ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বিশ টাকার শিক্ষক! 

ফখরুল আলম। বয়স ৮০ বছরের কাছাকাছি। একজন সাদা মনের মানুষ। জীবনযুদ্ধে নেমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। পেশায় একজন প্রাইভেট শিক্ষক, তবে অন্যদের থেকে আলাদা তিনি। প্রতিদিন মাত্র ২০ টাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়ান। বাইসাইকেল চালিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান ফখরুল আলম। তার বাইসাইকেলের সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো। তাতে লেখা- ‘পড়াইতে চাই। প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি। প্রতিদিন ২০ টাকা।’ যা নজর কাড়ছে মানুষের।

সংসারের ভরণপোষণ নির্বাহ করতেই জীবন সায়াহ্নে এসে অনেকটা বাধ্য হয়েই ফখরুল আলমকে প্রাইভেট শিক্ষকতার পেশা বেছে নিতে হয়েছে। সাত সন্তানের জনক ফখরুল আলমের কাঁধে এখনও রয়েছে সংসারের ভার। বড় ছেলে মারা গেছেন। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তারা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিরত মেজো ছেলে মাঝেমধ্যে কিছু টাকা দেন। তা দিয়ে অসুস্থ সহধর্মিণীর ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই হার্টের রোগী। মাঝেমধ্যে নিজেকে এবং সহধর্মিণীকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। সংসারের খরচ এবং ওষুধ কিনতে গিয়ে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয়। এরপর আবার ছোট তিন ছেলে এবং এক মেয়ের লেখাপড়ার খরচ তাকেই দিতে হয়।

ফখরুলের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বড়রিয়া গ্রামে।ফখরুল আলম গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রতিদিন প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণির ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন। এ থেকে তার প্রতিদিনের আয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এর মধ্যে অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের বিনা টাকায় পড়ান। এর আগে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। চাকরি ছেড়ে বাড়িতে আসার পর সমাজের ঝরে পড়া শিশুদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন তিনি। প্রাইভেট পড়ানোর সময় মিশে যান ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। প্রতিটি শিশুকে মন থেকে ভালোবাসেন তিনি। তাদের মন জয় করে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেন। এজন্য এলাকার মানুষের কাছে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় এক বছর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবিমুখ হওয়ায় ফখরুল আলমের এই শিক্ষাব্যবস্থা অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছে।

ফখরুল আলম বলেন, বাচ্চাদের পড়াই এবং তাদের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করি। যারা টাকা দিতে পারে না তাদের ফ্রি পড়াই। আবার অনেকের কাছ থেকে ২০ টাকার কমও নিই। তিনি বলেন, তবে এখন আমার বয়স হয়েছে। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারা যার যার সংসার করছে। মেজো ছেলে কিছু টাকা দেয়। তা দিয়ে আমাদের ওষুধই হতে চায় না। বাধ্য হয়ে জীবিকার জন্য এখনও বিভিন্ন গ্রামের ছেলেমেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়াই।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তহমিনা পারভীন জানায়, ফখরুল আলম স্যার অনেক ভালো মানুষ। খুব সুন্দর করে তাদের বুঝিয়ে পড়ান।

ধোয়াইল গ্রামের অভিভাবক আলমগীর হোসেন বলেন, বাইসাইকেলের সামনে লেখা “২০ টাকায় পড়াতে চাই” দেখে আমার মেয়েকে পড়াতে বলেছিলাম। যেদিন তিনি পড়াবেন সেদিন ২০ টাকা দিতে হবে।’

বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্নু মোল্যা জানান, ফখরুল স্যার আমাদের শ্রদ্ধার একজন মানুষ। তিনি অনেক ছাত্রছাত্রীকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন। তার অনেক ছাত্রছাত্রী এখন ভালো ভালো পদে কর্মরত আছেন।

ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, ফখরুল আলম সম্পর্কে জেনে আমি অভিভূত হয়েছি। তিনি কোনো সহযোগিতার আশা করলে আমার সদিচ্ছা থাকবে।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

বিশ টাকার শিক্ষক! 

