ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

‘মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে’ বইমেলায় বৈমানিক মাহফুজুল আলমের বই

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১১২ বার পঠিত

একের পর এক প্রামান্যচিত্রে যার নেপথ্যকন্ঠ শ্রোতাদের মন কেড়েছে চুম্বকের মত, তিনি মাহফুজুল আলম। একজন লেখক, কবি, গল্পকার, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার, সঞ্চালক, নেপথ্য কন্ঠশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, সামাজিক সংগঠক। ফরিদপুরের এই কৃতি সন্তান তার মাতৃভূমির কাছে চির ঋণি হয়ে আছেন বলে মনে করেন। আর আমরা মনে করি তিনি বাংলা সাহিত্যর পাঠকের জন্য তার লেখুনি দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নেবেন।

 

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই বাবার চাকুরীসুত্রে বর্তমান নরসিংদী জেলার পলাশের বাসায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার বুড়াইচ গ্রাম। তবে বেড়ে ওঠেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরের বাড়িতে। যার পিতার নাম শিকদার মোঃ আমীর হোসাইন এবং মাতা ফিরোজা বেগম। তার শৈশবের শিক্ষা শুরু হয় ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আরিফুজ্জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।

 

কর্ম ও পারিবারিক জীবন
বর্তমান পেশা বৈমানিক হলেও শুরুতে যোগ দেন বিমান বাহিনীর মেইনটেন্যান্স শাখায়। তিনি স্বস্ত্রীক আমেরিকা প্রবাসী হন ২০১০ সালে। বর্তমানে তিনি ৩ পুত্র সন্তানের জনক। প্রবাসে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রথম যাত্রা শুরু করেলেও পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশী প্রথম বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক হিসেবে আমেরিকার মাটিতে গড়ে তোলেন পাইলট প্রশিক্ষণ একাডেমি। নিজের দেশেও খুলেছিলেন এর একটি শাখা।

 

সাহিত্য জীবন
মাহফুজুল আলমের স্কুল জীবন থেকেই অভিনয়, কবিতা, আবৃত্তি ও লেখালেখির প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিলো। তবে একটু লাজুক হওয়ার কারণে স্কুল জীবনে নিজ প্রতিভার আলো বিকশিত হতে দেননি। কিন্তু প্রতিভাকে তিনি ঢেকেও রাখতে পারেননি। যা বিমান বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তার লুকিয়ে থাকা প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে থাকে। ঘাটি পর্যায়ে কবিতা, আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও অভিনয়ের সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি একজন নিয়মিত আবৃত্তিকার ও উপস্থাপক হিসেবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে এবং বাংলাদেশ বেতারের “দূর্বার” অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন। প্রবাসী হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। নিয়মিত আর্টিক্যাল লিখতেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমস, মিলান বার্তা (ইউরোপ), বিডি ইউরোপ২৪.কম (ইতালী), বাংলা স্ট্যাটমেন্ট (লন্ডন) সহ আরো কিছু পত্রিকায় ।

 

দূর প্রবাসে থেকেও জন্মভূমির জন্য মন কেঁদে ওঠে মাহফুজুল আলমের। স্মৃতির পাতায় বারবার ফিরে আসে দেশে থাকা স্বর্ণময় দিনের প্রতিচ্ছবি। শৈশবে সাথে জড়িয়ে থাকা সময়গুলি ফিরে পেতে চান সময়েরই ভিড়ে। এই ফিরে পাওয়ার আগ্রহ থেকেই সংযুক্তি ঘটে অনলাইন জগতের লেখালেখিতে। ইর্ষান্বিয় জনপ্রিয়তায় তথ্যচিত্রের আড়ালে কন্ঠ ও সঞ্চালক হিসেবে নিজেই গড়ে তোলেন “আলফাডাঙ্গা লেখক সমাজ” পরবর্তীতে “শব্দধারা”র মত জনপ্রিয় ও সচ্ছ সাহিত্য চর্চার একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। যা প্রবাস থেকে নিজেই পরিচালনা করে থাকেন। প্রবাসের আড়ালে থাকা মানুষটি নিজ মাটির টান ও প্রতিভাগুণে হয়ে ওঠেন বাংলার সাহিত্য রসিক। লিখতে শুরু করেন স্কুল জীবনের বর্ণিল দিনের গল্প । তার লেখা পাঠকদের কখনো কাঁদিছে আবার কখনো মৃদু স্মৃতির ঝলকানিতে হাসিয়েছে। এ পর্যন্ত তাঁর লেখা প্রবন্ধ সংখ্যা প্রায় পঁচিশটি। জনপ্রিয়তায় থাকা প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে বাংলা বানানে প্রচলিত ভুল, বিশ্বাস করুণ আমার দাড়ি থাকলেও আমি জঙ্গি নই, চিত্তের সামনে বিত্ত যখন ভৃত্য, নিজে কি করছেন?, বেরসিক পাঠক ও সিঙ্গাড়ার গল্প, এঁটো হাতের পেছনের গল্প ইত্যাদি।

