গোপালগঞ্জ কর অফিসে ফাইল আটকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গত ২৪ আগষ্ট ভুক্তভোগী ফোরাদ হোসেন গোপালগঞ্জ আয়কর অফিসের উপ- কর কমিশনার আবদুল রাজ্জাক, বর্তমান ইন্সপেক্টর ও মাঠ সুপারভাইজার টিটুল বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে দূর্নীতি দমন কমিশনের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, কর অঞ্চল-৩ এর গোপালগঞ্জ-৫০ সার্কেলে ভুক্তভোগী ফোরাদ হোসেনের মায়ের নামীয় মেসার্স রানী ব্রিকস নামের একটি আয়কর ফাইল খোলা আছে। উক্ত আয়কর ফাইলের আলোকে গত ৫ মাস পূর্বে অত্র সার্কেলের উপ-কর কমিশনার আবদুল রাজ্জাক এর নির্দেশ ক্রমে তৎকালীন ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ রহম্মত উল্লাহ ও মাঠ সুপারভাইজার টিটুল বিশ্বাস রানী ব্রিকস (ইট ভাটা) টি পরিদর্শন করেন। একপর্যায়ে মাঠ সুপারভাইজার টিটুল বিশ্বাস উপ-কর কমিশনার আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশে আয়কর ফাইলটি আপডেট করার জন্য ফোরাদ হোসেনের কাছে মোবাইল ফোনে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। যে ফোন আলাপটি ভুক্তভোগীর কাছে রেকর্ড রয়েছে।
ফোন আলাপটিতে মাঠ সুপারভাইজার টিটুল বিশ্বাস বলেন, দেড় লাখ টাকার ৭০ হাজার টাকা গোপালগঞ্জ অফিসে খরচ হবে, বাকি টাকা ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে ফাইলটি পাঠানোর পর দিতে হবে। পরবর্তিতে ফোরাদ হোসেন বাধ্য হয়ে উপ- কর কমিশনার আবদুল রাজ্জাক কে ৩০ হাজার ও মাঠ সুপারভাইজার টিটুল বিশ্বাসকে ১০ হাজার টাকা অফিসে উপস্থিত হয়ে সরাসরি হাতে হাতে প্রদান করেন এবং ফাইলটি ঢাকায় পাঠাতে অনুরোধ করেন। এই ৪০ হাজার টাকায় আব্দুল রাজ্জাক ও টিটুল বিশ্বাস ফাইলটি ঢাকায় পাঠাতে অপারগতা জানিয়ে পুরো দেড় লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না দিতে পারায় মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন রানী ব্রিকস এর স্বত্বাধিকারী ভুক্তভোগী ফোরাদ হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে গোপালগঞ্জ আয়কর অফিসে গিয়ে মাঠ সুপারভাইজার টিটুল বিশ্বাসকে পাওয়া গেলেও উপ-কর কমিশনার আবদুল রাজ্জাক-কে কার্যালয়ে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। জানা গেছে উপ-কর কমিশনার আবদুল রাজ্জাক এই সপ্তাহে গোপালগঞ্জ থেকে ট্রান্সফার হয়ে ফরিদপুর আয়কর অফিসে যোগদান করবেন।
অপরদিকে মাঠ সুপারভাইজার টিটুল বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি গোপালগঞ্জের ছেলে মোবাইল ফোনে কোন টাকা দাবি করিনি, ওটা আমার ভয়েস না। উপ-কর কমিশনার স্যার টাকা নিয়ে থাকলে আমি তার দায় নিব কেন। উপ-কর কমিশনার-কে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না কয়ায় তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে বর্তমান ইন্সপেক্টর সাংবাদিকদের জানান, আমি কিছুদিন হলো যোগদান করেছি ওই ফাইল সম্পর্কে কিছুই জানিনা, আমার পূর্ববর্তী ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ রহম্মত উল্লাহ ফাইলটি করেছেন। অপরাধ করলে তারা করেছেন, আমি এই দায় কাঁধে নিতে পারিনা, অভিযোগকারী ভুল বুঝে অভিযোগ পত্রে আমার নাম উল্লেখ করেছেন। আশাকরি তিনি ভুল বুঝতে পারবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপালগঞ্জ কর অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আয়কর আইনজীবী জানান, এটি এই অফিসের কোন নুতন ঘটনা নয়, পূর্ব থেকেই উপ-কর কমিশনার আবদুল রাজ্জাক ও মাঠ সুপারভাইজার টিটুল বিশ্বাস যোগসাজশ করে গ্রাহকদের ফাইল আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এই উপ-কর কমিশনার আবদুল রাজ্জাকের পূর্বের একটি আলোচিত দূর্নীতির ঘটনা নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছিল। ওই সময়ের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ রহম্মত উল্লাহ-কে স্টান্ড রিলিজ করা হলেও অজানা কারণে আবদুল রাজ্জাকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অভিযোগকারী শেখ ফোরাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি একজন সচেতন মানুষ হওয়ার পরেও একটি ফাইল ছাড় কারাতে মাসের পর মাস ঘুরছি। অন্যদের অবস্থা আরো খারাপ। আমরা গোপালগঞ্জবাসী এই ঘুষ খোর কর্মকর্তাদের হাত থেকে মুক্তি চাই। অবসান চাই গোপালগঞ্জ আয়কর অফিসের ভোগান্তি থেকে।
প্রিন্ট