ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo শার্শায় শিয়াল মারার ফাঁদে কৃষকের মৃত্যু    Logo তানোরে একতা যুব সংঘের নিজস্ব অর্থায়নে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন Logo ফরিদপুর পাসপোর্ট অফিসে ৩ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন দালাল আটক Logo দুর্নীতিবাজ-মাফিয়াদের রাজনীতি চাই না”— ঝালকাঠিতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঘোষণা Logo কুষ্টিয়ায় পাউবোর কোটি টাকার তেল চুরির অভিযোগে দুদকের অভিযান Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছেলের বউকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুর গ্রেফতার Logo ঠাকুরগাঁওয়ে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৩ বিষয়ে ফেল Logo কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অস্ত্র-মাদকসহ আটক ১ Logo কুষ্টিয়া পৌরসভার গেটে আবর্জনা ফেলে কর্মবিরতিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সৌদি আরবের দাম্মামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ জন ফরিদপুরের একই পরিবারে

সৌদি আরবের দাম্মামে সড়ক দূর্ঘটনায় বাংলাদেশের একটি পরিবারের বাবা, ছেলে ও মেয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে স্ত্রী ও বড় মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নিহত মোবারক হোসেনের বাড়ি ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ চরকমলাপুরের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার বৃদ্ধা মা অসুস্থ আলেয়া বেগম এ খবর জানার পর থেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
নিহতরা হলেন- মোবারক হোসেন (৪৮), তার দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে তানজিল আব্দুল্লাহ (১৭) ও অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে মাহিয়া মাহি (১৪)। এ ঘটনায় আহতরা হলেন- মোবারক হোসেনের স্ত্রী শিখা আক্তার (৪০) ও বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীম (১৯)। তারা স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) মোবারক হোসেন পরিবারের  সবাইকে নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ওমরাহ পালনের জন্য পবিত্র মক্কার উদ্দেশ্য রওনা হন । ওমরাহ্‌  পালন শেষে শনিবার (৫ আগস্ট) সৌদি আরব সময় সকাল ১০টার দিকে তারা দাম্মাম শহরের নিজ বাসায় ফিরছিলেন। পথে আল-কাসিম নামক স্থানে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি গাড়ি তাদের গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে তাদের গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং গাড়িতে থাকা পাঁচজন গুরুতর আহত হন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তিন জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকী দু’জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহত সৌদি প্রবাসী মোবারক হোসেন ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার হাজীগঞ্জের গাজিরটেক গ্রামের শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহন শেখের বড় ছেলে। পাঁচ ভাই আর তিন বোনের মধ্যে চার ভাই সৌদি প্রবাসী।
মোবারক হোসেন প্রায় দুই যুগ ধরে পরিবার নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে বসবাস করে আসছিলেন । সেখানে তার একটি গাড়ি মেরামতের দোকান রয়েছে। গত চার মাস আগেও পরিবার নিয়ে দেশে বেড়াতে এসেছিলেন তারা।
দুর্ঘটনার পর তাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে অবস্থানকরা তাদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এরপর থেকেই ওই পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তাদের কান্নায় ভাড়ী হয়ে উঠেছে আশেপাশের পরিবেশ। বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নদীভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে চরভদ্রাসনের গ্রামের বাড়ি ছেড়ে এখন বসবাস করছেন ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুরে। নিহতের পিতা শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহন শেখ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বড় নাতনি মিমের কানাডা যাওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ করেছিল। তার আগে তারা পরিবার নিয়ে ওমরাহ করতে যায়। তিনি বলেন, আমার ছেলে আর দুই নাতির জীবন শেষ হয়ে গেছে এই দুর্ঘটনায়। আমি আর কি বলবো। একথা বলে অনেকটা বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। তিনি জানান, ফোরম্যানের চাকরি নিয়ে মোবারক হোসেন সৌদি আরবে যান। পরে সেখানে গাড়ির গ্যারেজ খুলেন।

নিহতের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বুধবার রাতে বড় ভাই মোবারক হোসেন তাদের ফোন করে জানান যে, তারা পরেরদিন ওমরাহ করতে যাবেন। তার ভাইয়ের বড় মেয়ের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল আর বাচ্চাদেরও পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা স্বপরিবারে ওমরায় যাচ্ছেন বলে জানান। এটিই ছিলো তাদের সাথে শেষ কথা। এরপর দুর্ঘটনার দুই ঘন্টা পরে তারা জানতে পারেন গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। তবে তারা মারা গেছেন একথা প্রথমেই জানতে পারেননি। তিনি জানান,  দূর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে দেশ থেকে নিহতের শ্যালক গিয়েছেন সৌদিআরব এ। এছাড়া প্রবাসে থাকা দুই ভাই আহত ও নিহতদের কাছে রয়েছেন।  তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, এই রেমিটেন্স যোদ্ধার লাশটি যেনো সরকার দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

