দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত হয়েছে সংসদ। এবার সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নির্বাচনের পালা। যাঁরা দলের মনোনয়ন পান, তাঁরাই হন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। এবার রাজশাহী থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় এক ডজন নেত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হবার আলোচনায় রয়েছেন। তাঁদের অনেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এবার আলোচনা ও পচ্ছন্দের শীর্ষে রয়েছেন মর্জিনা পারভিন।
স্থানীয়দের অভিমত, সাংগঠনিক দক্ষতা, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মানসিকতা বিবেচনা করে প্রার্থী দেয়া হলে মর্জিনার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছে মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইফফাত আরা কামাল ও শাহীন আক্তার রেনী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি মনোনয়ন চান। তবে তৃণমুলের ভাষ্য, মেয়র পরিবার থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি করা হলে রাজশাহীর রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র কায়েম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই তারা রাসিক মেয়র পরিবারের বাইরের কাউকে এখানে দেখতে চাই। এছাড়াও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে নতুন মুখ চাই।
অন্যদিকে রাজশাহীর বর্তমান সংরক্ষিত এমপি আদিবা আনজুম মিতা এবারও মনোনয়ন পেতে জোর তদবির করছেন। এ ছাড়াও এবার সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হতে চান রাজশাহী মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সালমা রেজা, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইফফাত আরা কামাল, সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আখতার মিতা, সহসভাপতি রোকসানা মেহেবুব চপলা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পূর্ণিমা ভট্টাচার্য, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নিঘাত পারভীনসহ জেলা ও মহানগরের আরও কয়েকজন নারী। এছাড়াও মালিহা জামান মালাও আছেন আলোচনায়। বর্তমানে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মর্জিনা পারভিন।
জানা গেছে, সুখী সমৃদ্ধ স্মার্ট স্বছন্দময়ী সদা হাস্যউজ্জল একটি মানুষ । যার নাম মর্জিনা পারভিন । উত্তর বঙ্গের অন্যতম আদর্শিক, পরিক্ষিত ও শ্রেষ্ঠ নারী নেতৃত্ব মর্জিনা পারভিন। রাজশাহীবাসীর প্রাণপ্রিয় নেত্রী রাজপথের লড়াকু ও সাহসী সম্মুখ যোদ্ধা তৃণমূল থেকে তিলে তিলে গড়ে উঠা আদর্শের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত মর্জিনা পারভিন । পারিবারিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । গতানুগতিক রাজনীতির স্রোতে তিনি কখানোই গা-ভাসিয়ে দেননি। সব সময় থেকেছেন মুল ধারার সঙ্গে এখানো রয়েছেন অবিচল। বিগত ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ও ২০০৫ থেকে অদ্যাবধি ২০২৪ সাল পর্যন্ত সভাপতি পদে আসীন রয়েছেন । তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এমনকি অনেক জায়গায় তাকে হাসতে হয় । এই হাসির আড়ালে যে কতো কান্না লুকিয়ে আছে কেউকি তা খোঁজে ? চরম অসুস্হতাকে হার মানিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে দলকে সংঘবদ্ধ করার জন্য সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসে দলীয় কর্মসূচি করেছেন, মিছিল-মিটিং আরও কত কী! এসব করতে যেয়েও কতবার অসুস্হ হয়েছেন।এখানে কর্মসূচি ওখানে কর্মসূচি দিন নাই রাত নাই একইভাবে দলের জন্য কাজ করে গেছেন ।
মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা মনে করে , তার পরিশ্রম বৃথা যাবে না , অবশ্যই আকাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হবে । তারুণ্য , পেরিয়ে যৌবনে শুধুই মিছিল আর পিকেটিং এর মধ্যে জীবন কাটিয়ে আজ বার্ধক্যে । অসুস্থ না হলে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি কখনো অনুপস্থিত থাকেনি । বিগত ২০০৮ এর নির্বাচনে রাজশাহী থেকে সংরক্ষিত আসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার তাকে এমপি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় নি । সে সময় দ্বিতীয় বারের মতো প্রয়াত জিন্নাতুন নেশা তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়া হয় । মর্জিনা পারভীনের মতো আদর্শিক, পরিক্ষিত ও ত্যাগী নেত্রী এখানকার সময়ে এদেশে খুঁজে পাওয়া বড় কঠিন । যিনি ২৪ ঘন্টায় জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন রাজনীতির কথা ভেবে তিনি সাংসারিক জীবনে যাননি , তিনি কোন চাকরি করেন নি । কখনও নিজের কথা ভাবেননি । কারো মতো লোভ লালসা ও নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নয় , একনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে মর্জিনা পারভীন রাজশাহীর সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হিসেবে যোগ্য প্রার্থী বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