আপডেট টাইম : ১২:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মার্চ ২০২১

ফখরুল আলম। বয়স ৮০ বছরের কাছাকাছি। একজন সাদা মনের মানুষ। জীবনযুদ্ধে নেমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। পেশায় একজন প্রাইভেট শিক্ষক, তবে অন্যদের থেকে আলাদা তিনি। প্রতিদিন মাত্র ২০ টাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়ান। বাইসাইকেল চালিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান ফখরুল আলম। তার বাইসাইকেলের সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো। তাতে লেখা- ‘পড়াইতে চাই। প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি। প্রতিদিন ২০ টাকা।’ যা নজর কাড়ছে মানুষের।

সংসারের ভরণপোষণ নির্বাহ করতেই জীবন সায়াহ্নে এসে অনেকটা বাধ্য হয়েই ফখরুল আলমকে প্রাইভেট শিক্ষকতার পেশা বেছে নিতে হয়েছে। সাত সন্তানের জনক ফখরুল আলমের কাঁধে এখনও রয়েছে সংসারের ভার। বড় ছেলে মারা গেছেন। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তারা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিরত মেজো ছেলে মাঝেমধ্যে কিছু টাকা দেন। তা দিয়ে অসুস্থ সহধর্মিণীর ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই হার্টের রোগী। মাঝেমধ্যে নিজেকে এবং সহধর্মিণীকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। সংসারের খরচ এবং ওষুধ কিনতে গিয়ে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয়। এরপর আবার ছোট তিন ছেলে এবং এক মেয়ের লেখাপড়ার খরচ তাকেই দিতে হয়।

ফখরুলের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বড়রিয়া গ্রামে।ফখরুল আলম গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রতিদিন প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণির ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন। এ থেকে তার প্রতিদিনের আয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এর মধ্যে অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের বিনা টাকায় পড়ান। এর আগে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। চাকরি ছেড়ে বাড়িতে আসার পর সমাজের ঝরে পড়া শিশুদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন তিনি। প্রাইভেট পড়ানোর সময় মিশে যান ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। প্রতিটি শিশুকে মন থেকে ভালোবাসেন তিনি। তাদের মন জয় করে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেন। এজন্য এলাকার মানুষের কাছে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় এক বছর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবিমুখ হওয়ায় ফখরুল আলমের এই শিক্ষাব্যবস্থা অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছে।

ফখরুল আলম বলেন, বাচ্চাদের পড়াই এবং তাদের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করি। যারা টাকা দিতে পারে না তাদের ফ্রি পড়াই। আবার অনেকের কাছ থেকে ২০ টাকার কমও নিই। তিনি বলেন, তবে এখন আমার বয়স হয়েছে। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারা যার যার সংসার করছে। মেজো ছেলে কিছু টাকা দেয়। তা দিয়ে আমাদের ওষুধই হতে চায় না। বাধ্য হয়ে জীবিকার জন্য এখনও বিভিন্ন গ্রামের ছেলেমেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়াই।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তহমিনা পারভীন জানায়, ফখরুল আলম স্যার অনেক ভালো মানুষ। খুব সুন্দর করে তাদের বুঝিয়ে পড়ান।

ধোয়াইল গ্রামের অভিভাবক আলমগীর হোসেন বলেন, বাইসাইকেলের সামনে লেখা “২০ টাকায় পড়াতে চাই” দেখে আমার মেয়েকে পড়াতে বলেছিলাম। যেদিন তিনি পড়াবেন সেদিন ২০ টাকা দিতে হবে।’

বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্নু মোল্যা জানান, ফখরুল স্যার আমাদের শ্রদ্ধার একজন মানুষ। তিনি অনেক ছাত্রছাত্রীকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন। তার অনেক ছাত্রছাত্রী এখন ভালো ভালো পদে কর্মরত আছেন।

ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, ফখরুল আলম সম্পর্কে জেনে আমি অভিভূত হয়েছি। তিনি কোনো সহযোগিতার আশা করলে আমার সদিচ্ছা থাকবে।