কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া গ্রামে কয়া ওলামা মাসায়েক আইম্মা পরিষদের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর নেতা কর্মিদের নেতৃত্বে কয়া চাইল্ড হ্যাভেন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ এর বাড়ীতে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছে । শুক্রবার ২৪ শে ফেব্রুয়ারী দুপুর আনুমানিক সাড়ে তিন টার সময় এই হামলা চালানো হয় এবং হামলায় ৩শ থেকে ৪শ ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর নেতা কর্মিরা অংশ গ্রহণ করেন ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ( ২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২ টায় উপজেলার কয়া ইউনিয়নের ইসলামী আন্দোলন ও ওলামা মাসায়েক আইম্মা পরিষদের আয়েজনে ঘোড়াই দারুল উলূম হাফেজিয়া ও এতিমখানা প্রাঙ্গনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত । কয়া ওলামা মাসায়েক আইম্মা পরিষদের সভাপতি মুফতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম, ঘোড়াই জামে মসজিদের ইমাম তাওহিদুল ইসলামসহ প্রমূখ। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সমাবেশে ইউনিয়নের শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক আবু সালেহ এর বাড়ীতে হামলা ও ভাংচুর চালানো বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকের পরিবারের সদস্যরা ।
প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন লিলি বলেন, তাঁর স্বামীকে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আবার ষড়যন্ত্রকারী ইসলামী আন্দোলনের ৩শ থেকে ৪শ নেতাকর্মীরা তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছেন ।
নিলুফা ইয়াসমিন লিলি আরো জানান, ঘোড়াই দারুল উলূম হাফেজিয়া ও এতিমখানা প্রাঙ্গনে সমাবেশ এর খবর শোনা মাত্রই তারা হামলার আশঙ্কা করেন এবং বিষয়টি ৯৯৯ ফোন করে পুলিশকে জানান । কিন্তু পুলিশ হামলার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষক আবু সালেহ এর ভাতিজা ফৌজিয়া জানান, আমারা ছোট চাচাকে নিয়ে গুজব রটানো হয়েছে যা সবাই দেখেছে এবং শুনেছে । আজ আমরা মিছিলের আওয়াজ পাই এবং সাথে সাথেই আমরা চাচীকে বাসা থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেই । এর কিছুক্ষণ পরেই আমরা ইট ও পাথর নিক্ষেপের শব্দ পাই এবং সাথে সাথে আমরা ৯৯৯ ফোন দিয়ে থানা পুলিশকে জানাই ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষক আবু সালেহ এর পুত্র নিখিল জানান, নামাজের পরে ইসলামী আন্দোলনের যে সকল নেতারা আমার আব্বুর নামে মিথ্যা মামলা করেছে তারা মিছিল বের করে এবং ধাপে ধাপে এগিয়ে এসে বাড়ীতে হামলা করে । সেই বাড়ীর মানুষজন যারা ছিলো তাদেরকেও ইট পাটকেল মারে । ইসলাম তো শান্তির ধর্ম, এটাকি আসলে শান্তি ছিলো ? এই সকল ষড়যন্ত্রকারী কিছু মানুষ ইসলামকে ব্যবহার করে মানুষের মনে আঘাত দিচ্ছে । আমরা এর বিচার চাই ।
উল্লেখ্য, কয়া চাইল্ড হ্যাভেন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ এবং কয়া মালিথাপাড়া গ্রামের মৃত আঃ জব্বারের ছেল মো. আবু সালেহ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীদের বোরকা ও হিজাব পরিধান করতে নিষেধ করে আসছে এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার রাত রাত ১২ টার পরে এনামুল হক নামের একজন থানায় থামলা করেন। উক্ত মামলায় বুধবার ভোরে প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে এই হামলার ঘটনায় এলাকাবাসী তিব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছেন ।
কুমারখালী থানার ওসি মো. মোহসীন হোসাইন বলেন, পুলিশকে না জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পুলিশ সেখানে ছিলো। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে একটি চক্র আসামীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন তিনি।
প্রিন্ট