ঢাকা , শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সজনে তলা বট গাছে ভূঁত! দেখতে আসে দূর-দূরান্তের লোক

ভেড়ামারা শহর থেকে প্রায় ৩কিলোমিটার দুরে ভয়ংকর জায়গা ব্যাকাপুলের সূন্নিকটে অবস্থিত প্রাচীন বটগাছ। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় নামক গ্রামে শতবছরের উর্ধ্বে সজনিতলা বটগাছ নামে এই বটগাছটি অত্র উপজেলার মধ্যে খ্যাত, সুপরিচিত এবং ভয়ংকর জায়গা সজনিতলা বটগাছ তলা। এই গাছে আগে বসবাস করতো ভূঁতপেত্নী।এখন বটতলা সন্ধ্যা নামলে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। পুরাতন বটগাছটি দিব্যি দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে আসছে প্রবীনতার কালের স্বাক্ষী হিসেবে। বটগাছটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসে লোকজন। এই পুরানো বটগাছটি ঝড় তুফানে ক্ষতি করতে পারেনি।

 

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামেই রয়েছে বহু পুরোনো বটগাছ। বিশাল আকারের এই গাছটির বিশালতা দেখার মতো। বটগাছের বেশ কয়টি কাণ্ড মাটি ছুঁয়ে রয়েছে। গাছের নিচে অন্য কোনো গাছ বা আগাছা এখন তেমন নেই। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয় সজনিতলা বটগাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে বটগাছ ঘিরে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যস্থান।

 

বটগাছটি নিচে দোয়া, প্রার্থনা ও মানত করেন। কেউ বলতে পারেনা বটগাছটি জন্মের কথা।

 

এলাকার প্রবীন লোকজন জানান, প্রথমে এই বট গাছের পাতা ছিঁড়লেই নাকি শরীরের জ্বর হতো। তারা আরও বলেন, এই বটগাছটি নিয়ে অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। যা পূর্বপুরুষদের মুখে মুখে শুনে আসছেন। যুগে যুগে কি রহস্যময় জিনিস দেখে আসছে মানুষ। তবে পুরনো জিনিস যা ঐতিহ্য বহন করে। আর ঐতিহ্যের অংশই হচ্ছে এই বটগাছ। বটগাছকে ঘিরে লোক মুখে নানান কথার প্রচলন আছে। কেউ কেউ মনে করে এই বটগাছ ঐতিহ্যই বহন করে । এই বটগাছকে ঘিরে ভেড়ামারাবাসী যেন তাদের হারানো ঐতিহ্য খুঁজে পায়।

 

তৎকালীন সময় ৫০/৬০ বছর পূর্বে এই জায়গায় দিনের বেলায় অনেক ঝোর-জঙ্গলে অন্ধকার থাকতো। রাতের বেলার কথা বাদই দিলাম। দিনের বেলায় সেখানে যেতে ভয়ে গা ছমছম করতো। বটগাছ তলা ছিলো জঙ্গলে ভরা চরম অন্ধকার থাকতো জায়গাটি। ভুত পেত্নীর আড্ডা ছিলো সেই কারণে সব সময় অনেকেই এই বটগাছ দেখে ভয় পেত।

 

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম ভয়ংকর এই সজনিতলা বটগাছের কাছদিয়ে ভয়ে কেউ চলা ফিরা করতে পারতো না। রায়টা-জুনিয়াদহ যাওয়ার জন্য মানুষ ট্রেনে চরে যেতো।পায়ে হাঁটা কাঁচা রাস্তাটি ছিলো ভয়ংকর। ভেড়ামারা-রায়টা, গোলাপনগর ও জুনিয়াদহর মানুষ কেউ পায়ে হেটে ভূঁতপেত্নীর ভয়ে কেউ চলা চল করতে পারতো না। এখন পাঁকা রাস্তায় পরিনত হলেও বা তেমন জঙ্গল না থাকলে ও পথচলা পথচারীরা পথ চলতে ভয় পাই। কারণ আগে ছিলো ভূঁতের ভয়। এখন হচ্ছে সন্ত্রাসীদের ভয়। রাত নামলেই বটতলায় সন্ত্রাসীদের আড্ডা।

 

