ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শালিখায় ৫৩তম শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত Logo রাজশাহীতে টেন্ডার বাক্স লুটের ঘটনায় ‘মিথ্যা অপপ্রচারের’ অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন Logo রাজশাহী গোদাগাড়ীতে শ্রীপাঠ খেতুরী ধার্মের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ, ট্রাস্ট কমিটির পদত্যাগের দাবি Logo কালিয়াকৈরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ Logo ভেড়ামারায় ৪টি ইটভাটায় অভিযান! ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় Logo পাংশায় ৫৩তম জাতীয় স্কুল মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত Logo রাজাপুরে মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা Logo রাজাপুর বাশার হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন Logo খোকসা মডেল টাউনে লাশ উদ্ধারের ৪৮ ঘন্টার মাথায় ২ আসামী আটক ও ভ্যান উদ্ধার Logo আ’ লীগের স্টাইলে লুটপাটের রাজনীতি করছেন বিএনপির দুই নেতা
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সবজি কিনতেই পকেট ফাঁকা

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র অফিসার তারিকুল ইসলাম। শুক্রবার ছুটি থাকায় এক হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন সপ্তাহের বাজার করতে। দুই কেজি আলু ১২০ টাকা, বাঁধাকপি এক কেজি ৬০, মূলা এক কেজি ৬০, কাঁচা মরিচ ২৫০ গ্রাম ৫০ টাকা, পেয়াজ এক কেজি ৯০ টাকা, রসুন ৫০০ গ্রাম নিয়েছেন ১১০ টাকা দিয়ে। মাছের বাজারে গিয়ে দেখেন দেশী প্রজাতির শিং, শোল, কই, বাইন মাছসহ নদীর মাছের প্রতি কেজির মূল্যে মাঝিরা হাকাচ্ছেন প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। দরাদরি করে এককেজি দেশীয় মাছ কিনতে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখতে পান পকেটে মাত্র ৫০০ টাকা অবশিষ্ট আছে। সবজির কিনেই পকেট ফাঁকা হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে দেশী মাছ ফেরৎ দিয়ে চাষের রুই মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে হতাশ হয়ে বাড়িতে বাসায় ফিরেছেন। কয়েক মাস ধরেই তার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।

শুক্রবার আলফাডাঙ্গা বাজারে কথা হয় তাঁর মতো কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেছেন, আয় না বাড়লেও খরচ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। যে কারণে দেশী মাছ-মাংস বাদ পড়েছে তাদের তালিকা থেকে। সবজি কিনতেই পকেট ফাঁকা হয়ে পড়েছে তাদের।

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার কুসুমদী গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক আকরাম হোসেন তালুকদার বলেন, সবকিছুর দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে আগের তুলনায় শাকসবজি ও মাছ কেনা অর্ধেকে নেমেছে। আলু এখন ৬০টাকা কেজি ব্যববায়ীরা বলেছে আলুর দাম আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে।

বাকাইল গ্রামের ছালে বেগম বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমির কচু ও চাষ করা সবজি দিয়ে চলছে সংসার।

এ অঞ্চলের অর্ধেকও তরিতরকারি তারা কিনতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে দাম নিয়ন্ত্রণের যেন কেউ নেই। সবজি দোকানিরা বলছেন আমদানি না থাকায় বেড়েছে দাম।

আলফাডাঙ্গায় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি আলু ৬০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ৮০ টাকা,পটোল ৬০ ,করলা ৮০, ঢ্যাড়শ ৬০, ধুন্দল ৫০,বাঁধাকপি ৬০, ফুলকপি ১২০, মরিচ ২০০,বরবটি ১০০, মিষ্টিকুমড়া ৫০, পেঁয়াজ ১০০, রসুন, ২২০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ আকারভেদে ৬০ থেকে একশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম পেশায় ভ্যানচালক। তিনি জানান, চারজনের সংসার তাঁর। দিনে গড়ে চারশ টাকা আয় করেন। দিনে যা আয় করেন তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কেনার পর আর সবজি কিনতে পারছে না। এক কেজি আলু ৬০ টাকা। এভাবে চলা সম্ভব না। খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। আক্ষেপ করে বলেন, মাছ-মাংস কতদিন খান তা মনে নেই।

সবজির দাম বাড়ার কথা জানান স্থানীয় সবজি বিক্রেতা ফারুক হোসেন মিয়া। তিনি দাবি করেন, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। শীতাকালিন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে।

সব ধরনের মাছ-মাংসের দামও বেড়েছে। আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম হলেও মাছ ধরা পড়ছে না। নদীর মাছ প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষকরা ছোট রুই,মাঝারি সাইজের কাতলা,সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও ব্রিগেট মাছ দুই মাস ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত। এখন ৩০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। ১৫০ টাকার পাঙ্গাশ মাছ এখন ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ ব্যবসায়ী পবন দাশ বলেন, আমাদের স্থানীয় ভাবে মাছের জোগান কম। দেশী মাছ সামান্ন কিছু আসলেও অনেক দামে বিক্রি হয়। চাষ করা মাছ আনা হয় খুলনা-বাগেরহাটসহ অন্য জেলা থেকে। পাঙ্গাশ মাছ আনা হয় ময়মনসিংহ জেলা থেকে। যাতায়াত খরচ বেশি হওয়াতে বেশি দামে বিক্রি করতে হয় ।

