মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া ইউনিয়নের রাধানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নওয়াব আলীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
রাধানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের গত শুক্রবার ২৫ জুলাই সাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রাধানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৪ সালে ২.১৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ যাবৎ সুনাম অক্ষুণ রেখে স্থানীয় কোমলমতি শিক্ষাথীদের শিক্ষার চাহিদা পূরণ করে চলছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নওয়াব আলীর আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়টি প্রায় ধ্বংসের পথে। তিনি বিগত ২০১৬ খ্রি. থেকে ২০২২ খ্রি. পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত হিসাব বহিতে যে হিসাব দাখিল করেছেন। তা আমরা ৩ সদস্য বিশিষ্ট অভ্যন্তরীন অডিট কমিটি পুঙ্খনাপুঙ্ক ভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখতে পাই প্রধান শিক্ষকের দাখিলকৃত আয়-ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়টি বিরাট ত্রুটি ও বৈষম্যপূর্ণ। তিনি আরও একটি বিষয় ক্যাশে উল্লেখ করেছেন যে বিদ্যালয়ের ক্যাশে টাকা থাকাকালীন ভূয়াভাবে নিজ নামে নিজনামে কমিটির অনুমোদন ব্যতিত বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ে লোন প্রদান করেছেন যা বিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক আইন ও কর্মকান্ডের পরিপন্থী। প্রধান শিক্ষক মোঃ নওয়াব আলী যোগদান করার পর থেকে ৩১.১০.২০১৬ সাল থেকে ৩১.০৩.২০১৮ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কিছু লোন প্রদান করা হয়েছে দেখিয়ে ক্যাশ বহিতে উল্লেখ আছে। প্রধান শিক্ষক তার নিজ হাতে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫ শত টাকা, বিশেষ ব্যক্তি হতে লোন নাম উল্লেখ নাই ১ লাখ টাকা এবং সাবেক সভাপতি পরেশ চন্দ্র রাহুত ২৮ হাজার টাকা, মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫ শত টাকা। ঐ সময়ের যারা সভাপতি ছিলেন এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বে ছিলেন তারা এই লোন গ্রহণের ব্যাপারে কিছু জানে না এবং কোন প্রকার রেজুলিউশন নাই। সেই সময়ে মিটিং সভায় উপস্থিত ছিলেন, সভাপতি পরেশ চন্দ্র রাহুত, সদস্য সিনিয়র শিক্ষক (টিআর) সাজেদা খাতুন, মোশাররফ হোসেন, নির্মল কুমার বিশ্বাস, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রজব আলী, বাবু মিয়া, সাত্তার ফকির, লুৎফর রহমান, কালাম মোল্লা।
সূত্র ২৩/২০২২ পত্রে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির সাক্ষরিত সদস্য বৃন্দের নাম হলো সিনিয়র শিক্ষক আহবায়ক মোঃ মিজানুর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য সাজেদা খাতুন এবং সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য শশী বিশ্বাস, যেখানে মোট টাকার পরিমাণ ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ২২ টি খাতে প্রধান শিক্ষকের টাকার পরিমাণ ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫ শত টাকা, বিশেষ ব্যক্তিবর্গের টাকার পরিমাণ ১ লাখ এবং সভাপতির টাকার পরিমাণ ২৮ হাজার টাকা।
রাধানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ লিয়াকত বিশ্বাস বলেন, সোমবার ৭ আগস্ট দুপুর ১২ টার সময় মিটিং ডাকা হয়েছে আগের রেজুলিউশনের অডিটের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা মেনে নিতে পারছে না, প্রধান শিক্ষক জোর করে এটা করেছে। তিনি আরও বলেন, তবে ভুল হলে আবার নতুন করে সংশোধন করা হবে। স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রী যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, সাবেক সভাপতি পরেশ চন্দ্র রাহুতের লোকজন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে যাচ্ছে অন্য স্কুলে। আমি এক বছর অত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, স্কুলের দূর্নীতির বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রধান শিক্ষক সমস্ত কিছুর ঘটনা বলতে পারবেন।