 

ছোট গল্পকার হিসেবে তিনি সবচেয়ে সফল। প্রায় শতাধিক ছোট গল্প উঠে এসেছে তার কলমে। একাধিক জনপ্রিয় ছোট গল্পে তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন তার জনপ্রিয়তা। যার মধ্যে রয়েছে বকশিস, ভরা বর্ষার শ্রোতের, কোন এক মায়ের খোঁজে, ছোট্ট হাতের অনামিকা, সখী ভালোবাসা কারে কয়?, কাকীমা, প্যাসেঞ্জার লাউন্সে, যে গল্পে প্রাণ ছিলো, এক দিনের ছিন্নপত্র, বাবা একটি প্রশ্ন করবো?, এরপর যা হলো, একটি নিঃশব্দের গল্প, ছোট্ট হিরো, কাব্য জলসা নৈবেদ্য, প্রবাস জীবনের কান্না, এক জোড়া চুড়ির প্রতিবিম্ব, সে আবেদন পত্রে যা ছিল না, আমার আর ভালো হয়ে থাকা হলো না, অঙ্কুরিত বাবার চোখে, মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে, শেকড় ইত্যাদি।

এমন কি সিরিজ আকারে গল্পেতেও তিনি প্রাণ দিয়েছেন সমান ভাবে। যেমন : আমার হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি (পর্ব ১ হতে ১৭), ভাইয়া (পর্ব ১ হতে ৪), আমারও তো দিন কেটে যায় (পর্ব ১ হতে ৪), বাবা (পর্ব ১ হতে ৩), সম্পর্ক (পর্ব ১ হতে ২৩ এবং চলমান..) ইত্যাদি।

মজার বিষয় হচ্ছে তার কলমে গল্প, প্রবন্ধ বা যে কোন লেখাই উঠে আসুক না কেন, সেটা সত্যি সত্যিই তার নিজের বা খুব কাছের কারো না কারো জীবনের হুবহু বাস্তব গল্প। তিনি বারবার প্রতিফলিত করেন তার জন্মভূমিকে ঘিরে থাকা সকল স্মৃতি।

 

কবিতা দিয়ে তার কলমের হাতে খড়ি হয়েছিলো। তার লেখা অসংখ্য কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কবিতা যেমন আঁচল, মুক্তি যুদ্ধোত্তর প্রজন্ম আমরা, প্রতিজ্ঞা, আমার সৃজন গাঁয়, একাকীত্বের সুখ, আমি যখন লাশ, কেবল পহেলা বৈশাখ, গ্রামের ছেলে, ছোট্ট প্রবাস, কাউকে তো বদলায়, কর্মজীবী নারী, না দেখা আভাসে, লক্ষী, অভুক্তের উৎসবে, ছুটি, ভ্রষ্টতার বিচারে, একদিন দেখবি, ধর্ম ভীরুর গান, নারীমঞ্চ, আমি মরিনি, বাবা আছে, ইত্যাদি।

 

