জেন্ডার বা লিঙ্গ সমতার বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের ১২ ধাপ উন্নতি হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) প্রতি বছর ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ নামে এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। ডব্লিউইএফ গতকাল জেনেভা থেকে ২০২৩ সালের যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬ দেশের মধ্যে ৫৯তম। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭১তম। এ বছর বাংলাদেশের স্কোর শূন্য দশমিক ৭২২। গত বছর শূন্য দশমিক ৭১৪ স্কোর ছিল। স্কোর নির্ধারণের ক্ষেত্রে শূন্য হলো সর্বনিম্ন এবং এক হলো সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবার চেয়ে ভালো করছে। এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উপসূচকে এ দেশ অন্যদের চেয়ে বেশ এগিয়ে। এবার এই উপসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। গত বছর ছিল নবম। বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে সরকারপ্রধান নারী থাকায় এবং জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন থাকায় রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সমতার দিক থেকে অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। তবে সেই অনুপাতে স্কোর খুব বেশি নয়। শূন্য দশমিক ৫৫২ স্কোর নিয়েও বাংলাদেশ ওপরের দিকের অবস্থানে থাকার কারণ হলো, অন্য অনেক দেশের স্কোর আরও কম। মাত্র ১২টি দেশের স্কোর ৫৫ শতাংশের বেশি। ৬৭টি দেশে গত ৫০ বছরে রাষ্ট্রপ্রধান নারী ছিলেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে লিঙ্গ বৈষম্য পরিস্থিতির কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে তা সামান্য। গত বছরের চেয়ে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট স্কোর বেড়েছে। ক্ষমতায়নের জন্য শ্রমশক্তিতে এবং নেতৃত্ব, ব্যবসা ও সরকারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
তিন মানদণ্ডে প্রথম বাংলাদেশ
ডব্লিউইএফ জেন্ডার সমতার পরিস্থিতি জানতে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, শিক্ষায় অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ এবং স্বাস্থ্য ও অস্তিত্ব নামে ৪টি উপসূচকে আলাদা স্কোর নির্ধারণ করে। এসব স্কোর যোগ করে মোট স্কোর নির্ণয় করা হয়। প্রতিটি উপসূচকের আবার কয়েকটি করে মানদণ্ড রয়েছে। বাংলাদেশ এর তিনটি মানদণ্ডে বিশ্বে সবার সেরা। রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন উপসূচকে ৫০ বছরে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মানদণ্ডে বাংলাদেশ প্রথম। কেননা পুরুষের চেয়ে নারী বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে এ পদে আসীন ছিলেন। শিক্ষা উপসূচকে নারীদের মাধ্যমিক শিক্ষায় ভর্তি মানদণ্ডও বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য উপসূচকে জন্মহারের মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থান ১ নম্বরে।
কোথায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
সার্বিকভাবে শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক সুযোগ এবং স্বাস্থ্যসূচকে অনেক পিছিয়ে আছে। এসব উপসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০-এর ওপরে। যদিও এসব সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের চেয়ে কিছুটা এগিয়েছে। নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২২তম। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার, একই কাজের জন্য পুরুষের সমান বেতন ইত্যাদি মানদণ্ডে বাংলাদেশ পেছনের সারিতে রয়েছে। শিক্ষাসূচকে স্বাক্ষরতার হার এবং উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণে নারী অনেক পিছিয়ে আছে। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ‘জন্মকালে জীবন প্রত্যাশা’ মানদণ্ডেও পেছনের সারিতে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় এবারও শীর্ষে
বাংলাদেশের স্কোর দক্ষিণ এশিয়ার এবারও সর্বোচ্চ। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, অনেক উন্নত দেশও বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভুটান রয়েছে দ্বিতীয়, যার অবস্থান ১০৩তম। এর পর শ্রীলঙ্কা ১১৫তম। যথাক্রমে নেপাল ১১৬তম, মালদ্বীপ ১২৪তম, ভারত ১২৭তম, পাকিস্তান ১৪২তম এবং আফগানিস্তান ১৪৬তম। বৈশ্বিকভাবে শীর্ষ ৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে– আইসল্যান্ড, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেন।
প্রিন্ট