছোট চাকরি করে দুই মেয়েকে বাইরে রেখে শিক্ষিত করার চেষ্টা করতেন সবুজ। গত ঈদেও বাড়ি এসেছিল বৃষ্টি। সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ করেছে মেয়েটি। সুস্থ মেয়েটি নাকি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।

বেতবাড়িয়া ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মজিদও বুষ্টির অকাল মৃত্যুতে সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, মেয়েটি মেধাবী ছিল।

বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করে বৃষ্টি। স্বাধীন চেতা ছিল। ছোটবেলা থেকে সে সরকারি বড় চাকরির স্বপ্ন দেখতো।

 

একই গ্রামের বাসিন্দা খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আখতার জানান, মেয়েটির বাবাকে আগে থেকেই চিনি। তার তিন মেয়ে তাও জানি। কিন্তু নামের পরিবর্তন বা অন্য ধর্ম গ্রহণের বিষয়ে কখনো শুনিনি।