কোটালীপাড়ায় মাহাতাব শিকদার নামের এক প্রবাসীর কাছথেকে জমি বিক্রির নামে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ৪ সদস্যের একটি প্রতারক চক্র। ওই প্রবাসীর ক্রয়কৃত জমি বুঝে পেতে বয়স্ক পিতা- মাতা ও পরিবারের সদস্যরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পতিকার পাচ্ছে না।
এছাড়াও ওই প্রতারক চক্রের প্রতারনার ঘটনাটি উভয় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের জানানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতারক চক্রের সদস্য শরিফুল খাঁন প্রবাসী মাহাতাব শিকদারের ভাই সালাউদ্দিন শিকদারকে বাড়ি থেকে তুলে নিবে বলে মোবাইল ফোনে হুমকি ধামকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এবিষয়ে সালাউদ্দিন শিকদার তথ্য প্রযুক্তি আইনে আদালতে মামলা করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।প্রতারণার শিকার হওয়া প্রবাসী মাহাতাব শিকদার গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার ১১নং পিঞ্জরী ইউনিয়নের কাগডাঙ্গা গ্ৰামের হাসমত আলী শিকদারের ছেলে। সে ১২ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে শ্রমিকের কাজ করছেন।
জানাগেছে দীর্ঘ চার বছর পূর্বে মনোয়ারা বেগম (মেমী) নামের এক মহিলার ৪৮ নং কাগডাঙ্গা মৌজার বি আর এস- ২৫৭, ৪৬১,৬০৩,৬১৮ ও ১৫২ নং সহ মোট ৫ টি দাগের বাবার বাড়ী হতে ভাগ পাওয়া সম্পত্তির অংশ সাড়ে ১৫ শতাংশ কৃষি জমি ওমান প্রবাসী মাহাতাবের কাছে বিক্রির প্রস্তাব দেয়। পরে এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে উভয়ের মধ্যে মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মুল্য ধার্য করে অগ্ৰীম বাবদ ৬০ হাজার টাকা লেনদেন হয় এবং বাকি টাকা পরিশোধ পূর্বক দলিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তিতে মনোয়ারা বেগমের জমির কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় দলিল দেওয়া নেওয়ায় উভয়পক্ষের বিলম্ব হয়।
পরবর্তীতে দেশে থাকা মাহাতাব শিকদারের বড়ভাই সালাউদ্দিন শিকদার ভূমি অফিসে দৌড় ঝাঁপ করে জমির কাগজপত্র ঠিক করে। এরপর বিক্রেতা মনোয়ারা বেগমকে বাকি টাকা নিয়ে জমি লিখে দিতে বলেন। মনোয়ারা বেগম জমি লিখে না দিয়ে মাহাতাব শিকদারের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে ঘুরাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের সদস্য যোগসাজশ করে জমি বিক্রির চুক্তি কে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে উভয় এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে বার বার মনোয়ারা বেগমসহ প্রতারক চক্রের সকল সদস্যদের সামাজিক ভাবে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা কোন প্রকার কর্ণপাত করেনি।
জানা গেছে ওই প্রতারক চক্রের সদস্য মনোয়ারা বেগম (মিমি), জালাল খাঁন, নাছিম খাঁন ও শরিফুল খাঁন একই পরিবারের সদস্য ও ওমান প্রবাসী মাহাতাব শিকদারের নিকটতম আত্মীয়। ওই প্রতারক চক্রের গ্ৰামের বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার চরআটজুড়ী গ্ৰামে। প্রতারিত হওয়া ওই প্রবাসী মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আমি বাবা-মা, ভাই-বোন ছেড়ে প্রবাসে থাকি, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা আয় করেছি। আমার রক্ত পানি করা কষ্টের টাকা নিয়ে আমার নিকটতম আত্মীয়রা প্রতারনা করছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষের সাথে আলাপ করে প্রতারনার ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া যায়। কাগডাঙ্গা গ্ৰামের হাসমত আলী শিকদার, ওবায়েদুল শিকদার, ইমরান শিকদার, সামাদ শিকদার, আলামিন শিকদার, ওহিদুল শিকদার ও আহাদ আলী শিকদার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনোয়ারা বেগম মেমী ও মাহাতাবের সাথে জমি ক্রয় বিক্রয়ের চুক্তির সময় উপস্থিত ছিলাম, সাড়ে পনেরো শতাংশ কৃষি জমি বিক্রির জন্য অগ্রিম টাকা লেনদেন করে মৌখিকভাবে চুক্তি করেছিলেন উভয় পক্ষ। এখন দাতা পক্ষ নয় ছয় করছে। মেমী বেগম ওই জমি এখন পর্যন্ত লিখে দেয়নি। আমরা বার বার শালিস করেও সমস্যাটির সমাধান করতে পারিনি।
এবিষয়ে মোল্লাহাট উপজেলার চরআটজুড়ী গ্ৰামের অভিযুক্ত মনোয়ারা বেগম (মেমী), স্বামী জালাল খাঁন ও দুই ছেলে নাছিম খাঁন ও শরিফুল খাঁন তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সম্পন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা মাহাতাবের কাছে জমি বন্ধক রেখে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। কোন জমি ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি করিনি। ইতিপূর্বে এই প্রতিপক্ষরা আমার মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিয়ে ক্ষতি করেছে। এখন আমাদের প্রতারক বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
প্রিন্ট