প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত সজনিতলা বটগাছ নিয়ে রয়েছে নানা কথা। নওদা ক্ষেমিরদিয়ার গ্রামের শাহাদত হোসেন (৮৫) জানান, পূর্বে যে সমস্ত মেয়ে মানুষের ছেলে সন্তান হতো না। তারা এই সজনিতলা বটগাছের গোড়ায় শিকড়ে অনেকেই মান্নত করে দুধ ঢালতে দেখেছি। হিন্দুরা এসে কেউ কেউ পূঁজা করেছে।

 

নতুন হাঁট গ্রামের জমির উদ্দীন (৭৫) জানান, আগের দিনে এই বটগাছে রাতে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শোনা যেতো। অনেকেই বলতো জ্বিনপরীদের বিয়ে হচ্ছে। তাই ভয়ে কেউ বটতলায় যেতো না। দিনের বেলায় কেউ সাহস করে গেলেও ভয়ে তার গা ছমছম করতো। ইতোপূর্বে এলাকার খেজমত আলী দাঁতি লেগে বটগাছের কাছে পরে ছিলো। ঐসময় পরে অনেক লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার কথা শুনেছি।

 

চক ভেড়ামারা গ্রামের খোদা বক্্র ও দবির আলী জানায়, আগের দিনে সজনিতলা বটগাছের কাছে যেতে ভূঁতপেত্নীদের ভয় কোন লোক সেখানে যেতো না। এখন এই বটগাছের নিচে রাতে সন্ত্রাসীদের বসবাস। বটগাছের কাছদিয়ে গভীর রাতে গেলেই সন্ত্রাসীরা পথচারীকে বটগাছের সাথে বেধে রেখে নির্যাতন করে। কাছে থাকা টাকা ও মটর সাইকেল কেড়ে নেই। তাই রাতে কেউ এই বটগাছের কাছ দিয়ে তেমন কেউ চলা চল করে না। ভয় পাই।

 

শুধু ভেড়ামারা মানুষের কাছে এই বটগাছটি এখন বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত ভাবতে হয়।

 

দামুকদিয়া গ্রামের দাদুভাই নামে খ্যাত আলাউদ্দীন বললেন, বটগাছের বয়স মনে রাখতে নেই। নিজের বয়স আমিও মনে রাখিনি। জন্ম হওয়া থেকে পৃথিবীর নানা রূপের হিসেব রাখতে রাখতে নিজের বয়সের হিসেব গুলিয়ে ফেলেছি আজ বহুকাল।

 

কতশত গ্রীষ্মে কত শ্রান্ত পথিক কে আশ্রয় দিয়েছি, কত বর্ষায় স্নান করেছি, কত শরৎ এর কাশ আমার চারপাশে মাথা দুলিয়েছে কতবার, কত শীত কত বসন্তের বাতাস আমার শরীর ঘিরে বয়ে গেছে, তা সত্যিই মনে রাখতে পারিনি। হ্যাঁ, এখন আমি বয়সের ভারে জীর্ণ। কিন্তু সজনেতলা বটগাছ নিয়ে অনেক স্মৃতি। যা আমার দীর্ঘ জীবনের গল্পের সাথে এই বটগাছের অনেক গল্প জানা।

 

আমি গ্রামের বাড়ি গেলেই সব মামাতো-খালাতো-চাচাতো ভাইবোনেরা একসঙ্গে হইচই করি। গল্প করি। অবধারিতভাবেই তাতে উঠে আসে ভূঁতের গল্প। শোনা যায়, বট গাছের নিচে নাকি ভূত থাকে। তখন সজনিতলা বট গাছের কথা মনে করে দেয়। এই বটগাছ কে ঘিরে অনেক ঘটনার জন্ম। রাতে বট গাছের কাছে যাওয়া ছিলো অনেক কঠিন। সেই সময় ডাকাত দল এই গাছের নিচে গিয়ে বসে বা শুয়ে থাকতো। একদিন নবীর উদ্দীন নামের ডাকাত বটগাছের কাছে যেতেই ভূঁত এসে চেপে ধরে । তার আত্ম চিৎকারে বেহুস হয়ে পরে থাকা মানুষ টি কে ১০ গ্রামের মানুষ গিয়ে উদ্ধার করে। কী ভয়ংকর ঘটনা! তার মুখে এরকম ভয়ংকর সব গল্প শুনে অনেকেই জড়সড় হয়ে যেতো।

 

