দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বহুমুখী ও নিবিড় করার বার্তা নিয়ে আগামীকাল রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তার ২৪ ঘণ্টার এ সফরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণ বিষয়ে একটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে মহাকাশে ঢাকার সঙ্গী হতে যাচ্ছে প্যারিস। সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে। এর মধ্য দিয়ে ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। এরপর গত বছরের শুরুর দিকে দ্বিতীয় আরেকটি স্যাটেলাইটের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করা হয়েছিল। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের জন্য বিশেষ চিপস আমদানি করতে না পারায় সেই সমঝোতার কোনো অগ্রগতি হয়নি। এদিকে গত বছরের মধ্যভাগে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট কারখানা করার প্রস্তাব দেয় ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক মহাকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অন্যতম শক্তি হয়ে ওঠা দেশটির প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে ঢাকায় স্যাটেলাইট নিয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামীকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জি-২০ সম্মেলন শেষে দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে ঢাকায় আসবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে তাকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। সেখান থেকে সফর সঙ্গীদের নিয়ে মাখোঁ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আসবেন। তার সম্মানে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তারা।
পরদিন সোমবার সকালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে মাখোঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করবেন তিনি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান এবং যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেবেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। এরপর ফ্রান্স দূতাবাসের আয়োজনে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এরপর বিকেলেই তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনাও আসছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সফরের প্রথম দিনে সরকারি আনুষ্ঠানিকতা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজ শেষে ইমানুয়েল মাখোঁ রাতের ঢাকায় কিছু সময় ঘুরে বেড়াবেন। ধানমন্ডি লেক এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পর তিনি যাবেন বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির ধারক জলের গান ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট রাহুল আনন্দের একটি ওয়ার্কশপে। সেখানে রাহুল আনন্দের গান শুনে তিনি হোটেল ফিরবেন।
তৈরি পোশাক রপ্তানি, প্রতিরক্ষা ক্রয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক লেনদেনসহ নানা ক্ষেত্রে ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তৃত। ফ্রান্সের কাছ থেকে নৌযান, হেলিকপ্টারসহ সামরিক সরঞ্জামও কিনেছে বাংলাদেশ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মাখোঁর সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত অভিবাসনসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর এটিই ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর। ১৯৯০ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশে এসেছিলেন। ২০২১ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে দ্বিপক্ষীয় সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। বর্তমান ভূরাজনীতি ও ভূঅর্থনীতির প্রেক্ষাপটে ইমানুয়েল মাখোঁর এ সফর দুদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মনে করছে দুই দেশ।
প্রিন্ট