ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে Logo সুন্দরবন প্রেসক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন Logo বাগাতিপাড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে স্বামীর আত্মহত্যা ! Logo কালুখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ Logo বাগাতিপাড়ায় জাটকা মাছ জব্দ করে দন্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

রাত একটা বাজলেই সেহরী নিয়ে হাজির মাহবুব

ঘড়ির কাটায় রাত তখন একটা। পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরে এসে থামে একটি অটোরিকশা। এরপর এক যুবক অটোরিকশা থেকে নেমে ‘সেহরী সেহরী’ বলে ডাকতে শুরু করেন। তার ডাকে আশপাশ থেকে চলে আসেন রিক্সাচালক, ছিন্নমুল, পথচারী মানুষ।

এরপর তাদের সবার হাতে রান্না করা সেহরী খাবারের প্যাকেট তুলে দেন ওই যুবক। তার নাম দেওয়ান মাহবুব। মানবিক কাজের জন্য সবার কাছে তিনি মাহবুব ভাই নামেই পরিচিত। রমজানের শুরু থেকেই তিনি শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে প্রতিরাতে বিনামুল্যে এসব মানুষের মাঝে সেহরী বিতরণ করে আসছেন।


রাত একটা বাজলেই রান্না করা সেহরী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সেহরী বিতরণ করেন মাহবুব। পথচারী, দিনমজুর, ছিন্নমুল, নৈশপ্রহরী, হাসপাতালের রোগী, স্বজনদের মাঝে তিনি সেহরী বিতরণ করেন। বিভিন্ন মানুষের আর্থিক সহায়তা ও দানের টাকায় গত চারবছর ধরে প্রতি রমজান মাসে এভাবেই মানবিক কাজ করে আসছেন সবার প্রিয় মাহবুব ভাই।

দেওয়ার মাহবুরের বাসা পাবনা পৌর শহরের শিবরামপুর মহল্লায়। তার পিতার নাম অধ্যাপক দেওয়ান আজিজুল ইসলাম। তিনিও একজন মানবিক পরোপকারী মানুষ হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

আলাপকালে দেওয়ান মাহবুব জানান, বিভিন্ন মানুষের দান ও আর্থিক সহায়তার টাকা দিয়ে প্রতিদিন বাজার করা থেকে শুরু করে রান্না ও প্যাকেটিং করার কাজ নিজেরাই করেন। প্রতিরাতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ৫শ’ টাকা। সবখরচ মিলিয়ে প্রতি প্যাকেট সেহরীতে খরচ পড়ে ৬০ টাকা। এভাবে প্রতিরাত একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০ প্যাকেট সেহরী মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বর থেকে অন্তত মোড়, রায় বাহাদুর গেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, এ আর কর্নার, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সহ অন্তত সাতটি পয়েন্টে সেহরী বিতরণ করেন মাহবুব। নৈশ প্রহরী, রিক্সাচালক, ছিন্নমুল, পথচারী মানুষ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের মাঝে এই সেহরী বিতরণ করা হয়। কারণ তারা সেহরী করার সুযোগ পান না।

দেওয়ান মাহবুব বলেন, এই সেহরী কারা খায়। দেখবেন যারা রাতে রিক্সা চালায়। নৈশপ্রহরী দায়িত্ব পালন করা মানুষ। যাদের বাসা দূরে। হঠাৎ করে হাসপাতালে এসেছে রোগী নিয়ে, কিন্তু খাবার আনতে পারেনি। ছিন্নমুল মানুষ, পথচারী। তাদের কথা চিন্তা করে গত চার বছর ধরে প্রতি রমজান মাসে এই সেহরী বিতরণ করে আসছেন তিনি।

মাহবুব জানান, তবে সেহরীর চাহিদা রয়েছে আরো বেশি। অন্তত ৩৫০ জন মানুষকে প্রতিরাতে সেহরী দিতে পারলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যেত। কিন্তু আর্থিক সামর্থ না থাকায় সেটি দিতে না পেরে কষ্ট পান তিনি। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন মাহবুব।

