ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট গ্রামের বিশ্বাস পাড়া এলাকার বাদশা বিশ্বাসের ছেলে জুবায়ের বিশ্বাস(১৭),ইদ্রিস আলী বিশ্বাসের ছেলে নাহিদ বিশ্বাস(১৮) ও মজিবর সরদারের ছেলে মিম সরদার(১৭)। তারা ছিলেন সমবয়সী আত্মার তিন বন্ধু। একই সাথে বেড়ে ওঠা,চলফেরা সবই ছিল একসঙ্গে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। একই সাথে তারা পৃথিবী থেকে বিদায়ও নিয়েছেন। মেলা দেখে ফেরার পথে মোটরসাইকেল আরোহী তিন বন্ধু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তাদের কবরও দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি।
বুধবার(১৭ মে) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জানাজা শেষে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তিন বন্ধুকে বাগাট কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের বিশ্বাসপাড়া গ্রামের বাদশা বিশ্বাসের ছেলে জুবায়ের বিশ্বাস(১৭)এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর বাগাট বাজারে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতেন, ইদ্রিস বিশ্বাসের ছেলে নাহিদ বিশ্বাস (১৮)কলেজ ছাত্র ও মজিবর সরদারের ছেলে হুসাইন সরদার মিম (১৭) ছিলেন ছাত্র। তিনি গত বছর এইচএসসি পাস করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে নাহিদ বিশ্বাসের বাবা ইদ্রিস বিশ্বাসের মোটরসাইকেল নিয়ে তিন বন্ধু পাশেই কামারখালীতে ঋষি বটতলা এলাকায় মেলা দেখতে যান। তিনজনের মধ্যে শুধু নাহিদ বিশ্বাসের মাথায় হেলমেট ছিল। তারা মেলা দেখে ফেরার পথে ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়েন। ঝড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে একটি গাছের ঢাল উপড়ে পড়ে ছিল। সেটি পাশ কাটাতে গিয়ে গাছের ডালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনজনই পড়ে যান। এ সময় মাগুরাগামী দ্রুতগতির একটি বাস তাদের চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরিবার সুত্রে জানাযায়, কলেজ ছাত্র নাহিদ বিশ্বাস তিন বোন ও দুই ভাই। তাদের মধ্যে নাহিদ সবার ছোট। তিন বোনই বিবাহিত। বড় ভাই ইব্রাহিম (২২) ওমান থাকেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট জুবায়ের বিশ্বাস। এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর স্থানীয় বাজারে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতেন।
হুসাইন সরদার মিম ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হুসাইনের বাবা-মা।
বাগাট বিশ্বাসপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, আমার বাড়ির পাশেই তাদের বাড়ি। জুবায়ের বিশ্বাস ও নাহিদ বিশ্বাস তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই হলেও একসাথেই বন্ধুর মতো ছিলো তাদের চলাফেরা থেকে শুরু করে সবকিছু। প্রায়ই তাদের সাথে দেখা হলে সালাম দিতো। নম্র-ভদ্র ছিল। তারা কোন খারাপ কাজের সাথে জড়িত এ অভিযোগ কখনো শুনিনি। তিনটি তাজা প্রাণ যে এভাবে ঝরে যাবে বিশ্বাস করতে পারছি না। নিহতের পর তাদের মরদেহ গাড়িতে তোলা, লাশ দাফনে সহোযোগিতা করেছি। নিজের কাছেই খুব কষ্ট লাগছে।
এ বিষয়ে বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান খান বলেন, তারা তিন জনই আত্মার বন্ধু। ভালো ছেলে হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। আচার-ব্যবহারও ভালো ছিল। নরম ও বিনয়ী স্বভাবের ছেলে ছিল তারা। আজ পর্যন্ত তাদের নামে কোনো রকম বদনাম শুনিনি। এমন মরণ কোন ভাবেই মানা যায় না। তিনি আরও বলেন, বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নামাজের জানাজা শেষে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে স্থানীয় বাগাট কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাদের তিন জনকে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের শান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই। তিন তরুণের পরিবারেই চলছে শোকের মাতম। এলাকার হাজার হাজার মানুষ তাদের জানাজায় অংশ নেন এবং অশ্রুশিক্ত নয়নে তাদের চিরবিদায় দেয়।
মঙ্গলবার(১৬ মে) রাত পৌনে ৮ টার দিকে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্য ওই তিন কিশোর কামারখালী থেকে একটি মোটরসাইকেল যোগে বাড়ির দিকে ফিরতে ছিলেন। এ সময় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বাগাট পশ্চিম পাড়া নবাব আলীর বাড়ির সামনে অজ্ঞাত পরিবহন বাস তাদের চাপা দেয়। এতে তিন মোটরসাইকেল আরোহী তিন বন্ধু ঘটনাস্থলে নিহত হন।

প্রিন্ট