ডালার পানিতে ঝাপটাচ্ছে নানা প্রজাতির জ্যান্ত মাছ। বড় বড় ডালায় সাজিয়ে বসে আছে মাছ বিক্রেতা। কিন্তু ক্রেতার দেখা মিলছে কম । কিছুক্ষণ পর পর দুই একজন আসলেও তারা দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ আধা কেজি থেকে সর্বোচ্চ এক/দেড় কেজি মাছ কিনছেন। বড় মাছ কেনার ক্রেতাও কম। তাই গোমড়া মুখে সময় পার করছেন মাছ ব্যবসায়ী। সোমবার(০৩-০৪-২০২৩) উপজেলা ও পৌরসভার হাট-বাজারের মাছ বাজারে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
ক্রেতা-ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এর আগে সকালের দিকে বাজারে মাছ তুলতেই দুপুর পর পরই শেষ হয়ে যেত। আগে একেকজন মাছ ব্যবসায়ী ৩০০/৪০০ কেজি মাছ বিক্রি করতেন। ক্রেতা কমের কারণে এখন ১০০ থেকে ১৫০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। ক্রোতরা বলছেন, কিছুটা হলেও সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে রোজার আগেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মাছের যথেষ্ট আমদানি রয়েছে। দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও কেনার লোক পাওয়া যাচ্ছেনা।
১ কেজি থেকে দেড়/দুই কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। কেজির নীচে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা,২ থেকে আড়াই কেজি ওজনের কাতল বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৭০ টাকা, কেজি ওজনের মৃগেল ১৮৬ টাকা, ৪/৫ কেজি ওজনের সিলভার কার্প মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কিংবা তার কমে। ২/৩ কেজি ওজনের পাঙাস ১৮১ টাকা আর ১ কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের পাঙাস মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। আকার ভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে তার উপরে। তেলা পেয়া ১৮০/১৯০ টাকা। পুকুরে চাষ করা পবদা প্রতি কেজি ৩২০ টাকা। আকার ভেদে শিং মাছ প্রতি কেজি ৪০০-৫৫০ টাকা,ছোট আকারের দেশি চেং মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি। আকারে বড় হলে দাম একটু বেশি।
মাছ ব্যবসায়ী সাহেব আলীর দোকান থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে ছোট আকারের ৫৫০ গ্রাম রুই মাছ কিনেছেন ছাতারি গ্রামের জহুরুল ইসলাম। তিনি জানান, রোজায় তুলনামূলকভাবে খরচ বেড়ে যায়। সেই তুলনায় আয় রোজগার কম। রমজান মাসে অটো ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন উপার্জন করেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। মাছ কিনলে অন্য বাজার করা যায়না। এর পরেও স্বাদ নিতে ছোট আকারের দুটি মাছ কিনলাম।
বাঘা সদর এলাকার আবুল কালাম আজাদ মাছ ব্যবসায়ী মানিক আলীর দোকান থেকে দেড় কেজি ওজনের ২টা রুই মাছ কিনেছেন ২৫০ টাকা কেজি দরে। ১০০ টাকা দরে কেজি ওজনের পাঙাস মাছ কিনেছেন বলিহার গ্রামের অভি সরকার। তারা জানান,আয়ের সাথে সংগতি রেখে বড় মাছ কিনতে পারছিনা। তারা জানান, যে দামে মাছ কিনেছেন, তুলনামূলকভাবে দাম কম হওয়ার কথা ছিল। কারণ হিসেবে তারা বলেন,হাটে মাছের আমদানির তুলনায় ক্রেতা কম।
মাছ বিক্রেতা সোহাগ হোসেন বলেন, রোজা শুরুর পর বাজারে মাছের দাম বাড়েনি। খদ্দেরের অভাবে বিক্রি কমে গেছে। আগে ৩০০-৪০০ কেজি মাছ বিক্রি করতেন। এখন বিক্রি করছেন ১০০-১৫০ কেজি। ইলিশ মাছ বিক্রেতা উজ্জল হোলদার বলেন, প্রতি হাটে ২/৩ মন ইলিশ মাছ বিক্রি করতেন। এখন ১ মন বিক্রি করতে পারছিনা। অপর মাছ বিক্রেতা ইনছার আলী বলেন, আজ রোববার ২৫০ টাকায় কেনা। ২০০ টাকায় বিক্রি। বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে মাছের দাম বেশি। বাজারে কেনার মানুষ কম। তাই হাটে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শাহদৌলা মৎস্য আড়তের স্বত্তাধিকারি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জাহিদুল ইসলাম বলেন,বাঘা বাজারে ৪ টা আড়ৎ মিলে ২০০ জন খুচরা মাছ বিক্রেতা রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১৫০ জন মাছ কিনে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ মণ মাছ বিক্রি হলেও বর্তমানে পরিমান কমে গেছে।
|
মাছ মৎস্য অফিসার সাহাদুল ইসলাম জানান, উপজেলায় মাছের চাহিদার তুলনায় ২৮০ মেট্রিক টন মাছ উদ্বৃত্ত হচ্ছে। উপজেলায় বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। উৎপাদন হচ্ছে ৫ হাজার ৮০ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বেশি মাছ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। গুড একোয়াকালচার প্রাকটিসের মাধ্যমে নিরাপদ মাছ উৎপাদনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্রিন্ট