ভালোবাসা টানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে একনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য, নিজের জীবনের সুখকে ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে এবং জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একনিষ্ঠভাবে দলের জন্য কাজ করে চলেছেন রাজশাহী মহিলা আওয়ামীলীগের তৃণমূল থেকে নেত্রী পর্যায়ের সকলের একই চিন্তাভাবনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদের পর রাজশাহী থেকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি হিসেবে রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন যোগ্য বাক্তি তার বিকল্প নাই বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন । তিনি ২০০৫ সাল থেকে এ যাবৎ সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ ছাড়া তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছাড়াও বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ।
মর্জিনা পারভীনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে জানা গেলো, জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে রাজশাহীর সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হওয়ার সুযোগ করে দিলে তিনি সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। এবং রাজশাহীবাসীর বিবিধ সমস্যা তুলে ধরতে পারবেন।মহিলা আওয়ামী লীগের অনেকেই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে অনেকেই এমপি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। যারা সরাসরি ভোটে এমপি হতে পারেননি, এমন অনেককে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি করার নজির রয়েছে। অনেকে মন্ত্রীও হয়েছেন। তাই তিনি মনে করেন , দলের নিকট সংরক্ষিত আসনের এমপি, হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন । দলীয় প্রধান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি তাকে যোগ্য মনে করেন ,তাহলে তাকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আশা রাখেন । তিনি রাজশাহীর সর্বস্তরের মহিলা ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চান । বাংলাদেশের পাশাপাশি রাজশাহী যেন এগিয়ে যেতে পারে তিনি সে লক্ষে কাজ করে যাবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষা করে রাজনীতির পথ পাড়ি দিবেন ।
মর্জিনা পারভীনের রাজনীতি শুরু হয় ১৯৮৬ সাল থেকে । তিনি ছাত্রী অবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার ইউসুফ আলী কলেজ শাখার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন । মজির্না পারভীনের পিতা প্রয়াত আবুল কাশেম ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা প্রয়াত সালেহা বেগম গৃহিনী। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবাকে পাক হানাদার বাহিনী ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করেন এবং হত্যার উদ্দেশ্যে তার পিতাসহ অন্যদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করলেও তিনি সৌভাগ্য ক্রমে বেঁচে যান । পরে সেখান থেকে পালিয়ে এসে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মর্জিনা পারভীনের পিতাকে হত্যা করতে না পেরে তার নানা ও নানার ভাইকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তার বড় ভাই প্রয়াত কায়েস উদ্দিন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।
মর্জিনা পারভীনের আরেক ভাই এ্যাড. আফসার আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। বড় বোন মাতুয়ারা বেগম গোমস্তাপুর উপজেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সেজো ভাই আব্দুল লতিফ রাজশাহী মহানগর কৃষকলীগের সহ-সভাপতি। ছোট ভাই মনিমুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লীগের সাবেক সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তার অন্যান্য আত্নীয় স্বজন সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।।পরবর্তীতে রাজশাহী শহরে এসে বোয়ালিয়া থানাধীন রাজারহাটা এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।রাজশাহী মহিলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার পর তিনি ২০০৫ সাল থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিগত ২০০৭- ২০০৮ সালে ১/১১ সরকার দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন।এ সময় মর্জিনা পারভিন রাজশাহী মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেশরত্ন ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং মুক্তির দাবীতে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।
প্রিন্ট