জার্নালিজমের মাঝে দিয়ে তার কলমে উঠে এসেছে সংবাদ, জীবনী, সমসাময়িক বিষয়, বহির্বিশ্বের তথ্য, সমালোচনা ও প্রতিবেদন। আন্তর্জাতিক কলামে নিয়মিত শিরোনাম হয়ে উঠে এসেছে তার সেসকল লেখা। যেমন : রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশ : সুস্পষ্ট অবস্থান (পর্ব আকারে), বিশ্ব রাজনীতির ত্রিমুখি সংঘর্ষ ও আমেরিকা, কাছ থেকে দেখা আমেরিকার নির্বাচন, ত্রিমাত্রিক সমীকরণ : বিশ্বযুদ্ধ সহ বহু আলোচনায় থাকা বিশ্বচিত্র। একই সাথে বর্তমান প্রেক্ষেপটে লিখেছেন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সামাজিক জাগরণ চাই, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও সমাধান, হিন্দু ও মুসলিম কি কখনো ভাই হয়?, আমি নবীন মুখপাধ্যায় সহ জনসচেতনতা মূলক অসংখ্য লেখা।

 

আমার ছোটবেলার খেলা, মরার আগে কয়ডা ভাত দে, প্রতিজ্ঞা, আঁচল, বাবা আছে এমন বহু স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি ও কবিতা সমগ্র ইউটিউবে দিয়েছে অনন্য রকম উপহার। মরার আগে কয়ডা ভাত দে কবিতাটি নিজে আবৃত্তি করে মিলিয়নের অধিক ভিউয়ারের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার শির্ষে উঠে গেছেন কয়েকদিনের মধ্যেই। এছাড়া তার স্বরচিত প্রচুর কবিতা আবৃত্তি রয়েছে অনলাইনে যা শ্রোতামুগ্ধ হয়েছে।

 

২০১৬ সালে দেশে এসে নিজের গ্রামের বাড়িতে আয়োজন করেছেন আলফাডাঙ্গা আন্তঃ উপজেলা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং আলফাডাঙ্গা এ জেড পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠান। শিক্ষকের মর্যাদা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবদান, ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে গোপনে জড়িয়ে ছিলেন প্রবাসী হবার পর হতেই।

 

নবীন লেখক সৃষ্টিটিতে রেখেছেন মুখ্য ভূমিকা। এই গুণী কবি ও লেখকের প্রথম গল্প সংকলন “মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে” শাহ্জী প্রকাশনী, স্টল নং ৪৪৯, একুশে বইমেলা ২০২৪ এ বের হলো। তার আরো ডজন খানেক পান্ডুলীপি পরপর প্রকাশের অপেক্ষায়।

 

গল্প সংকলন “মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে” বইটি নিয়ে লেখকের মন্তব্য

কখনো দ্রাঘিমাংশের শেষ নীলোৎপল দেখতে বৈমানিক হয়ে ককপিটের ইয়োক ধরেছি। আমেরিকার সুদূর আকাশ হতে তাকিয়ে থেকেছি মনের গহীনে জমে থাকা শৈশবের বালুচরে। মূল পেশার চেয়ে লেখক হিসেবে পরিচয় পেতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। “মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে” গল্প সংকলনটির প্রতিটি গল্প আমার নিজের কিংবা আমার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত কিছু মানুষের হুবহু বাস্তব ঘটনা।

 

মাটির মানুষকে আকাশের কবি হতে সেকেন্ড লাগে না। আর আকাশের ইন্সট্রুমেন্টাল মানুষ (বৈমানিক) হয়ে মাটির মানুষের কাছে ফিরে যেতে যথেষ্ট মেধা, ধৈর্য, চৌকস, সময়ের সিদ্ধান্ত ও স্বপ্নহীন একটা বাস্তবিক মাথা ও কলিজা লাগে। কারণ আকাশ চিরে তাকে চলতে হয়। তাই কলমের ছোঁয়ায় সাহিত্য ও টেকনোলজির একটা মিলন আনার চেষ্টা করেছি মাত্র।

বইটি ১৮টি ছোট গল্প নিয়ে একটি গল্প সংকলন। এতে টক-ঝাল-মিষ্ট থাকবে। বৈমানিক জীবনে অভিজ্ঞতা থাকবে। থাকবে প্রেম আর খুনসুটিতে ভরা ভালোবাসার খন্ডচাঁদ। শিক্ষকের মর্যাদা, বন্ধুত্বের পুরু সীমানার টান, দেশপ্রেম, প্রবাস জীবন, শেকড় এবং পরিবার নিয়ে থাকবে তোলপাড় করা গাড় কালির কাব্যরূপ বহরতা। থাকবে আমেরিকা জীবনের অভিজ্ঞতার এক ভিন্নকথা। আরো না বলা বহুকথার এই বইটি সংগ্রহ করলে আপনি কোনমতেই যে চমকে যাবেন না, তা কিন্ত বলতে পারবেন না।