প্রতিরাতে সময়মতো সেহরী পেয়ে খুশি মাহবুর ভাইয়ের সেহরীর অপেক্ষায় থাকা ওই সব মানুষ। তারা বলেন, এমন মানবিক কাজ করায় মাহবুবকে স্যালুট জানান তারা।

রিক্সাচালক সদর উপজেলার বাগচীপাড়া এলাকার নাজমুল ইসলাম, পাটকিয়াবাড়ি এলাকার বিল্লাল হোসেন ও ইসলামপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা মধ্যরাতে রিক্সা চালাই। কিন্তু একদিকে গরীব মানুষ, সেহরী খেতে পারি না, অন্যদিকে রাত জেগে রিক্সা চালাতে গিয়ে বাড়িতে সেহরী খাওয়া যায় না। মাহবুব ভাই প্রতিরাতে সেহরী দিয়ে যান। আমরা সেটা খেয়ে রোজা থাকি।

শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের বিভিন্ন অফিসের নৈশপ্রহরী সাইদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ি দূরে। রাত জেগে প্রহরীর কাজ করি। সেহরী খাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না। গত চার বছর ধরে মাহবুব ভাই আমাদের সেহরী দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তার অপেক্ষায় থাকি। সেহরী পেয়ে আমাদের খুব উপকার হয়। তার এই কাজটাকে আমরা স্যালুট জানাই।

দেওয়ান মাহবুব জানান, ২০১১ সালে আমরা তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন করেছি। সেই সংগঠনের উদ্যোগে সপ্তাহে দুইদিন শুক্র ও মঙ্গলবার বিনামূল্যে অসহায় মানুষদের ওষুধ বিতরণ করা হয়। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে টিউবওয়েল স্থাপন, নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন, মুরগী ও ছাগল বিতরণ করা হয়। বেকার দুস্থ মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পুকুরে মাছ চাষের জন্য মাছের পোনা ও খাদ্য সরবরাহ করা হয়। করোনাকালে ২২টি লাশ দাফন করা হয়েছে। কোরবানীর ঈদে সমাজের গরীব দুস্থদের মাঝে গরুর গোশত করা হয়। আর এসবই করা হয় সমাজের মানবিক মানুষের দানের টাকায়।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু

error: Content is protected !!

রাত একটা বাজলেই সেহরী নিয়ে হাজির মাহবুব

আপডেট টাইম : ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য তুষার, পাবনা জেলা প্রতিনিধি :
ঘড়ির কাটায় রাত তখন একটা। পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরে এসে থামে একটি অটোরিকশা। এরপর এক যুবক অটোরিকশা থেকে নেমে ‘সেহরী সেহরী’ বলে ডাকতে শুরু করেন। তার ডাকে আশপাশ থেকে চলে আসেন রিক্সাচালক, ছিন্নমুল, পথচারী মানুষ।

এরপর তাদের সবার হাতে রান্না করা সেহরী খাবারের প্যাকেট তুলে দেন ওই যুবক। তার নাম দেওয়ান মাহবুব। মানবিক কাজের জন্য সবার কাছে তিনি মাহবুব ভাই নামেই পরিচিত। রমজানের শুরু থেকেই তিনি শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে প্রতিরাতে বিনামুল্যে এসব মানুষের মাঝে সেহরী বিতরণ করে আসছেন।


রাত একটা বাজলেই রান্না করা সেহরী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সেহরী বিতরণ করেন মাহবুব। পথচারী, দিনমজুর, ছিন্নমুল, নৈশপ্রহরী, হাসপাতালের রোগী, স্বজনদের মাঝে তিনি সেহরী বিতরণ করেন। বিভিন্ন মানুষের আর্থিক সহায়তা ও দানের টাকায় গত চারবছর ধরে প্রতি রমজান মাসে এভাবেই মানবিক কাজ করে আসছেন সবার প্রিয় মাহবুব ভাই।

দেওয়ার মাহবুরের বাসা পাবনা পৌর শহরের শিবরামপুর মহল্লায়। তার পিতার নাম অধ্যাপক দেওয়ান আজিজুল ইসলাম। তিনিও একজন মানবিক পরোপকারী মানুষ হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