সৌদি আরবের দাম্মামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ জন ফরিদপুরের একই পরিবারে

আপডেট টাইম : ০৯:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩
বোরহানুজ্জামান আনিস, স্টাফ রিপোর্টার :
সৌদি আরবের দাম্মামে সড়ক দূর্ঘটনায় বাংলাদেশের একটি পরিবারের বাবা, ছেলে ও মেয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে স্ত্রী ও বড় মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নিহত মোবারক হোসেনের বাড়ি ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ চরকমলাপুরের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার বৃদ্ধা মা অসুস্থ আলেয়া বেগম এ খবর জানার পর থেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
নিহতরা হলেন- মোবারক হোসেন (৪৮), তার দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে তানজিল আব্দুল্লাহ (১৭) ও অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে মাহিয়া মাহি (১৪)। এ ঘটনায় আহতরা হলেন- মোবারক হোসেনের স্ত্রী শিখা আক্তার (৪০) ও বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীম (১৯)। তারা স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) মোবারক হোসেন পরিবারের  সবাইকে নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ওমরাহ পালনের জন্য পবিত্র মক্কার উদ্দেশ্য রওনা হন । ওমরাহ্‌  পালন শেষে শনিবার (৫ আগস্ট) সৌদি আরব সময় সকাল ১০টার দিকে তারা দাম্মাম শহরের নিজ বাসায় ফিরছিলেন। পথে আল-কাসিম নামক স্থানে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি গাড়ি তাদের গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে তাদের গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং গাড়িতে থাকা পাঁচজন গুরুতর আহত হন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তিন জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকী দু’জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহত সৌদি প্রবাসী মোবারক হোসেন ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার হাজীগঞ্জের গাজিরটেক গ্রামের শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহন শেখের বড় ছেলে। পাঁচ ভাই আর তিন বোনের মধ্যে চার ভাই সৌদি প্রবাসী।
মোবারক হোসেন প্রায় দুই যুগ ধরে পরিবার নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে বসবাস করে আসছিলেন । সেখানে তার একটি গাড়ি মেরামতের দোকান রয়েছে। গত চার মাস আগেও পরিবার নিয়ে দেশে বেড়াতে এসেছিলেন তারা।
দুর্ঘটনার পর তাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে অবস্থানকরা তাদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এরপর থেকেই ওই পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তাদের কান্নায় ভাড়ী হয়ে উঠেছে আশেপাশের পরিবেশ। বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নদীভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে চরভদ্রাসনের গ্রামের বাড়ি ছেড়ে এখন বসবাস করছেন ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুরে। নিহতের পিতা শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহন শেখ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বড় নাতনি মিমের কানাডা যাওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ করেছিল। তার আগে তারা পরিবার নিয়ে ওমরাহ করতে যায়। তিনি বলেন, আমার ছেলে আর দুই নাতির জীবন শেষ হয়ে গেছে এই দুর্ঘটনায়। আমি আর কি বলবো। একথা বলে অনেকটা বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। তিনি জানান, ফোরম্যানের চাকরি নিয়ে মোবারক হোসেন সৌদি আরবে যান। পরে সেখানে গাড়ির গ্যারেজ খুলেন।

নিহতের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বুধবার রাতে বড় ভাই মোবারক হোসেন তাদের ফোন করে জানান যে, তারা পরেরদিন ওমরাহ করতে যাবেন। তার ভাইয়ের বড় মেয়ের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল আর বাচ্চাদেরও পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা স্বপরিবারে ওমরায় যাচ্ছেন বলে জানান। এটিই ছিলো তাদের সাথে শেষ কথা। এরপর দুর্ঘটনার দুই ঘন্টা পরে তারা জানতে পারেন গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। তবে তারা মারা গেছেন একথা প্রথমেই জানতে পারেননি। তিনি জানান,  দূর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে দেশ থেকে নিহতের শ্যালক গিয়েছেন সৌদিআরব এ। এছাড়া প্রবাসে থাকা দুই ভাই আহত ও নিহতদের কাছে রয়েছেন।  তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, এই রেমিটেন্স যোদ্ধার লাশটি যেনো সরকার দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।


প্রিন্ট