ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ফুলবাড়ী উপজেলায় মতবিনিময় সভা Logo তানোরে যাতায়াতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ Logo মাগুরাতে এসএমসি’র পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo রূপগঞ্জে সাংবাদিকের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন Logo অর্থনৈতিক শুমারি উপলক্ষে স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত Logo প্রত্যন্ত গ্রামে নারী ফুটবল প্রীতি ম্যাচ উপভোগ করলেন হাজারো দর্শক Logo বাঘায় উপজেলা শুমারি স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত Logo কুষ্টিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা Logo ফরিদপুরে দুই দিনব্যাপী তথ্য মেলা অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কেজিতে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হবে গরুর মাংস

ঢাকার বাজারে এখন যে দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে তার থেকে কেজি প্রতি ৫০ টাকা কম দামে গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন গো-খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।

রোববার (৩০ জুলাই) জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত গরুর মাংসের দাম ক্রয় সীমার মধ্যে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালা শেষে খামারিরা গরুর মাংসের দাম কমানোর ঘোষণা দেন। এ সময় মূল বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢাকায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে।

অনুষ্ঠানে বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমরা গরুর মাংসের দাম কমাতে চাই। এর অংশ হিসেবে খামারিরা যে দামে গরুর মাংস বিক্রি করছে আগামীকাল (সোমবার) থেকে তার চেয়ে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করবে।’

তিনি বলেন, গরুর মাংসের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যে আনতে চাই। এরই পদক্ষেপ হিসেবে এ অ্যাসোসিয়েশনের খামারিরা প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি করবেন।

জানা যায়, খামারিরা সাধারণত অনলাইনের মাধ্যমেই বেশিরভাগ গরুর মাংস বিক্রি করে থাকে, যা ৮০০-৮৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়। তাদের ঘোষিত এই দাম ঢাকার খুচরা বাজারের মাংস বিক্রেতাদের জন্য নয়। তবে খামারিরা বলছেন, খামার পর্যায়ে মাংসের দাম কমলে সেটা খুচরা পর্যায়েও কমাতে বাধ্য করবে।

শর্ট টার্ম, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ৭টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে গরুর মাংসের দাম ৫০০-৫৫০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে একটি সুপারিশ তুলে ধরেন বিডিএফএ সভাপতি মো. ইমরান হোসেন।

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাত উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। জাত উন্নয়নের মাধ্যমেই গরুর মাংসের দাম ২০-২৫ শতাংশ কমিয়ে সম্ভব বলেও দাবি করা হয়।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দুই বছর বয়সী একটা দেশি গরু আরসিসি, নর্থ বেঙ্গল, গ্রে, শাহীওয়াল থেকে সর্বোচ্চ ১২০-১৫০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। যেখানে মাংসের জাতে হিসেবে পরিচিত ব্রাহমাতে যেতে পারলে একই সময়ে ২৫০-৩০০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া সম্ভব, এতে উৎপাদন খরচও কমে আসবে।

কারণ দেশি জাতের এক কেজি মাংস উৎপাদনে ১২-১৩ কেজি খাবার দরকার, যেখানে ব্রাহমার এক কেজি মাংস উৎপাদনে ৫-৬ কেজি খাবার প্রয়োজন।

মূল বক্তব্যে বলা হয়, প্রসেস ফিডের ইনগ্রেডিয়েন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে স্থানীয়ভাবে উন্নতজাতের ঘাস চাষ ও সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। ফসলের উচ্ছৃষ্টাংশ যেমন ধানের খড়, ভূট্টা গাছের কাণ্ড, বিভিন্ন ডালের গাছ, কলাগাছ সহ অন্যান্য সকল প্রকার ফসলের বাইপ্রোডাক্ট প্রকৃয়িজাতের মাধ্যমে উচ্চমানের গো-খাদ্য তৈরি সম্ভব। দানাদার খাদ্যের পরিবর্তে চাষিরা কীভাবে এই খাবার কম খরচে প্রস্তুত করা যায় সে বিষয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারলে কম দামে বিকল্প খাদ্য পাওয়া সম্ভব যা মাংসের দামে প্রভাব ফেলবে।

এছাড়া যথাযথ মূল্যে চামড়া বিক্রির ব্যবস্থার কথা বলা হয়। ৪-৫ হাজার টাকা মূল্যের চামড়া এখন ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ চামড়ার সঠিক দাম দিতে পারলে প্রতি কেজি মাংসে ৩০-৪০ টাকার একটা প্রভাব পড়বে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামন বলেন, প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন পিস চামড়া উৎপাদন হয়, যেখানে আমরা ব্যবহার করতে পারি মাত্র ১ মিলিয়ন। বাকিটা নিয়ম মেনে রপ্তানি করতে পারলে দাম ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

গরুর হাটের খাজনা গরুর মাংসের দামে একটা বড় প্রভাব ফেলছে। আগে যেখানে লাখ টাকার একটা গরুতে ৫০-১০০ টাকা খাজনা দিতে হতো এখন মোট দামের ৫ শতাংশ দিতে হয়। অর্থাৎ ১ লাখ টাকার গরুতে ৫ হাজার টাকা খাজনা। এই খাজনার পরিমাণ কমিয়ে আনা গেলে মাংসের দাম কমানো সম্ভব। এ ছাড়া গরুর মাংসের ফসমাল প্রসেসিং খাত উন্নয়নের মাধ্যমে বাই প্রডাক্ট রপ্তানির বৈশ্বিক বাজার ধরা সম্ভব। আবার কৃষকের বাজার তৈরি করতে পারলেও সেটা মাংসের দামে বড় ধরনের ইফেক্ট পড়বে বলে তুলে ধরা হয়।

এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের কিছু নীতিগত সমস্যা আছে। আমরা দুধ উৎপাদনকে বেশি প্রায়োরিটি প্রদান করছি, মাংস রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। কিন্তু আমাদের উচিত দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়ানোটাকে সমানতালে নিয়ে যাওয়া।

তিনি বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে মাংসের দাম কমানোর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে যে পদক্ষেপ দরকার সেগুলো আরও পর্যালোচনা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সুপারিশ আকারে তুলে ধরা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

error: Content is protected !!

কেজিতে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হবে গরুর মাংস

আপডেট টাইম : ১১:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০২৩
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক :

ঢাকার বাজারে এখন যে দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে তার থেকে কেজি প্রতি ৫০ টাকা কম দামে গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন গো-খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।

রোববার (৩০ জুলাই) জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত গরুর মাংসের দাম ক্রয় সীমার মধ্যে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালা শেষে খামারিরা গরুর মাংসের দাম কমানোর ঘোষণা দেন। এ সময় মূল বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢাকায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে।

অনুষ্ঠানে বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমরা গরুর মাংসের দাম কমাতে চাই। এর অংশ হিসেবে খামারিরা যে দামে গরুর মাংস বিক্রি করছে আগামীকাল (সোমবার) থেকে তার চেয়ে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করবে।’

তিনি বলেন, গরুর মাংসের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যে আনতে চাই। এরই পদক্ষেপ হিসেবে এ অ্যাসোসিয়েশনের খামারিরা প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি করবেন।

জানা যায়, খামারিরা সাধারণত অনলাইনের মাধ্যমেই বেশিরভাগ গরুর মাংস বিক্রি করে থাকে, যা ৮০০-৮৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়। তাদের ঘোষিত এই দাম ঢাকার খুচরা বাজারের মাংস বিক্রেতাদের জন্য নয়। তবে খামারিরা বলছেন, খামার পর্যায়ে মাংসের দাম কমলে সেটা খুচরা পর্যায়েও কমাতে বাধ্য করবে।

শর্ট টার্ম, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ৭টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে গরুর মাংসের দাম ৫০০-৫৫০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে একটি সুপারিশ তুলে ধরেন বিডিএফএ সভাপতি মো. ইমরান হোসেন।

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাত উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। জাত উন্নয়নের মাধ্যমেই গরুর মাংসের দাম ২০-২৫ শতাংশ কমিয়ে সম্ভব বলেও দাবি করা হয়।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দুই বছর বয়সী একটা দেশি গরু আরসিসি, নর্থ বেঙ্গল, গ্রে, শাহীওয়াল থেকে সর্বোচ্চ ১২০-১৫০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। যেখানে মাংসের জাতে হিসেবে পরিচিত ব্রাহমাতে যেতে পারলে একই সময়ে ২৫০-৩০০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া সম্ভব, এতে উৎপাদন খরচও কমে আসবে।

কারণ দেশি জাতের এক কেজি মাংস উৎপাদনে ১২-১৩ কেজি খাবার দরকার, যেখানে ব্রাহমার এক কেজি মাংস উৎপাদনে ৫-৬ কেজি খাবার প্রয়োজন।

মূল বক্তব্যে বলা হয়, প্রসেস ফিডের ইনগ্রেডিয়েন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে স্থানীয়ভাবে উন্নতজাতের ঘাস চাষ ও সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। ফসলের উচ্ছৃষ্টাংশ যেমন ধানের খড়, ভূট্টা গাছের কাণ্ড, বিভিন্ন ডালের গাছ, কলাগাছ সহ অন্যান্য সকল প্রকার ফসলের বাইপ্রোডাক্ট প্রকৃয়িজাতের মাধ্যমে উচ্চমানের গো-খাদ্য তৈরি সম্ভব। দানাদার খাদ্যের পরিবর্তে চাষিরা কীভাবে এই খাবার কম খরচে প্রস্তুত করা যায় সে বিষয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারলে কম দামে বিকল্প খাদ্য পাওয়া সম্ভব যা মাংসের দামে প্রভাব ফেলবে।

এছাড়া যথাযথ মূল্যে চামড়া বিক্রির ব্যবস্থার কথা বলা হয়। ৪-৫ হাজার টাকা মূল্যের চামড়া এখন ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ চামড়ার সঠিক দাম দিতে পারলে প্রতি কেজি মাংসে ৩০-৪০ টাকার একটা প্রভাব পড়বে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামন বলেন, প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন পিস চামড়া উৎপাদন হয়, যেখানে আমরা ব্যবহার করতে পারি মাত্র ১ মিলিয়ন। বাকিটা নিয়ম মেনে রপ্তানি করতে পারলে দাম ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

গরুর হাটের খাজনা গরুর মাংসের দামে একটা বড় প্রভাব ফেলছে। আগে যেখানে লাখ টাকার একটা গরুতে ৫০-১০০ টাকা খাজনা দিতে হতো এখন মোট দামের ৫ শতাংশ দিতে হয়। অর্থাৎ ১ লাখ টাকার গরুতে ৫ হাজার টাকা খাজনা। এই খাজনার পরিমাণ কমিয়ে আনা গেলে মাংসের দাম কমানো সম্ভব। এ ছাড়া গরুর মাংসের ফসমাল প্রসেসিং খাত উন্নয়নের মাধ্যমে বাই প্রডাক্ট রপ্তানির বৈশ্বিক বাজার ধরা সম্ভব। আবার কৃষকের বাজার তৈরি করতে পারলেও সেটা মাংসের দামে বড় ধরনের ইফেক্ট পড়বে বলে তুলে ধরা হয়।

এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের কিছু নীতিগত সমস্যা আছে। আমরা দুধ উৎপাদনকে বেশি প্রায়োরিটি প্রদান করছি, মাংস রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। কিন্তু আমাদের উচিত দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়ানোটাকে সমানতালে নিয়ে যাওয়া।

তিনি বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে মাংসের দাম কমানোর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে যে পদক্ষেপ দরকার সেগুলো আরও পর্যালোচনা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সুপারিশ আকারে তুলে ধরা হবে।


প্রিন্ট