গত দুই মাসের তুলনা করলে কাঁচাবাজারের শাকসবজির দাম প্রায় দিগুন হয়েছে বলে জানান আলফাডাঙ্গা সদর বাজার সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুদ্দু মিয়া। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ সময় শাকসবজির দাম কিছুটা বাড়ে। এখন বাজারে বিক্রি হওয়া শাকসবজির প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি জেলার বাহিরে থেকে আসে। এ জন্য দাম বেশি। তবে শীতকালিন সবজি ইতোমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। আগের তুলনায় অনেক তরকারির দাম কমেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তরকারির দাম কমে যাবে।

শাকসবজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক বলেন, বাজার তদারকি করে দ্রæত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শালিখায় ৫৩তম শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

সবজি কিনতেই পকেট ফাঁকা

আপডেট টাইম : ০৭:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩
মোঃ ইকবাল হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র অফিসার তারিকুল ইসলাম। শুক্রবার ছুটি থাকায় এক হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন সপ্তাহের বাজার করতে। দুই কেজি আলু ১২০ টাকা, বাঁধাকপি এক কেজি ৬০, মূলা এক কেজি ৬০, কাঁচা মরিচ ২৫০ গ্রাম ৫০ টাকা, পেয়াজ এক কেজি ৯০ টাকা, রসুন ৫০০ গ্রাম নিয়েছেন ১১০ টাকা দিয়ে। মাছের বাজারে গিয়ে দেখেন দেশী প্রজাতির শিং, শোল, কই, বাইন মাছসহ নদীর মাছের প্রতি কেজির মূল্যে মাঝিরা হাকাচ্ছেন প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। দরাদরি করে এককেজি দেশীয় মাছ কিনতে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখতে পান পকেটে মাত্র ৫০০ টাকা অবশিষ্ট আছে। সবজির কিনেই পকেট ফাঁকা হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে দেশী মাছ ফেরৎ দিয়ে চাষের রুই মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে হতাশ হয়ে বাড়িতে বাসায় ফিরেছেন। কয়েক মাস ধরেই তার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।

শুক্রবার আলফাডাঙ্গা বাজারে কথা হয় তাঁর মতো কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেছেন, আয় না বাড়লেও খরচ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। যে কারণে দেশী মাছ-মাংস বাদ পড়েছে তাদের তালিকা থেকে। সবজি কিনতেই পকেট ফাঁকা হয়ে পড়েছে তাদের।

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার কুসুমদী গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক আকরাম হোসেন তালুকদার বলেন, সবকিছুর দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে আগের তুলনায় শাকসবজি ও মাছ কেনা অর্ধেকে নেমেছে। আলু এখন ৬০টাকা কেজি ব্যববায়ীরা বলেছে আলুর দাম আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে।

বাকাইল গ্রামের ছালে বেগম বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমির কচু ও চাষ করা সবজি দিয়ে চলছে সংসার।

এ অঞ্চলের অর্ধেকও তরিতরকারি তারা কিনতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে দাম নিয়ন্ত্রণের যেন কেউ নেই। সবজি দোকানিরা বলছেন আমদানি না থাকায় বেড়েছে দাম।

আলফাডাঙ্গায় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি আলু ৬০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ৮০ টাকা,পটোল ৬০ ,করলা ৮০, ঢ্যাড়শ ৬০, ধুন্দল ৫০,বাঁধাকপি ৬০, ফুলকপি ১২০, মরিচ ২০০,বরবটি ১০০, মিষ্টিকুমড়া ৫০, পেঁয়াজ ১০০, রসুন, ২২০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ আকারভেদে ৬০ থেকে একশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম পেশায় ভ্যানচালক। তিনি জানান, চারজনের সংসার তাঁর। দিনে গড়ে চারশ টাকা আয় করেন। দিনে যা আয় করেন তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কেনার পর আর সবজি কিনতে পারছে না। এক কেজি আলু ৬০ টাকা। এভাবে চলা সম্ভব না। খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। আক্ষেপ করে বলেন, মাছ-মাংস কতদিন খান তা মনে নেই।

সবজির দাম বাড়ার কথা জানান স্থানীয় সবজি বিক্রেতা ফারুক হোসেন মিয়া। তিনি দাবি করেন, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। শীতাকালিন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে।

সব ধরনের মাছ-মাংসের দামও বেড়েছে। আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম হলেও মাছ ধরা পড়ছে না। নদীর মাছ প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষকরা ছোট রুই,মাঝারি সাইজের কাতলা,সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও ব্রিগেট মাছ দুই মাস ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত। এখন ৩০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। ১৫০ টাকার পাঙ্গাশ মাছ এখন ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ ব্যবসায়ী পবন দাশ বলেন, আমাদের স্থানীয় ভাবে মাছের জোগান কম। দেশী মাছ সামান্ন কিছু আসলেও অনেক দামে বিক্রি হয়। চাষ করা মাছ আনা হয় খুলনা-বাগেরহাটসহ অন্য জেলা থেকে। পাঙ্গাশ মাছ আনা হয় ময়মনসিংহ জেলা থেকে। যাতায়াত খরচ বেশি হওয়াতে বেশি দামে বিক্রি করতে হয় ।

গত দুই মাসের তুলনা করলে কাঁচাবাজারের শাকসবজির দাম প্রায় দিগুন হয়েছে বলে জানান আলফাডাঙ্গা সদর বাজার সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুদ্দু মিয়া। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ সময় শাকসবজির দাম কিছুটা বাড়ে। এখন বাজারে বিক্রি হওয়া শাকসবজির প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি জেলার বাহিরে থেকে আসে। এ জন্য দাম বেশি। তবে শীতকালিন সবজি ইতোমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। আগের তুলনায় অনেক তরকারির দাম কমেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তরকারির দাম কমে যাবে।

শাকসবজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক বলেন, বাজার তদারকি করে দ্রæত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


প্রিন্ট