প্রধান শিক্ষক মোঃ নওয়াব আলী বলেন, সাবেক সভাপতি পরেশ চন্দ্র রাহুত চলে যাওয়ার পর স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা অন্য স্কুলে চলে গিয়েছে। তিনি বলেন স্কুলের ফান্ড থেকে আমি ১ লাখ টাকা নিয়েছি এবং রেজুলেশনে সাক্ষরিত করে নিয়েছি। শিক্ষকদের সাথে আমি কোন রাগান্বিত ব্যবহার করিনা। আর বিদ্যালয়ের ভর্তি ছাত্র-ছাত্রীরা চলে যাচ্ছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। তবে কিছু অল্প সংখ্যাক আছে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি যার সংখ্যা ১০-১২ জন।
বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষিকা সাজেদা খাতুন বলেন, অডিট রিপোর্টে সাক্ষরিত করেছি শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের স্বার্থে প্রধান শিক্ষক নওয়াব আলী বলেন যে, স্বীকৃতি না থাকলে সবার বেতন বন্ধ হয়ে যাবে এবং বিদ্যালয়ের সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। অত্র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে ও আমাদের পরিবারকে বাঁচাতে অডিট রিপোর্টে সাক্ষরিত করি।
প্রধান শিক্ষক মোঃ নওয়াব আলী রেজুলিউশন বহির ফটোকপি দেখান, যেখানে গত ৩১/০৬/২০২১ সালের রেজুলিউশন বহির ৬৬ পাতায় দেখা যায়, সভাপতি পরেশ চন্দ্র রাহুত, অভিভাবক সদস্য মোঃ লুৎফর রহমান, শিক্ষক প্রতিনিধি নির্মল কুমার বিশ্বাস, প্রধান শিক্ষক/সচিব মোঃ নওয়াব আলী রোজ শনিবার সকাল ১১ টার সময় প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের অফিস কক্ষে সভাপতি এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ লুৎফর রহমান কর্তৃক ২০১৭ খ্রি. বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে উত্তোলিত এবং নগদ গৃহিত টাকার ভাউচার পেশ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারী হতে মার্চ পর্যন্ত ভাউচার পেশ করা হয়েছে। যেখানে টাকা গ্রহণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, জেলা পরিষদ কর্তৃক বরাদ্দ ১ লাখ টাকা, এসএসসির ফরম ফিলাপ, অতিরিক্ত কোচিং, ছাত্র বেতন ৯৪ হাজার টাকা, বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক উত্তোলন ও প্রধান শিক্ষককের নিকট হতে নগদ ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা, সর্বমোট ৪ লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা। সভাপতির দাখিলকৃত ভাউচার (৩৯ টি) টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪ শত ৫৯ টাকা এবং সদস্য দাখিলকৃত টাকা (৯ টি) টাকার পরিমাণ ৬৪ হাজার ৫ শত টাকা। মোট ভাউচার ৪৮ টি টাকার পরিমাণ ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৯ শত ৫৯ টাকা। সভাপতি মহোদয় ও প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের নিকট হতে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে, যা চুড়ান্ত হিসাব অন্তে ফান্ডে আছে। ব্যয়ের সংক্ষিপ্ত খাত, বার্ষিক ক্রিড়া ২০১৭ ও ২০১৮ বৈশাখ ১ লা সহ বিভিন্ন দিবস।
সিনিয়র শিক্ষক সাজেদা খাতুন আরও বলেন, শশী বিশ্বাস, মিজানুর রহমান ও আমি এই ৩ জন মিলে অডিট করতে গিয়ে দেখি অসামঞ্জস্যতা। মিন্সিট্রি অডিট থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসে বলেন অডিট না করে দিলে আপনাদের স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। এ সময় সুযোগে প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরে। তার কারণে তিনি যে এই সরলতার সুযোগ নিয়ে এমন চালাকি কাজ করবেন এটা কল্পনাও করতে পারিনি। বার বার একটাই কথা, লোনটাকে আমরা স্বীকার করে নিতে চাচ্ছি না, না তখনকার কমিটির না তখনকার কোন শিক্ষকদের আমাদের জানা নেই এটাই আমাদের অভিযোগ, টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫ শত টাকা।
রেজুলেশন সূত্রে দেখা যায়, সাবেক সভাপতি পরেশ চন্দ্র রাহুতের মিটিং সভায়, প্রধান শিক্ষক মোঃ নওয়াব আলী লোন প্রদানের বিষয়টি অবাস্তব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রতীয়মান হয়।
- আরও পড়ুনঃ কোটায় ৬ নিত্যপণ্য দিতে সম্মত ভারত
বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রী কমলেশ মজুমদার বিষয়টিকে তদন্ত করার জন্য একটা কমিটি গঠন করেছেন। যার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার শ্রী শ্যামানন্দ কুন্ডুর কাছে।
প্রিন্ট