আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করতে শাসক দলের জরিপের চিত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মিডিয়ায় যে তথ্য প্রচার করেছেন তাতে বিতর্কিত এমপিদের মনোনয়ন না দেওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। দলীয় এই জরিপের চুড়ান্ত ফলাফল মনোনয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন মহম্মদপুর, শালিখা এবং মাগুরার ৪ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসনের আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এবারের নির্বাচন কে সামনে রেখে এ আসনে একাধিক হেবি ওয়েট নতুন মুখ নির্বাচনী প্রচার ও প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। একারনে কিছুটা চাপে রয়েছেন বর্তমান এমপি। জাতীয় শোক দিবসের মাসব্যাপি কর্মসূচীকে নির্বাচনী প্রচারণার মূখ্যম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন মনোয়ন প্রত্যাশীরা। আর এ নিয়েই বিবাদ এবং বিভাজনে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে সাধারন কর্মীদের মধ্যে। স্ব স্ব নেতার পক্ষে থাকা কর্মীরা ক্রমাগত অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন। সংঘাতের আশঙ্কাও করছেন দলেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
১৫ আগষ্ট সকালে বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে শালিখা উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্যামল কুমার দে’র সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা না হলেও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী নির্মল কুমার চ্যাটার্জী এবং অন্য মনোনয় প্রত্যাশী মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ মাগুরা জেলা শাখার সদস্য সচিব কর্নেল (অব.) কাজী শরিফ উদ্দীন। এই দুই নেতা মঞ্চে ওঠার পর শুরু হয় আলোচনা সভা। পথিমধ্যে প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. শ্রী বীরেন শিকদার কর্নেল (অব.) কাজী শরিফ উদ্দীন কে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে অনুরোধ করেন। তখন তিনি বলেন, আমি মাগুরা জেলার সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় শোক দিবসের প্রগ্রামে এসেছি। এই প্রগ্রামে অংশ নেওয়ার অধিকার আমার আছে।
তিনি আরো বলেন, ওই প্রগ্রামে বক্তব্য দেওয়ার সময়কালেও আমাকে পেছন থেকে নানাভাবে হেও করা হয়েছে। এবং তার ভাই বিমল শিকদার তার বাহিনী দিয়ে আমাকে অপমান করেছিলেন। জাতীয় শোক দিবসের প্রগ্রাম বিধায় আমি প্রতিবাদ করিনি। তবে বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তার এই অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, অনুষ্ঠানে তার আমন্ত্রণ ছিল না। তাকে শুধু পিছনের সারিতে বসতে বলা হয়েছিল। তাও আমি বলিনি। বলেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আবু হানিফ।
এদিন দুপুরে মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদ হল রুমে উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে ড. বীরেন শিকদার প্রধান অতিথি ছিলেন। আমন্ত্রণ না থাকা সত্বেও সেচ্ছায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য নির্মল চ্যাটার্জি উপস্থিত হলেও তাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় তার অনুসারি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। শালিখা এবং মহম্মদপুরে অনুষ্ঠিত জাতীয় শোক দিবসের এই অনুষ্ঠানে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্তরকলহ প্রকাশ হওয়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ এবং বিভাজন সৃষ্ঠি হয়েছে। এবং বিতর্কিত এই দুটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যপক ভাইরাল হয় এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এমন অবস্থা চলমান থাকলে যে কোন সময় সংঘাতে রুপ নিতে পারে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-২ আসনে একাধিক হেবি ওয়েট নেতা ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ এবং গন সংযোগের মাধ্যমে ইতি মধ্যেই মনোনয়ন প্রত্যাশ করেছেন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল চ্যাটার্জী, কর্নেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন, প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান, ড. ওহিদুর রহমান টিপু প্রমূখ।
- আরও পড়ুনঃ মাগুরায় জেলা বিএনপির পদযাত্রা
এ বিষয়ে শালিশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ইলিয়াসুর রহমান বলেন, প্রকাশ্যে মঞ্চে বসে একজন বর্তমান এমপি এবং একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতার বাকবিতন্ডা আওয়ামী লীগের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছে। এতে সাধারন নেতাকর্মীদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামালা সিদ্দিকী লিটন বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে তাকে জাতীয় শোক দিবদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিৎ ছিল। তবে ওই অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত না থাকার কারনে কিছুটা ভুলভ্রান্তি হয়েছে।
মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকোজ কুমার কুন্ডু বলেন, শালিখা এবং মহম্মদপুরে অনুষ্ঠিত জাতীয় শোক দিবসের প্রগ্রাম নিয়ে মৌখিকভাবে কয়েকজন নেতা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি মাসিক সভায় বিষয়টি তুলে ধরবো।
প্রিন্ট