তিনি জানালেন, আসলে কি বট গাছের নিচে ভূঁত থাকে ? পুরো ঘটনাটি নিতান্ত প্রাকৃতিক। গাছ ঠিক আমাদের মতোই শ্বাস নেয় ও ফেলে। আমরা জানি, মানুষ রাত হোক বা দিন, প্রশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেয় অক্সিজেন। আর নিশ্বাসের সঙ্গে ছেড়ে দেয় কার্বন ডাই-অক্সাইড। গাছেদের জন্য বিষয়টা ঠিক এরকম না। একটু ভিন্ন। দিনে গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নেয় বেশি করে। আর নিশ্বাসের সঙ্গে ছাড়ে অক্সিজেন।

 

এই ব্যাপারে ভেড়ামারা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা জানালেন, ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গাছের এই কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রয়োজন পড়ে। এটা ব্যবহার করে গাছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তথা শক্তি তৈরি করে। তবে রাতের বেলা সালোকসংশ্লেষণ ঘটে না। এ সময় গাছের স্বাভাবিক শ্বসন চলতে থাকে। তাতে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দেয় বট গাছ বা বড় গাছ।

 

তিনি আরো বলেন, কেউ যদি রাতের বেলা এরকম বড় গাছের নিচে বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নেয়, এই প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যায় তার শ্বাসনালীতে। ফলে নিশ্বাস আটকে আসে। শরীরে দেখা দেয় অক্সিজেনের ঘাটতি। বিজ্ঞান না জানার কারণে এটিই মুখে মুখে বদলে গেছে। হয়ে উঠেছে বট গাছের অদৃশ্য ভূঁত।

 

 

স্থানীয়দের কাছে সজনিতলা বটগাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। কেউ বলেন, এর বয়স এক শর বেশি। কেউ দেড় শ। তবে যত মতভিন্নতা থাকুক, শয়ের নিচে বয়স নামাতে চান না কেউই। কেনই বা বয়স বাড়াবে না? বিশালাকার জায়গার ওপর এই বট গাছ, তাকে অন্তত শতবর্ষী না বলে উপায় থাকে না। গাছটির পরিচয় শতবর্ষী সজনিতলা বট গাছ। মানুষের প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রেম ও সংলাপের মাধ্যমে সজনিতলা নামক এই প্রাচীন বটগাছটি অনেকরই আকর্ষণ সৃষ্টি করে ।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

সজনে তলা বট গাছে ভূঁত! দেখতে আসে দূর-দূরান্তের লোক

আপডেট টাইম : ১১:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার :

ভেড়ামারা শহর থেকে প্রায় ৩কিলোমিটার দুরে ভয়ংকর জায়গা ব্যাকাপুলের সূন্নিকটে অবস্থিত প্রাচীন বটগাছ। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় নামক গ্রামে শতবছরের উর্ধ্বে সজনিতলা বটগাছ নামে এই বটগাছটি অত্র উপজেলার মধ্যে খ্যাত, সুপরিচিত এবং ভয়ংকর জায়গা সজনিতলা বটগাছ তলা। এই গাছে আগে বসবাস করতো ভূঁতপেত্নী।এখন বটতলা সন্ধ্যা নামলে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। পুরাতন বটগাছটি দিব্যি দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে আসছে প্রবীনতার কালের স্বাক্ষী হিসেবে। বটগাছটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসে লোকজন। এই পুরানো বটগাছটি ঝড় তুফানে ক্ষতি করতে পারেনি।

 

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামেই রয়েছে বহু পুরোনো বটগাছ। বিশাল আকারের এই গাছটির বিশালতা দেখার মতো। বটগাছের বেশ কয়টি কাণ্ড মাটি ছুঁয়ে রয়েছে। গাছের নিচে অন্য কোনো গাছ বা আগাছা এখন তেমন নেই। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয় সজনিতলা বটগাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে বটগাছ ঘিরে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যস্থান।

 

বটগাছটি নিচে দোয়া, প্রার্থনা ও মানত করেন। কেউ বলতে পারেনা বটগাছটি জন্মের কথা।

 

এলাকার প্রবীন লোকজন জানান, প্রথমে এই বট গাছের পাতা ছিঁড়লেই নাকি শরীরের জ্বর হতো। তারা আরও বলেন, এই বটগাছটি নিয়ে অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। যা পূর্বপুরুষদের মুখে মুখে শুনে আসছেন। যুগে যুগে কি রহস্যময় জিনিস দেখে আসছে মানুষ। তবে পুরনো জিনিস যা ঐতিহ্য বহন করে। আর ঐতিহ্যের অংশই হচ্ছে এই বটগাছ। বটগাছকে ঘিরে লোক মুখে নানান কথার প্রচলন আছে। কেউ কেউ মনে করে এই বটগাছ ঐতিহ্যই বহন করে । এই বটগাছকে ঘিরে ভেড়ামারাবাসী যেন তাদের হারানো ঐতিহ্য খুঁজে পায়।