 

খড়গের কান ঘেষে খরতার নিঃশেষে প্যাঁচিয়ে ওঠা স্বপ্নেরা নিঃশেষ হয় কিন্তু সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের প্রয়োজন ফুরোয় না। আমার কলম ধরার যাদুকর আমার বাবা জনাব মোঃ আমীর হোসাইন শিকদার ও ছটফট করা ভালবাসার ডাকনাম আমার জন্মদাত্রী মা, যাঁদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। যাঁর কথায় সবচেয়ে বেশী অনুপ্রাণিত হয়েছি তিনি আমার বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক শ্রী কবিকূসুম রায় চক্রবর্তী।

 

বেড়ে বেড়ে কখনোই অসাধারণ হতে চাই না বরং মিহি হয়ে মিলিয়ে থাকতে চাই সবার সাথে সাধারণ হয়ে। সম্মোহিত জন্মভূমির ঋণ শোধ দেবার অনুভূতি নিয়ে একে একে কলমের আঁচড়ে কাগুজে মলাটে রূপ দিলাম।

যে কলমে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুজন নিঃর্স্বার্থ রক্তীয়জনার ঝরাবাক্যের কথা কয়, যে কলমে মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের চোখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার দাবি আওড়ায় এবং সেই কলমে দীর্ঘ সময়ে জমে থাকা ডজনখানিক পান্ডুলিপির প্রথম এই প্রকাশটি যদি পাঠক প্রিয়তা পায় তবে কথা দিলাম, ধারাবাহিকতায় আবারও কলম বাড়াবো। আশাকরি বইটি ভালো লাগবে। আর আমার ভালো লাগবে যদি পাঠকদের উৎসাহে আমার মনে কাঁপন ধরে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

‘মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে’ বইমেলায় বৈমানিক মাহফুজুল আলমের বই

আপডেট টাইম : ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
ডেস্ক রিপোর্ট :

একের পর এক প্রামান্যচিত্রে যার নেপথ্যকন্ঠ শ্রোতাদের মন কেড়েছে চুম্বকের মত, তিনি মাহফুজুল আলম। একজন লেখক, কবি, গল্পকার, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার, সঞ্চালক, নেপথ্য কন্ঠশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, সামাজিক সংগঠক। ফরিদপুরের এই কৃতি সন্তান তার মাতৃভূমির কাছে চির ঋণি হয়ে আছেন বলে মনে করেন। আর আমরা মনে করি তিনি বাংলা সাহিত্যর পাঠকের জন্য তার লেখুনি দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নেবেন।

 

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই বাবার চাকুরীসুত্রে বর্তমান নরসিংদী জেলার পলাশের বাসায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার বুড়াইচ গ্রাম। তবে বেড়ে ওঠেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরের বাড়িতে। যার পিতার নাম শিকদার মোঃ আমীর হোসাইন এবং মাতা ফিরোজা বেগম। তার শৈশবের শিক্ষা শুরু হয় ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আরিফুজ্জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।

 

কর্ম ও পারিবারিক জীবন
বর্তমান পেশা বৈমানিক হলেও শুরুতে যোগ দেন বিমান বাহিনীর মেইনটেন্যান্স শাখায়। তিনি স্বস্ত্রীক আমেরিকা প্রবাসী হন ২০১০ সালে। বর্তমানে তিনি ৩ পুত্র সন্তানের জনক। প্রবাসে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রথম যাত্রা শুরু করেলেও পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশী প্রথম বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক হিসেবে আমেরিকার মাটিতে গড়ে তোলেন পাইলট প্রশিক্ষণ একাডেমি। নিজের দেশেও খুলেছিলেন এর একটি শাখা।

 

