বাংলাদেশের আদিবাসী একগোষ্ঠী কোল সম্প্রদয়। যাদের জীবন কাটে বেদেদের মত রাস্তায় রাস্তায়। এদের কথা কেউ শোনে না। অন্যের জায়গায় তাদের বসবাস। কালের প্রবাহ তারা তাদের বৈচিত্রপূর্ণ জীবনের অনেক কিছু হারিয়ে ফেললেও ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পের পৈত্রিক পেশা আঁকড়ে ধরে আছে এখনও।
এরা পুরুষের মতই মহিলারা ভিষণ পরিশ্রমী। কিন্তু মজুরী পাই অর্ধেক। এরা নিজেদের গোত্রের অল্প বয়সের ছেলে মেয়েদেরকে বিয়ে দেয়। এদের প্রিয় খাদ্য বাঁদুরের মাংস। তাদের নাচ গানেরও রয়েছে অনেক খ্যাতি। দু’মুঠো ভাতের জন্য তারা কাক ডাকা সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত পৈত্রিক কর্মে ব্যস্ত থাকে।
তারা আজ বিভিন্ন কারণে বর্তমান কোলেরা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভেড়ামারা পৌর এলাকা আদর্শ কলেজের পাসে পরিত্যক্ত পানি উন্নয়ন বোডের জায়গায় প্রায় ৫০টি পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে আসছে। তারা বেত ও বাঁশের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরী করে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
স্থানীয় ভাষায় এদের কে কোল সম্প্রদায় বলা হয়। তাই কোলদের রয়েছে ৭/৮ টি করে সন্তান। তাদের আহার যোগাতে ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে স্বামী স্ত্রী উভয়ই জীবন সংগ্রামে নেমেছে। আদিবাসী কোল স¤প্রদায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কঠিন হার ভাঙা পরিশ্রম করে। তারা তৈরী করছে বাঁশের বিভিন্ন সামগ্রী, যেমন শরপোস, ঝুড়ি, চালন, ফলের খাঁসি ইত্যাদি। এগুলো গ্রাম গঞ্জে বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না।
কথা হয় শুধীরের সাথে। সে জানায় বর্তমানে প্লাষ্টিকের তৈরি বিভিন্ন জিনিস বাজারে স্বস্তা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাঁশের তৈরী বিভিন্ন জিনিসের কদর কমে গেছে। যার কারণে আয় রোজগারও কমে গেছে আমাদের।
|
শ্রীমতি জানায়,এ কারণে আদিবাসী কোলরা অনেকেই এই পৈত্রিক পেশার পাশাপাশি মহিলা পুরুষের মতই অনেকেই ক্ষেত মজুর কাজে নিয়োজিত। কিন্তু এখানেও মুজরী নিয়ে রয়েছে নানা রকম বৈষম্য।
অনিতা রাণী, রূপা রাণী ও সৌভাগ্য রাণী জানায়, ক্ষোভের কথা। তারা বলে আমরা সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করি। কিন্তু আমাদের মজুরী জোটে পুরুষের মজুরীর চেয়ে অর্ধেক। বর্তমানে নিত্যদ্রব জিনিষের যে দাম। এতে করে সংসার চলে না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখাবো কি দিয়ে? কোল পট্টিতে লোক সংখ্যা প্রায় ১শ’ জন।
খোঁজ নিয়ে জানাযায় কেউ কেউ ভোটার আছে। এরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। মাথা গুজার ঠাঁই নেই তাদের। এরা হিন্দু ধর্মালম্বী। নাচগান ও কেউ কেউ আবার সাপ ধরে সাপের খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করে জীবন ধারণ করছে।
জয়ন্তী রাণীসহ আরো অনেকেই চোখের জল ফেলে বলেন কেউ তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে না। ভোটের সময় চেয়ারম্যান মেম্বরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে উন্নয়নের আশ্বাস দিয়ে ভোট নেয়। কিন্তু ভোট শেষে কেউ আর তাদের কোন খোঁজ খবর রাখে না।
প্রিন্ট