গ্রামের সহজ-সরল, দুর্বল ও অসহায় আব্দুল হক নামের এক ভাইয়ের সম্পদ আত্মসাতের লোভে অপর দুই প্রভাবশালী ভাই ইয়াসিন ও মনিরের বিরুদ্ধে অত্যচারের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ৩ নং শুকতাইল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের উত্তর শুকতাইল গ্রামে। এঘটনায় আব্দুল হক বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করেছেন। যার নম্বর- ৪৯৭/২০২৩ ইং।
সরজমিনে গিয়ে বাদী, স্বাক্ষী, আসামি ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, অত্যচারের শিকার আব্দুল হক পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বড়। তাদের পিতা মারা যাওয়ায় পর মা আলেয়া বেগম এবং ছোট ভাই বোনদের দায়িত্ব পড়ে আব্দুল হকের কাঁধে। কৃষিকাজ ও পরের জমিতে দিন মজুরের কাজ করে ছোট ভাই বোনদের লেখাপড়া করিয়ে বড় করেন।
পর্যায়ক্রমে এক ভাইকে পারটেক্স কোম্পানিতে চাকুরী, দুই বোন ও এক ভাইয়ের বিবাহ করান। পরবর্তিতে ছোট ভাই মনির শেখের চাকুরীর কিছু আয় ও আব্দুল হকের কষ্টে উপার্জিত জমানো টাকা দিয়ে বাড়ীতে একটি বিল্ডিংঘর তৈরি করে। পরে ছোট ভাইকেও পাশ্ববর্তী গোপিনাথপুর গ্ৰামের লাঠিয়াল পরিবারে বিবাহ দেয়।
কয়েক বছর পরে ছোট দুই ভাই স্ত্রীদের নিয়ে পৃথক হয়ে সংসার শুরু করে। মেজো ভাই ইয়াছিন শেখ আলাদা ঘর তৈরি করলেও ছোট ভাই মনির যৌথ বিল্ডিংটি পুরোপুরি দখল করে নেয়। একপর্যায়ে আব্দুল হক ও তার মা আলেয়া বেগম ভাঙ্গা জরাজীর্ণ ঘরে অসহায় হয়ে পড়ে। পরবর্তি আব্দুল হক ছোট ভাইয়ের কাছে বিল্ডিং ঘরের অংশ চাইলে শুরু হয় অত্যচার।দেওয়া হয় বিভিন্ন অপবাদ।
একপর্যায়ে বিষয়টি গ্রামবাসী ছাড়িয়ে চলে যায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশ পর্যন্ত। এতে আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয় ইয়াছিন, মনির ও তাদের স্ত্রী’রা, শুরু হয় পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা।
প্রভাবশালী দুই ভাই মিলে কোণঠাসা করে সহজ সরল খেটে খাওয়া আব্দুল হক কে। অবহেলা ও খারাপ আচরণের পাশাপাশি বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি। বাধ্য হয়ে জীবনের নিরাপত্তার জন্য ফৌঃ কাঃ বিঃ ১০৭/১১৭ ধারায় ৮ জনকে আসামি করে গোপালগঞ্জ নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫৭/২৩ নং মামলা করেন আবদুল হক।
মামলা করায় আরো ক্ষিপ্ত হয় ইয়াছিন, মনির, মনিরাসহ অন্যান্য আসামিগণ। এ মামলার আসামিরা হাজিরা দিয়ে এসে গত ২০ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে পরিকল্পিত ও আব্দুল হকের উপর হামলা চালিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে গ্ৰামবাসী তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে আহত আব্দুল হক বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে ১৪৩, ৪৪৪, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ৩৭৯, ৪২৭, ৫০৬(২)১১৪/ ৩৪ ধারায় আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
এবিষয়ে মামলার স্বাক্ষী ও আব্দুল হকের মা আলেয়া বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার সহজ-সরল ছেলের উপর অত্যাচার হচ্ছে। দিনের আলোতে সকলের সামনে কোপানো হয়েছে আমার আব্দুল হক কে, আইন আদালতে গিয়েও কোন বিচার পাচ্ছে না।
শুকতাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রানা মোল্লা বলেন, এটি একটি পারিবারিক কলহ, বড় ভাইয়ের সাথে ছোট দুই ভাইয়ের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ। পরবর্তিতে থানা পুলিশ পর্যন্ত গিয়েছে, আমি বর্তমানে মিটমাটের চেষ্টা করছি।
গোপিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির (এস.আই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দাস বলেন, এটি একটি সি, আর মামলা, আমরা মেডিকেল রিপোর্টের জন্য হাসপাতালে চিঠি দিয়েছি, মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেলে তদন্ত রিপোর্ট আদালতে প্রেরণ করা হবে।
প্রিন্ট