 

তৎকালীন সময় ৫০/৬০ বছর পূর্বে এই জায়গায় দিনের বেলায় অনেক ঝোর-জঙ্গলে অন্ধকার থাকতো। রাতের বেলার কথা বাদই দিলাম। দিনের বেলায় সেখানে যেতে ভয়ে গা ছমছম করতো। বটগাছ তলা ছিলো জঙ্গলে ভরা চরম অন্ধকার থাকতো জায়গাটি। ভুত পেত্নীর আড্ডা ছিলো সেই কারণে সব সময় অনেকেই এই বটগাছ দেখে ভয় পেত।

 

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম ভয়ংকর এই সজনিতলা বটগাছের কাছদিয়ে ভয়ে কেউ চলা ফিরা করতে পারতো না। রায়টা-জুনিয়াদহ যাওয়ার জন্য মানুষ ট্রেনে চরে যেতো।পায়ে হাঁটা কাঁচা রাস্তাটি ছিলো ভয়ংকর। ভেড়ামারা-রায়টা, গোলাপনগর ও জুনিয়াদহর মানুষ কেউ পায়ে হেটে ভূঁতপেত্নীর ভয়ে কেউ চলা চল করতে পারতো না। এখন পাঁকা রাস্তায় পরিনত হলেও বা তেমন জঙ্গল না থাকলে ও পথচলা পথচারীরা পথ চলতে ভয় পাই। কারণ আগে ছিলো ভূঁতের ভয়। এখন হচ্ছে সন্ত্রাসীদের ভয়। রাত নামলেই বটতলায় সন্ত্রাসীদের আড্ডা।

 

প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত সজনিতলা বটগাছ নিয়ে রয়েছে নানা কথা। নওদা ক্ষেমিরদিয়ার গ্রামের শাহাদত হোসেন (৮৫) জানান, পূর্বে যে সমস্ত মেয়ে মানুষের ছেলে সন্তান হতো না। তারা এই সজনিতলা বটগাছের গোড়ায় শিকড়ে অনেকেই মান্নত করে দুধ ঢালতে দেখেছি। হিন্দুরা এসে কেউ কেউ পূঁজা করেছে।

 

নতুন হাঁট গ্রামের জমির উদ্দীন (৭৫) জানান, আগের দিনে এই বটগাছে রাতে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শোনা যেতো। অনেকেই বলতো জ্বিনপরীদের বিয়ে হচ্ছে। তাই ভয়ে কেউ বটতলায় যেতো না। দিনের বেলায় কেউ সাহস করে গেলেও ভয়ে তার গা ছমছম করতো। ইতোপূর্বে এলাকার খেজমত আলী দাঁতি লেগে বটগাছের কাছে পরে ছিলো। ঐসময় পরে অনেক লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার কথা শুনেছি।

 

চক ভেড়ামারা গ্রামের খোদা বক্্র ও দবির আলী জানায়, আগের দিনে সজনিতলা বটগাছের কাছে যেতে ভূঁতপেত্নীদের ভয় কোন লোক সেখানে যেতো না। এখন এই বটগাছের নিচে রাতে সন্ত্রাসীদের বসবাস। বটগাছের কাছদিয়ে গভীর রাতে গেলেই সন্ত্রাসীরা পথচারীকে বটগাছের সাথে বেধে রেখে নির্যাতন করে। কাছে থাকা টাকা ও মটর সাইকেল কেড়ে নেই। তাই রাতে কেউ এই বটগাছের কাছ দিয়ে তেমন কেউ চলা চল করে না। ভয় পাই।

 

শুধু ভেড়ামারা মানুষের কাছে এই বটগাছটি এখন বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত ভাবতে হয়।

 

দামুকদিয়া গ্রামের দাদুভাই নামে খ্যাত আলাউদ্দীন বললেন, বটগাছের বয়স মনে রাখতে নেই। নিজের বয়স আমিও মনে রাখিনি। জন্ম হওয়া থেকে পৃথিবীর নানা রূপের হিসেব রাখতে রাখতে নিজের বয়সের হিসেব গুলিয়ে ফেলেছি আজ বহুকাল।

