আলিফ হোসেনঃ
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) রাজশাহীর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব জোরপূর্বক গ্রহণসহ কার্যালয় থেকে বের করে দেয়া ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটনের বিষয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
.
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে আহবায়ক করে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মীর্জা ইমাম উদ্দিন, রাজশাহী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শরিফুল ইসলাম, বিএমডিএ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরোক ও জাফরুল্লাহ। আগামি ১৭ মে শনিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ও ১৮মে রোববার বিএমডিএ ভবনে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
.
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলির আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু রিলিজ অর্ডার না পাওয়ায় তিনি দফতর ছাড়তে পারছিলেন না।
.
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,এমতাবস্থায় ২৩ মার্চ দুপুরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিএমডিএর ইডির দফতরে ঢুকে তারা শফিকুল ইসলামকে জোরপূর্বক দফতর ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ঘটনার পর অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম কৃষি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে গত ২৫ মার্চ মামলা করেন নগরীর রাজপাড়া থানায়।
.
শফিকুল ইসলামের অভিযোগ, তিনি মন্ত্রণালয়ের রিলিজ স্লিপ না পাওয়ায় বিএমডিএ থেকে অবমুক্ত হতে পারছিলেন না। রিলিজ স্লিপ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে বিএমডিএতে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়।কিন্ত্ত এরই মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম খানের নেতৃত্বে তার অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিএমডিএ ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করছিলেন। তিনি তাদের রিলিজ স্লিপ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেননি।
.
গত ২৩ মার্চ কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই জাহাঙ্গীর আলম খাঁন ইডির পদ ‘দখল’ করেন। গত বছরের জুলাইয়ে শফিকুল ইসলামকে বিএমডিএর ইডি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল। পরে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখার প্রজ্ঞাপনে তাকে রাজশাহীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। তবে রিলিজ স্লীপ না পাওয়ায় রেশম উন্নয়ন বোর্ডে যোগ না দিয়ে শফিকুল ইসলাম এক মাস ধরে বিএমডিএতেই ছিলেন।
.
এদিকে বিএমডিএর সদ্য বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলাম একটি মামলা করেছেন তাকে তার পদ থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মজিবুর রহমানসহ ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো ৫০-৬০ জনকে।
.
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৫ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এক অফিস আদেশে জাহাঙ্গীর আলম খাঁনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন। এতে বলা হয়, জাহাঙ্গীর আলম খানের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং যেহেতু সরকার জনস্বার্থে তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন মর্মে বিবেচনা করে, সেহেতু সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ ও সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০১৩-এর উপধারা ২(গ)তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও ওই অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
.
জাহাঙ্গীর আলম খান তাকে অবসরে পাঠানোর আদেশ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তার করা একটি রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল বুধবার শুনানী শেষে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি রাজিক-আল জলিল এবং বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদীর যৌথ বেঞ্চ অবসরে পাঠানো সংক্রান্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন। এছাড়া বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা এবং সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাময়িক বরখাস্তের আদেশও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন একই আদালত। গত ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: ফরিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
.
অন্যদিকে বিএমডিএর একটি সুত্র জানায়,এই আদেশের বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন এবং তাদের পক্ষে রায় পেয়েছেন। এদিকে এসব নানা কারণে বিএমডিএ-তে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিএমডিএতে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা ঠিক। তবে এটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টা এখন মন্ত্রণালয় দেখছে।
প্রিন্ট