ফরিদপুরের সালথায় ৫ এপ্রিল বিকেলে ফুকরা বাজারে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হীরামনির গাড়ি থেকে নেমে কয়েক ব্যক্তিকে পেটানোর অভিযোগ উঠে নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে।
এই অভিযোগের গুজব ছড়িয়ে ওই দিন রাতে উপজেলার ফুকরা বাজারে জড়ো হয় ৫টি গ্রামের মানুষ। পরে মাওলানা আকরাম আলীকে আটকের গুজব ছড়িয়ে উপজেলার কয়েকটি সরকারি দপ্তরে তান্ডব চালায় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা।
তবে এসিল্যান্ডের গাড়ি থেকে কাউকে কোনো মারধরের সত্যতা পায়নি জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটি। এঘটনায় সোমবার পর্যন্ত পুলিশ মোট ৭১ জনকে আটক করেছে।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার সাংবাদিকদের বলেন, তান্ডবের ঘটনায় এসিল্যান্ডের ভূমিকার বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখেছেন তদন্ত কমিটি। তাকে অনেক জেরা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই তদন্ত কমিটির পাশাপাশি প্রশাসনিক একটি তদন্ত কমিটিও এসিল্যান্ডের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত করেছেন। সে কমিটিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি এনজিওর একজন প্রতিনিধিও ছিলেন। সেই প্রতিবেদনেও এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতির পরিমাপের জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই প্রতিবেদনে মোট ২ কোটি ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৮ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির এই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
জানা গেছে, সে দিনের তান্ডবে ভূমি অফিসের ক্ষতি হয়েছে ২৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩০ টাকা, ইউএনওর কার্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ১২৯ টাকা, ইউএনওর বাসার ক্ষতি হয়েছে ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৬০৯ টাকার, কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের ক্ষতি হযেছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮৮ টাকা, নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৪০ টাকা, বন অফিসের ক্ষতি হয়েছে ২৫ হাজার ৮৬৬ টাকা, পিআইও এবং গোডাউনের ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫৭ টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসার ক্ষতি হয়েছে ৮০ হাজার ৯২৩ টাকা, কার্যালয়ে ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ৯৩৩ টাকা, ভাইস চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে ৩২ জাহার ৭৩২ টাকা, সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে ২৩ হাজার ৭৯৯ টাকা।
আরও পড়ুনঃ সালথায় সহিংসতা: বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় বিএনপি
উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারের ক্ষতি হয়েছে ৫২ হাজার ১০৫ টাকা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৩২ টাকা, যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের ক্ষতি হযেছে ১৫ হাজার ৮৬৬ টাকা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ৯৩৩, পুরোনো ভূমি অফিসের ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার ৮৬৬ টাকা, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৯৩ টাকা, পুকুরঘাটের ক্ষতি হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।
এছাড়া এসিল্যান্ডের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ইউএনওর পাজেরো গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৯৯ লাখ টাকা। ৪টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে ও ভেঙে ফেলায় ক্ষতি হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা এবং বৈদ্যুতিক কাজের ক্ষতি হয়েছে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৩১ টাকা।
উল্লেখ্য লকডাউনকে কেন্দ্র গুজব ছড়িয়ে গত ৫ এপ্রিল সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি অফিসে তান্ডব চালায় উত্তেজিত জনতা।
এ সময় দুটি সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা। ওই সহিংসতার ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসক।
অপরদিকে এই ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় ২৬১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এবং অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার।
এলাকায় গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। এ খবর লেখা পর্যন্ত মোট ৭১ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুনঃ অ্যাকশনে যেতে চাই: সালথায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার
প্রিন্ট