সাহিত্য জীবন
মাহফুজুল আলমের স্কুল জীবন থেকেই অভিনয়, কবিতা, আবৃত্তি ও লেখালেখির প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিলো। তবে একটু লাজুক হওয়ার কারণে স্কুল জীবনে নিজ প্রতিভার আলো বিকশিত হতে দেননি। কিন্তু প্রতিভাকে তিনি ঢেকেও রাখতে পারেননি। যা বিমান বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তার লুকিয়ে থাকা প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে থাকে। ঘাটি পর্যায়ে কবিতা, আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও অভিনয়ের সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি একজন নিয়মিত আবৃত্তিকার ও উপস্থাপক হিসেবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে এবং বাংলাদেশ বেতারের “দূর্বার” অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন। প্রবাসী হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। নিয়মিত আর্টিক্যাল লিখতেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমস, মিলান বার্তা (ইউরোপ), বিডি ইউরোপ২৪.কম (ইতালী), বাংলা স্ট্যাটমেন্ট (লন্ডন) সহ আরো কিছু পত্রিকায় ।

 

দূর প্রবাসে থেকেও জন্মভূমির জন্য মন কেঁদে ওঠে মাহফুজুল আলমের। স্মৃতির পাতায় বারবার ফিরে আসে দেশে থাকা স্বর্ণময় দিনের প্রতিচ্ছবি। শৈশবে সাথে জড়িয়ে থাকা সময়গুলি ফিরে পেতে চান সময়েরই ভিড়ে। এই ফিরে পাওয়ার আগ্রহ থেকেই সংযুক্তি ঘটে অনলাইন জগতের লেখালেখিতে। ইর্ষান্বিয় জনপ্রিয়তায় তথ্যচিত্রের আড়ালে কন্ঠ ও সঞ্চালক হিসেবে নিজেই গড়ে তোলেন “আলফাডাঙ্গা লেখক সমাজ” পরবর্তীতে “শব্দধারা”র মত জনপ্রিয় ও সচ্ছ সাহিত্য চর্চার একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। যা প্রবাস থেকে নিজেই পরিচালনা করে থাকেন। প্রবাসের আড়ালে থাকা মানুষটি নিজ মাটির টান ও প্রতিভাগুণে হয়ে ওঠেন বাংলার সাহিত্য রসিক। লিখতে শুরু করেন স্কুল জীবনের বর্ণিল দিনের গল্প । তার লেখা পাঠকদের কখনো কাঁদিছে আবার কখনো মৃদু স্মৃতির ঝলকানিতে হাসিয়েছে। এ পর্যন্ত তাঁর লেখা প্রবন্ধ সংখ্যা প্রায় পঁচিশটি। জনপ্রিয়তায় থাকা প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে বাংলা বানানে প্রচলিত ভুল, বিশ্বাস করুণ আমার দাড়ি থাকলেও আমি জঙ্গি নই, চিত্তের সামনে বিত্ত যখন ভৃত্য, নিজে কি করছেন?, বেরসিক পাঠক ও সিঙ্গাড়ার গল্প, এঁটো হাতের পেছনের গল্প ইত্যাদি।

 

ছোট গল্পকার হিসেবে তিনি সবচেয়ে সফল। প্রায় শতাধিক ছোট গল্প উঠে এসেছে তার কলমে। একাধিক জনপ্রিয় ছোট গল্পে তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন তার জনপ্রিয়তা। যার মধ্যে রয়েছে বকশিস, ভরা বর্ষার শ্রোতের, কোন এক মায়ের খোঁজে, ছোট্ট হাতের অনামিকা, সখী ভালোবাসা কারে কয়?, কাকীমা, প্যাসেঞ্জার লাউন্সে, যে গল্পে প্রাণ ছিলো, এক দিনের ছিন্নপত্র, বাবা একটি প্রশ্ন করবো?, এরপর যা হলো, একটি নিঃশব্দের গল্প, ছোট্ট হিরো, কাব্য জলসা নৈবেদ্য, প্রবাস জীবনের কান্না, এক জোড়া চুড়ির প্রতিবিম্ব, সে আবেদন পত্রে যা ছিল না, আমার আর ভালো হয়ে থাকা হলো না, অঙ্কুরিত বাবার চোখে, মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে, শেকড় ইত্যাদি।

