স্বাধীনতাত্তোরকালের ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার বিপ্লবী ছাত্রলীগ নেতা, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ সারির অকুতোভয় যোদ্ধা, বোয়ালমারী সরকারি কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের দুই বারের নির্বাচিত ভিপি ও বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক লুলুর মৃত্যুবার্ষিকী নীরবেই চলে গেল। বুধবার (২৩ আগস্ট) তাঁর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো।
বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান কাজী ইমদাদুল হক লুলু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা, চাচা কাজী মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আসেন। জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনামলে একই বাড়ির দুই ছাত্রলীগ নেতা আবু দায়েন কাজল এবং কাজী ইমদাদুল হক লুলু বোয়ালমারী থানা এবং ফরিদপুর জেলার সভাপতির দায়িত্বে থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিতেন। তাঁরা দুজন একই সময়ে একজন ফরিদপুর সরকারি ইয়াসিন কলেজ এবং বোয়ালমারী সরকারি কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি ছিলেন।
গত জুন মাসে আবু দায়েন কাজলের মৃত্যু বার্ষিকী যেমন নীরবে গেছে ঠিক তেমনই নীরবে গেল কাজী ইমদাদুল হক লুলুর মৃত্যুবার্ষিকী। বন্ধুদের ফেসবুক পেজ বা স্মরণ সভায় উচ্চারিত হয়নি তাঁদের নাম। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখে আবু দায়েন কাজল স্বীকৃতি পেলেও কাজী ইমদাদুল হক লুলু স্বীকৃতি আদায়ের আপ্রাণ যুদ্ধ করতে করতে দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
কাজী ইমদাদুল হক লুলু মৃত্যুকালে দুটি দুঃখ নিয়ে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছেন। তিনি গভীরভাবে প্রত্যাশা করেছিলেন, মৃত্যুকালে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর লাশ দাফন, আর নামের পাশে আওয়ামী লীগ নেতার পরিচিতি। তাঁর কোন স্বপ্নই পূর্ণ হয়নি। বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি আকুতি জানিয়েছিলেন তাঁকে যেন সামান্য একটি সদস্য পদ প্রদান করা হয়! মৃত্যু পথযাত্রী কাজী ইমদাদুল হক লুলুর আবদার রক্ষা করা হয়নি। তিনি দীর্ঘদিন যাবত জীবন বীমা কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতা ছিলেন।
কাজী ইমদাদুল হক লুলুর দুই সন্তান। একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আরেকজন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেকারত্বের অভিশাপে ভুগে পিতার মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতির প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন।
এ ব্যাপারে কাজী ইমদাদুল হক লুলুর সহযোদ্ধা এবং ফরিদপুর জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, তিনি (লুলু) বোয়ালমারী সরকারি কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের দুইবারের ভিপি ছিলেন। ১৯৮০-৮১ সালে তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে তার অসুস্থতাজনিত কারণে আর সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজী লুলু অস্ত্র হাতে যুদ্ধ না করলেও তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া উচিত ছিল। যাচাই-বাছাইতে তা বাদ পড়েছে।
প্রিন্ট