একইদিনে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নতুন করে শান্তি আলোচনা শুরুর কথা বলেছে চীন। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ১২ দফার সেই শান্তি প্রস্তাবও প্রকাশ করেছে বেইজিং। যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশেই ইউক্রেনের পক্ষে শান্তিপূর্ণ র্যালির আয়োজন করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক গোষ্ঠী। খবর রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি, সিএনএনের।
ইউএন নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৪১টি। ইউক্রেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রায় সবই অবিলম্বে রুশ সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে ভোট পড়েছে সাতটি। দক্ষিণ এশিয়ার বাকি তিন দেশ আফগানিস্তান, নেপাল ও ভুটান প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। জাতিসংঘে জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের (এনইউজি) প্রতিনিধিত্ব করা মিয়ানমারের ভোট পড়েছে প্রস্তাবের পক্ষে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে আনা চারটি প্রস্তাবের একটিতে পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি সবকটিতেই ভোটদানে বিরত থেকেছে। প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এ ধরনের প্রস্তাব মানতে কোনো দেশ আইনত বাধ্য নয়। তবে প্রস্তাবে রয়েছে রাজনৈতিক গুরুত্ব।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেছিলেন, ‘আমরা কেবল আন্তর্জাতিক হিউম্যানিটারিয়ান আইনের ব্যত্যয় না ঘটলে, সেখানে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে কোনো কিছু করা হলে আমরা সাধারণত সেখানে অংশ নিই না।’
কিয়েভে সফররত স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, চীন আমাদের বলেছে তাদের এমন একটি উদ্যোগ রয়েছে। তবে আমি এখনো নথিটি দেখিনি। পরিকল্পনাটি মূল্যায়ন করার আগে বেইজিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে চান জেলেনস্কি।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এটি মূলত অত্যন্ত ভালো একটি ব্যাপার যে, চীন ইউক্রেন সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেছে এবং এ সংক্রান্ত কিছু সংকেত পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তাদের প্রস্তাব সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট তথ্য জানার পর আমরা কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছব। আমরা চীনের সঙ্গে একটি বৈঠক করতে চাই।’ এদিন ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের দাবি এবং মস্কোর আগ্রাসনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের দাবিসহ ১০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইউক্রেনও।
পরদিন শুক্রবার যুদ্ধের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে নিজের টেলিগ্রাম পোস্টে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এই বছরটি ছিল দুঃখ, বিশ্বাস এবং ঐক্যের। আমরা জানি এই বছর (২০২৩) হবে আমাদের বিজয়ের বছর।’ উস্কানি ছড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ড।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ২০০ কোটি ডলার নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের কী প্রয়োজন সেদিকে আমরা নজর রাখছি। ইউক্রেনের যা প্রয়োজন তাই আমরা সরবরাহ করছি। বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। এর পরপরই কয়েকদিনের মধ্যেই ইউক্রেনে জার্মানির লেপার্ড ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে পোল্যান্ড। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যাতিউসজ মোরায়ইকি বলেছেন, ‘খুব শিগগিরই, কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা পিটি-৯১ ট্যাংক পাঠাব ইউক্রেনে।’
প্রিন্ট