 

কতশত গ্রীষ্মে কত শ্রান্ত পথিক কে আশ্রয় দিয়েছি, কত বর্ষায় স্নান করেছি, কত শরৎ এর কাশ আমার চারপাশে মাথা দুলিয়েছে কতবার, কত শীত কত বসন্তের বাতাস আমার শরীর ঘিরে বয়ে গেছে, তা সত্যিই মনে রাখতে পারিনি। হ্যাঁ, এখন আমি বয়সের ভারে জীর্ণ। কিন্তু সজনেতলা বটগাছ নিয়ে অনেক স্মৃতি। যা আমার দীর্ঘ জীবনের গল্পের সাথে এই বটগাছের অনেক গল্প জানা।

 

আমি গ্রামের বাড়ি গেলেই সব মামাতো-খালাতো-চাচাতো ভাইবোনেরা একসঙ্গে হইচই করি। গল্প করি। অবধারিতভাবেই তাতে উঠে আসে ভূঁতের গল্প। শোনা যায়, বট গাছের নিচে নাকি ভূত থাকে। তখন সজনিতলা বট গাছের কথা মনে করে দেয়। এই বটগাছ কে ঘিরে অনেক ঘটনার জন্ম। রাতে বট গাছের কাছে যাওয়া ছিলো অনেক কঠিন। সেই সময় ডাকাত দল এই গাছের নিচে গিয়ে বসে বা শুয়ে থাকতো। একদিন নবীর উদ্দীন নামের ডাকাত বটগাছের কাছে যেতেই ভূঁত এসে চেপে ধরে । তার আত্ম চিৎকারে বেহুস হয়ে পরে থাকা মানুষ টি কে ১০ গ্রামের মানুষ গিয়ে উদ্ধার করে। কী ভয়ংকর ঘটনা! তার মুখে এরকম ভয়ংকর সব গল্প শুনে অনেকেই জড়সড় হয়ে যেতো।

 

তিনি জানালেন, আসলে কি বট গাছের নিচে ভূঁত থাকে ? পুরো ঘটনাটি নিতান্ত প্রাকৃতিক। গাছ ঠিক আমাদের মতোই শ্বাস নেয় ও ফেলে। আমরা জানি, মানুষ রাত হোক বা দিন, প্রশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেয় অক্সিজেন। আর নিশ্বাসের সঙ্গে ছেড়ে দেয় কার্বন ডাই-অক্সাইড। গাছেদের জন্য বিষয়টা ঠিক এরকম না। একটু ভিন্ন। দিনে গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নেয় বেশি করে। আর নিশ্বাসের সঙ্গে ছাড়ে অক্সিজেন।

 

এই ব্যাপারে ভেড়ামারা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা জানালেন, ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গাছের এই কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রয়োজন পড়ে। এটা ব্যবহার করে গাছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তথা শক্তি তৈরি করে। তবে রাতের বেলা সালোকসংশ্লেষণ ঘটে না। এ সময় গাছের স্বাভাবিক শ্বসন চলতে থাকে। তাতে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দেয় বট গাছ বা বড় গাছ।

 

তিনি আরো বলেন, কেউ যদি রাতের বেলা এরকম বড় গাছের নিচে বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নেয়, এই প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যায় তার শ্বাসনালীতে। ফলে নিশ্বাস আটকে আসে। শরীরে দেখা দেয় অক্সিজেনের ঘাটতি। বিজ্ঞান না জানার কারণে এটিই মুখে মুখে বদলে গেছে। হয়ে উঠেছে বট গাছের অদৃশ্য ভূঁত।

 

 

স্থানীয়দের কাছে সজনিতলা বটগাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। কেউ বলেন, এর বয়স এক শর বেশি। কেউ দেড় শ। তবে যত মতভিন্নতা থাকুক, শয়ের নিচে বয়স নামাতে চান না কেউই। কেনই বা বয়স বাড়াবে না? বিশালাকার জায়গার ওপর এই বট গাছ, তাকে অন্তত শতবর্ষী না বলে উপায় থাকে না। গাছটির পরিচয় শতবর্ষী সজনিতলা বট গাছ। মানুষের প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রেম ও সংলাপের মাধ্যমে সজনিতলা নামক এই প্রাচীন বটগাছটি অনেকরই আকর্ষণ সৃষ্টি করে ।


প্রিন্ট