এদিকে আগামী সপ্তাহ তথা ১৩-১৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি জানানো হয়েছে ইসির তরফে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয় গুছিয়ে ভোটের সম্ভাব্য দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে ডাকা হবে কমিশন সভা। টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করবেন সিইসি। বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনি সরঞ্জাম ইতোমধ্যে জেলা নির্বাচন কার্যালয়গুলোয় পৌঁছে গেছে। আগামীকালের মধ্যে অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাডও পাঠানো হবে। সব ঠিক থাকলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ভোট শেষ করতে চায় ইসি। সেজন্য এখন সিইসির ভাষণ প্রস্তুতি ও নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছে ইসি।
সংসদ নির্বাচনের বেশ কিছু সম্ভাব্য তারিখ ধরেই নির্বাচনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন। ইসিসূত্র জানিয়েছেন, তফসিল নিয়ে দুই ধরনের চিন্তা রেখেছে ইসি। প্রথম তফসিল দিয়ে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তা আবারও পরিবর্তন করা হতে পারে। এজন্য ভোটের বেশ কয়েকটি তারিখ চিন্তায় রেখেছে কমিশন। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ তথা ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ; এ ক্ষেত্রে এ তারিখ আবার পরিবর্তন হতে পারে। এ ছাড়া ২ অথবা ৩ জানুুয়ারি; ৭ অথবা ৮ জানুয়ারি এবং ৯ অথবা ১১ জানুয়ারিও ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ রাখার আলোচনায় রয়েছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভার ওপর। কমিশন সভায় নতুন তারিখও নির্ধারণ হতে পারে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের তারিখ রেখে নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইতোমধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে প্রস্তুতিমূলক সব কাজ প্রায় শেষের দিকে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব, অধিদফতর/সংস্থার কর্ণধারদের সফঙ্গও সভা করা হয়েছে। সবাইকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে; সবাই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার ব্যপারে আশ্বাসও দিয়েছেন। বিগত ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে ইসির প্রস্তুতি অবহিত করা হয়েছে, পাশাপাশি দলগুলোর পরামর্শ ও মতামত কমিশন শুনেছে।
তিনি জানান, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে যা যা দরকার সবই করা হচ্ছে; সবাইকে ভোটে অংশ নেওয়ার আহ্বান থাকছে সব সময়। ভোটারদের জন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে কমিশন আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকবে। আহসান হাবিব খান বলেন, ‘দলগুলোর প্রতি আহ্বান থাকবে মতভেদ, মতানৈক্য নিরসন করে ভোটে আসুন। নির্বাচন কমিশন সম্মানিত ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণে সর্বদাই গুরুত্ব দিয়ে আসছে এবং ইনশা আল্লাহ সুন্দর একটা নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর আমরা।’
তফসিল ঘোষণার আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে সংলাপে বসেছিল ইসি। বিএনপিসহ সমমনারা তাতে যোগ দেয়নি। যেসব দল যোগ দিয়েছে, তাদেরও অনেকের কথায় ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি এসেছে। কিন্তু সিইসি আগের মতোই দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শনিবার সেই সংলাপের শেষে কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর বিবদমান সংকট নিরসনে নির্বাচন কমিশনের কোনো ম্যান্ডেট নেই। দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকটের সমাধান করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। সময়সীমা সংবিধানে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের নির্বাচন করতে হবে। ইসির সামনে, পেছনে, পাশে খুব বেশি স্পেস নেই।’
সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন শেষ করতে হবে কমিশনকে। সেই ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে ১ নভেম্বর। আর নির্ধারিত পদ্ধতিতে (দলীয় সরকারের অধীনে) ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনে) এ নির্বাচনের আয়োজন করতে কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
নতুন দল : বিএনএম ও বিএসপি নামে দুটি নতুন দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয় আগস্টে। সবশেষ একাদশ সংসদে নিবন্ধিত ছিল ৩৯টি; পরে আদালতের আদেশে ৩টি (বাংলাদেশ জাসদ, ইনসানিয়াত বিপ্লব, তৃণমূল বিএনপি) নিবন্ধন পায়। এখন নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪; যারা সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবে। নির্বাচন কমিশন আসনভিত্তিক ভোটার তালিকাও প্রকাশ করেছে নভেম্বরে। দেশে মোট ভোটার এখন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ; ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী এবং ৮৫২ জন হিজড়া। খসড়া ভোট কেন্দ্রের তালিকা ১৬ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি হয় ১১ সেপ্টেম্বর। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা এবার ৪২ হাজার ১০৩টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
প্রার্থী হতে যা লাগবে : সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সরাসরি মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও দাখিল করা যাবে। পাশাপাশি অনলাইনেও সুযোগ রাখা হবে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে চাইলে ইসির ওয়েবসাইটের সংশ্লিষ্ট লিঙ্কে প্রবেশ করে (পোর্টাল) রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। নিবন্ধন শেষ হওয়ার পর পোর্টালে লগ ইন করে মনোনয়নপত্র পূরণ ও দাখিল করতে হবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বা সম পদাধিকারীর স্বাক্ষরে প্রত্যয়ন দিতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকার ১% ভোটারের সমর্থন তালিকা দিতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতঃপূর্বে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে দলিলাদি দিতে হবে।
প্রার্থীদের জামানত হিসেবে ২০ হাজার টাকা, হলফনামায় ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে আটটি তথ্যসংবলিত দলিলাদি দিতে হবে। আয়ের উৎস, সম্পদ, দায়, আয়ব্যয় বিবরণীও দিতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে আয়কর রিটার্নের কাগজপত্র। নিবন্ধিত দলের দলীয় প্রার্থীর দলের মনোনয়ন লাগবে। এ নির্বাচনের প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয়সীমা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। প্রার্থী বা তার এজেন্টের নির্ধারিত অ্যাকাউন্টের বাইরে অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে এ খাতে ব্যয় করা যাবে না।