ফরিদপুরের সালথায় এক আদম ব্যবসায়ির খপ্পরে পড়ে চার যুবক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ঐ চার যুবক মালোশিয়াতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ীর নাম আতিক মোল্যা (৫০)। সে উপজেলার ফুলবাড়িয়া মধ্যপাড়ার মৃত কুটি গেদা মোল্লার পুত্র। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন যুবকের কাছ থেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অনেক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ঐ চার যুবক মালোশিয়াতে এবং দেশে তাদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই বিষয়ে সালথা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবার।
ভুক্তভুগী ঐ চার যুবকের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার মধ্য ফুলবাড়িয়া এলাকার ফেলু মোল্যার পুত্র আলমগীর মোল্যার কাছ থেকে কনস্ট্রাকশনে ভাল বেতনে কাজের কথা বলে প্রায় ৫লাখ টাকা নেয়। এরপর ৩/৪ মাস পর সাপ্লাই ভিসা দিয়ে মালোশিয়া পাঠায়। আতিক মোল্যার চাহিদামত ঘটি বাটি সব বিক্রি করে এবং চরা সুদে বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা যোগাড় করে দেয়। ৪মাস ধরে বিদেশ গেলেও কোন টাকা পাঠাতে পারছে না আলমগীর, প্রায় প্রতিদিন পাওনাদারেরা বাড়িতে হাজির হয়। চার মেয়ে নিয়ে আলমমগীরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মানবেতর জীবনযাপন করছে। অপরদিকে কাজ না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে কোন রকমে মালেশিয়াতে আদম ব্যবসায়ী আতিকের দিকে তাকিয়ে আছে আলমগীর।
স্থানীয় অপর এক যুবক সোনা মিয়ার কাছ থেকে ৫লাখ টাকা নিয়ে ১বছর ঘুরিয়ে মালোশিয়াতে পাঠায় আতিক। এনজিও থেকে লোন ও সুদে টাকা জোগাড় করে সে বিদেশের স্বপ্ন দেখে। বিদেশের মাটিতে ৬মাস থাকলেও কোন কাজ৷ জোটে নাই তার ভাগ্যে। দেনাদার রা বাড়িতে ভির করায সোনা মিয়ার স্ত্রী বাড়ি ছাড়া। ঐদিকে সোনা মিয়া ৬মাস যাবত কোন কাজ না পেয়ে অন্য প্রাবসিদের কাছ থেকে ধার দেনা করে চলছে। আতিক কে কিছু বললেই বলে সামনে মাস থেকে কাজে দিবে।
জীবনে অনেক বছর প্রবাসে কাটানো হেমায়েতকে মালোশিয়ার বিখ্যাত প্যাটোনাস কোম্পানিতে কাজ দেওয়ার কথা বলে ৫লাখ টাকা নিয়ে ৫/৬ মাস ঘুরিয়ে প্রবাসে পাঠায় আতিক মোল্যা। ভাগ্য বদলের আশায় প্রবাসে পাড়ি জমানো এই যুবক ৫মাস যাবত বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সাপ্লাই ভিসা দেওয়ায় কোন কাজ নাই তার। মাঝে মধ্যে কোন কাজ করলেও তার বেতন চাইতে পারেন না তিনি। দেশে গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন পার করছে। ভাল কাজ অথবা দেশে ফেরত আসতে চান হেমায়েত। সামিউল নামের অপর এক যুবকের কাছ থেকে কোম্পানির ভিসা দেওয়ার কথা থাকলেও তাকেও সাপ্লাই ভিসা দেওয়া হয়। বর্তমানে সামিউল ও তার পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
এছাড়াও স্থানীয় মোমরেজ শেখ, বজলু সর্দার, ইয়াছিন, সজিবের মত আরও কিছু নিরিহ যুবকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের প্রবাসে পাঠাতে পারছেন না আতিক মোল্যা। আবার যারা বিদেশ আছে তাদেরও ভাল কাজ নাই। স্থানীভাবে আতিক মোল্যা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার কোন কাজের বিরোধিতা করে না। কেউ কিছু বললে তাকে মামলা হামলার হুমকি দিচ্ছে, আবার অনেক মেরে ফেলার হৃমকি দেওয়ার কারনে চুপ করা বন্ধ করেছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী আতিক মোল্যা বলেন, আমার মাধ্যমে তারা বিদেশে যায়, কম্পানি তাদের পাসপোর্ট রেখে ফটোকপি দিয়েছে। কাজ না থাকায় কম্পানি তাদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। কোন প্রবাসীর পরিবারের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। আমি আরও তাদের পরিবারকে চাল ডাল কিনে দিচ্ছি।
সালথা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান (পিপিএম) বলেন, এই বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট