গভর্নর আরো বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশ বছরে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। আর রপ্তানি করে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্যের আলোচনা চলছিল। ব্যবসায়ীরাও এর দাবি করে আসছেন অনেক দিন ধরে। এবার তা বাস্তব রূপ পেল।
রুপিতে লেনদেনকে দুই দেশের অংশীদারির নতুন সূচনা বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে গত এক দশকজুড়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য রূপান্তর ঘটেছে। এই রূপান্তরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ হলো দুই দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ।
এটা দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার অঙ্গীকারের নিদর্শন। দুই দেশের প্রসারমাণ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করতে রুপিতে লেনদেন শুরু হলো। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের অনেক দিন ধরে দাবি ছিল রুপিতে লেনদেনের; আজ সেটা পূরণ হলো এবং তাঁরা অনেক খুশি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, গত পাঁচ বছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য দ্বিগুণ হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক রূপান্তরের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে, সমন্বিত অর্থনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে ভারত এখানে ভূমিকা রাখতে চায়। এটা (রুপিতে বাণিজ্য) একটা উদ্ভাবনী উদ্যোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অর্থনীতির জন্যই শুধু ইতিবাচক নয়, ব্যবসায়ীদের লেনদেনকে আরো সহজ করবে। লেনদেনের খরচই শুধু কমবে না, কম সময়ে লেনদেনে ঝুঁকিও কমে আসবে। এ ক্ষেত্রে আরো উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
এই লেনদেন শুরু হওয়ার পর রপ্তানি আয় বাবদ যে পরিমাণ রুপি আসবে, সমপরিমাণ আমদানি দায় নিষ্পত্তি করতে পারবে ব্যাংক। আবার স্বল্প মেয়াদে রুপি ঋণ নিয়ে আমদানি করা যাবে। এতে ডলারের ওপর সৃষ্ট চাপ সাময়িকভাবে কমবে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের সোনালী, ইস্টার্ন এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে রুপিতে লেনদেন করতে পারবেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ভারত অংশে এসম্পর্কিত বিষয়ের দায়িত্বে থাকবে দেশটির আইসিআইসিআই ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। রুপিতে লেনদেনের চাহিদা বাড়লে পর্যায়ক্রমে অন্য ব্যাংককেও অনুমতি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মো. সলিমুল্লাহ, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম, ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলি রেজা ইফতেখার, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ এবং বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ‘কারেন্সি সোয়াপ’ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আলোচনা চলছে প্রায় এক দশক ধরে। বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে। সে সময় ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে রুপি ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
প্রিন্ট