এমন কি সিরিজ আকারে গল্পেতেও তিনি প্রাণ দিয়েছেন সমান ভাবে। যেমন : আমার হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি (পর্ব ১ হতে ১৭), ভাইয়া (পর্ব ১ হতে ৪), আমারও তো দিন কেটে যায় (পর্ব ১ হতে ৪), বাবা (পর্ব ১ হতে ৩), সম্পর্ক (পর্ব ১ হতে ২৩ এবং চলমান..) ইত্যাদি।

মজার বিষয় হচ্ছে তার কলমে গল্প, প্রবন্ধ বা যে কোন লেখাই উঠে আসুক না কেন, সেটা সত্যি সত্যিই তার নিজের বা খুব কাছের কারো না কারো জীবনের হুবহু বাস্তব গল্প। তিনি বারবার প্রতিফলিত করেন তার জন্মভূমিকে ঘিরে থাকা সকল স্মৃতি।

 

কবিতা দিয়ে তার কলমের হাতে খড়ি হয়েছিলো। তার লেখা অসংখ্য কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কবিতা যেমন আঁচল, মুক্তি যুদ্ধোত্তর প্রজন্ম আমরা, প্রতিজ্ঞা, আমার সৃজন গাঁয়, একাকীত্বের সুখ, আমি যখন লাশ, কেবল পহেলা বৈশাখ, গ্রামের ছেলে, ছোট্ট প্রবাস, কাউকে তো বদলায়, কর্মজীবী নারী, না দেখা আভাসে, লক্ষী, অভুক্তের উৎসবে, ছুটি, ভ্রষ্টতার বিচারে, একদিন দেখবি, ধর্ম ভীরুর গান, নারীমঞ্চ, আমি মরিনি, বাবা আছে, ইত্যাদি।

 

জার্নালিজমের মাঝে দিয়ে তার কলমে উঠে এসেছে সংবাদ, জীবনী, সমসাময়িক বিষয়, বহির্বিশ্বের তথ্য, সমালোচনা ও প্রতিবেদন। আন্তর্জাতিক কলামে নিয়মিত শিরোনাম হয়ে উঠে এসেছে তার সেসকল লেখা। যেমন : রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশ : সুস্পষ্ট অবস্থান (পর্ব আকারে), বিশ্ব রাজনীতির ত্রিমুখি সংঘর্ষ ও আমেরিকা, কাছ থেকে দেখা আমেরিকার নির্বাচন, ত্রিমাত্রিক সমীকরণ : বিশ্বযুদ্ধ সহ বহু আলোচনায় থাকা বিশ্বচিত্র। একই সাথে বর্তমান প্রেক্ষেপটে লিখেছেন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সামাজিক জাগরণ চাই, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও সমাধান, হিন্দু ও মুসলিম কি কখনো ভাই হয়?, আমি নবীন মুখপাধ্যায় সহ জনসচেতনতা মূলক অসংখ্য লেখা।

 

আমার ছোটবেলার খেলা, মরার আগে কয়ডা ভাত দে, প্রতিজ্ঞা, আঁচল, বাবা আছে এমন বহু স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি ও কবিতা সমগ্র ইউটিউবে দিয়েছে অনন্য রকম উপহার। মরার আগে কয়ডা ভাত দে কবিতাটি নিজে আবৃত্তি করে মিলিয়নের অধিক ভিউয়ারের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার শির্ষে উঠে গেছেন কয়েকদিনের মধ্যেই। এছাড়া তার স্বরচিত প্রচুর কবিতা আবৃত্তি রয়েছে অনলাইনে যা শ্রোতামুগ্ধ হয়েছে।

 

২০১৬ সালে দেশে এসে নিজের গ্রামের বাড়িতে আয়োজন করেছেন আলফাডাঙ্গা আন্তঃ উপজেলা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং আলফাডাঙ্গা এ জেড পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠান। শিক্ষকের মর্যাদা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবদান, ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে গোপনে জড়িয়ে ছিলেন প্রবাসী হবার পর হতেই।

 

নবীন লেখক সৃষ্টিটিতে রেখেছেন মুখ্য ভূমিকা। এই গুণী কবি ও লেখকের প্রথম গল্প সংকলন “মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে” শাহ্জী প্রকাশনী, স্টল নং ৪৪৯, একুশে বইমেলা ২০২৪ এ বের হলো। তার আরো ডজন খানেক পান্ডুলীপি পরপর প্রকাশের অপেক্ষায়।

