ডিজিটাল ডিভাইস বা প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সমাজে নারীদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর চালানো নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেদিন আমি এবং আমার বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছি। আমার বোন এবং আমাকে ছয় বছর ধরে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করতে হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দল আওয়ামী লীগ তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করার পর ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুর দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও নিরক্ষরতামুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার নিয়ে দেশে ফেরেন। তিনি বলেন, ফিরে এসে তিনি খাদ্য ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছেন। তাঁকে বারবার অন্তরিন করে রাখা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার জীবননাশের জন্য কমপক্ষে ১৯ বার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর একটি ছিল ২০০৪ সালের আগস্টে, যখন আমাকে হত্যা করার জন্য আমার ওপর এক ডজন আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আমি বেঁচে গিয়েছি, কিন্তু আমার দলের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত এবং কয়েক শতাধিক আহত হয়েছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি শুধু তাঁর দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তাঁর সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন, ‘আমি যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন আমি সংগ্রাম চালিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। আমার স্বপ্ন হলো আমাদের বদ্বীপকে আবারও সমৃদ্ধির দেশে পরিণত করা।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ পরবর্তী ২১ বছর সামরিক ও আধাসামরিক শাসনের অধীনে ছিল এবং জনগণের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমার দল, আওয়ামী লীগ, ২১ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয় এবং আমি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলাম। পাঁচ বছরে আমরা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম এবং তারপর হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং সামরিক হস্তক্ষেপের আরেকটি অন্ধকার সময় অতিক্রম করতে হয়েছিল।’
তিনি বলেন, তাঁদের দল ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে পুনর্নির্বাচিত হয় এবং তার পর থেকে টানা দুই মেয়াদে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার বাবা যা চেয়েছিলেন, ‘একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ’, তার জন্য আমরা গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে বাংলাদেশকে প্রস্তুত করেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ প্রায় সব আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সন্তোষজনক অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি, যার জিডিপি ৪৬০.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা খাদ্য নিরাপত্তা, বিনা মূল্যে ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল পরিষেবা, প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জলবায়ু অভিযোজনে সন্তোষজনক অগ্রগতি অর্জন করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে আমরা এখন নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ব্যাপারে বিশ্বের সেরা ১০টি দেশের মধ্যে আছি। বাংলাদেশই সম্ভবত একমাত্র দেশ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদ উপনেতার সবাই নারী।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল কাতারের দোহায় র্যাফেলস টাওয়ারের দ্বিপক্ষীয় সভাকক্ষে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। – ছবিঃ সংগৃহীত।
প্রিন্ট