আলাপকালে দেওয়ান মাহবুব জানান, বিভিন্ন মানুষের দান ও আর্থিক সহায়তার টাকা দিয়ে প্রতিদিন বাজার করা থেকে শুরু করে রান্না ও প্যাকেটিং করার কাজ নিজেরাই করেন। প্রতিরাতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ৫শ’ টাকা। সবখরচ মিলিয়ে প্রতি প্যাকেট সেহরীতে খরচ পড়ে ৬০ টাকা। এভাবে প্রতিরাত একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০ প্যাকেট সেহরী মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বর থেকে অন্তত মোড়, রায় বাহাদুর গেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, এ আর কর্নার, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সহ অন্তত সাতটি পয়েন্টে সেহরী বিতরণ করেন মাহবুব। নৈশ প্রহরী, রিক্সাচালক, ছিন্নমুল, পথচারী মানুষ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের মাঝে এই সেহরী বিতরণ করা হয়। কারণ তারা সেহরী করার সুযোগ পান না।

দেওয়ান মাহবুব বলেন, এই সেহরী কারা খায়। দেখবেন যারা রাতে রিক্সা চালায়। নৈশপ্রহরী দায়িত্ব পালন করা মানুষ। যাদের বাসা দূরে। হঠাৎ করে হাসপাতালে এসেছে রোগী নিয়ে, কিন্তু খাবার আনতে পারেনি। ছিন্নমুল মানুষ, পথচারী। তাদের কথা চিন্তা করে গত চার বছর ধরে প্রতি রমজান মাসে এই সেহরী বিতরণ করে আসছেন তিনি।

মাহবুব জানান, তবে সেহরীর চাহিদা রয়েছে আরো বেশি। অন্তত ৩৫০ জন মানুষকে প্রতিরাতে সেহরী দিতে পারলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যেত। কিন্তু আর্থিক সামর্থ না থাকায় সেটি দিতে না পেরে কষ্ট পান তিনি। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন মাহবুব।

প্রতিরাতে সময়মতো সেহরী পেয়ে খুশি মাহবুর ভাইয়ের সেহরীর অপেক্ষায় থাকা ওই সব মানুষ। তারা বলেন, এমন মানবিক কাজ করায় মাহবুবকে স্যালুট জানান তারা।

রিক্সাচালক সদর উপজেলার বাগচীপাড়া এলাকার নাজমুল ইসলাম, পাটকিয়াবাড়ি এলাকার বিল্লাল হোসেন ও ইসলামপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা মধ্যরাতে রিক্সা চালাই। কিন্তু একদিকে গরীব মানুষ, সেহরী খেতে পারি না, অন্যদিকে রাত জেগে রিক্সা চালাতে গিয়ে বাড়িতে সেহরী খাওয়া যায় না। মাহবুব ভাই প্রতিরাতে সেহরী দিয়ে যান। আমরা সেটা খেয়ে রোজা থাকি।

শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের বিভিন্ন অফিসের নৈশপ্রহরী সাইদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ি দূরে। রাত জেগে প্রহরীর কাজ করি। সেহরী খাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না। গত চার বছর ধরে মাহবুব ভাই আমাদের সেহরী দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তার অপেক্ষায় থাকি। সেহরী পেয়ে আমাদের খুব উপকার হয়। তার এই কাজটাকে আমরা স্যালুট জানাই।

দেওয়ান মাহবুব জানান, ২০১১ সালে আমরা তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন করেছি। সেই সংগঠনের উদ্যোগে সপ্তাহে দুইদিন শুক্র ও মঙ্গলবার বিনামূল্যে অসহায় মানুষদের ওষুধ বিতরণ করা হয়। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে টিউবওয়েল স্থাপন, নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন, মুরগী ও ছাগল বিতরণ করা হয়। বেকার দুস্থ মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পুকুরে মাছ চাষের জন্য মাছের পোনা ও খাদ্য সরবরাহ করা হয়। করোনাকালে ২২টি লাশ দাফন করা হয়েছে। কোরবানীর ঈদে সমাজের গরীব দুস্থদের মাঝে গরুর গোশত করা হয়। আর এসবই করা হয় সমাজের মানবিক মানুষের দানের টাকায়।


প্রিন্ট