 

গল্প সংকলন “মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে” বইটি নিয়ে লেখকের মন্তব্য

কখনো দ্রাঘিমাংশের শেষ নীলোৎপল দেখতে বৈমানিক হয়ে ককপিটের ইয়োক ধরেছি। আমেরিকার সুদূর আকাশ হতে তাকিয়ে থেকেছি মনের গহীনে জমে থাকা শৈশবের বালুচরে। মূল পেশার চেয়ে লেখক হিসেবে পরিচয় পেতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। “মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে” গল্প সংকলনটির প্রতিটি গল্প আমার নিজের কিংবা আমার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত কিছু মানুষের হুবহু বাস্তব ঘটনা।

 

মাটির মানুষকে আকাশের কবি হতে সেকেন্ড লাগে না। আর আকাশের ইন্সট্রুমেন্টাল মানুষ (বৈমানিক) হয়ে মাটির মানুষের কাছে ফিরে যেতে যথেষ্ট মেধা, ধৈর্য, চৌকস, সময়ের সিদ্ধান্ত ও স্বপ্নহীন একটা বাস্তবিক মাথা ও কলিজা লাগে। কারণ আকাশ চিরে তাকে চলতে হয়। তাই কলমের ছোঁয়ায় সাহিত্য ও টেকনোলজির একটা মিলন আনার চেষ্টা করেছি মাত্র।

বইটি ১৮টি ছোট গল্প নিয়ে একটি গল্প সংকলন। এতে টক-ঝাল-মিষ্ট থাকবে। বৈমানিক জীবনে অভিজ্ঞতা থাকবে। থাকবে প্রেম আর খুনসুটিতে ভরা ভালোবাসার খন্ডচাঁদ। শিক্ষকের মর্যাদা, বন্ধুত্বের পুরু সীমানার টান, দেশপ্রেম, প্রবাস জীবন, শেকড় এবং পরিবার নিয়ে থাকবে তোলপাড় করা গাড় কালির কাব্যরূপ বহরতা। থাকবে আমেরিকা জীবনের অভিজ্ঞতার এক ভিন্নকথা। আরো না বলা বহুকথার এই বইটি সংগ্রহ করলে আপনি কোনমতেই যে চমকে যাবেন না, তা কিন্ত বলতে পারবেন না।

 

খড়গের কান ঘেষে খরতার নিঃশেষে প্যাঁচিয়ে ওঠা স্বপ্নেরা নিঃশেষ হয় কিন্তু সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের প্রয়োজন ফুরোয় না। আমার কলম ধরার যাদুকর আমার বাবা জনাব মোঃ আমীর হোসাইন শিকদার ও ছটফট করা ভালবাসার ডাকনাম আমার জন্মদাত্রী মা, যাঁদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। যাঁর কথায় সবচেয়ে বেশী অনুপ্রাণিত হয়েছি তিনি আমার বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক শ্রী কবিকূসুম রায় চক্রবর্তী।

 

বেড়ে বেড়ে কখনোই অসাধারণ হতে চাই না বরং মিহি হয়ে মিলিয়ে থাকতে চাই সবার সাথে সাধারণ হয়ে। সম্মোহিত জন্মভূমির ঋণ শোধ দেবার অনুভূতি নিয়ে একে একে কলমের আঁচড়ে কাগুজে মলাটে রূপ দিলাম।

যে কলমে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুজন নিঃর্স্বার্থ রক্তীয়জনার ঝরাবাক্যের কথা কয়, যে কলমে মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের চোখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার দাবি আওড়ায় এবং সেই কলমে দীর্ঘ সময়ে জমে থাকা ডজনখানিক পান্ডুলিপির প্রথম এই প্রকাশটি যদি পাঠক প্রিয়তা পায় তবে কথা দিলাম, ধারাবাহিকতায় আবারও কলম বাড়াবো। আশাকরি বইটি ভালো লাগবে। আর আমার ভালো লাগবে যদি পাঠকদের উৎসাহে আমার মনে কাঁপন ধরে।


প্রিন্ট