দীর্ঘ আট মাস পর স্পট মার্কেট থেকে সংগ্রহকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসবাহী (এলএনজি) ট্যাঙ্কার প্রবেশ করল বাংলাদেশে ১ লাখ ৫৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার ঘনফুট এলএনজি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ট্যাঙ্কারটি গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ভেড়ার কথা। উচ্চমূল্যের কারণে গত বছরের জুনের পর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি স্থগিত রাখে বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট এলএনজির দাম আবারো কমতে শুরু করেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এশিয়ার বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আবারো এলএনজি আমদানি শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ।
আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ ও কেপলার শিপিং ডাটার তথ্য অনুযায়ী সিপ্যাক ম্যাগেলান নামের জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ক্যালকাসিউ পাস থেকে এলএনজি বোঝাই করে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয় গত ১৮ জানুয়ারি।
এ বিষয়ে রেফিনিটিভের এলএনজি বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ওলুমিদে আযায়ি পণ্য পরিবহন- ক্রান্ত তথ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘২০২২ সালের জুনের পর বাংলাদেশের কেনা প্রথম স্পট এলএনজি সিপ্যাক ম্যাগেলান এখন পথে রয়েছে। জাহাজটি ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছানোর কথা। সেক্ষেত্রে তা টোটাল এনার্জিকে এ গ্যাস সরবরাহের জন্য পেট্রোবাংলার দেয়া ক্রয়াদেশের শর্তে উল্লিখিত সময়ের সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ।’
এ বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও টোটাল এনার্জির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করছে টোটাল এনার্জি দ্বিতীয় আরেকটি ক্রয়াদেশের ভিত্তিতে জাপানের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান জেরার কাছ থেকে আরেক কার্গো এলএনজি আমদানি করছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি এমএমবিটিইউ (মেট্রিক মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) ১৬ ডলার ৫০ সেন্ট মূল্যে বাংলাদেশকে এলএনজি সরবরাহ করছে জেরা।
দেশে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়াটি মূলত সম্পন্ন করে পেট্রোবাংলার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনের মধ্যে স্পট মার্কেট থেকে ১০-১২ কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ পরিমাণ এলএনজি কিনতে অর্থের প্রয়োজন হবে কমপক্ষে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাজারে বর্ধিত চাহিদার কারণে স্পট এলএনজির দাম আবার বাড়তে শুরু করলে এ ব্যয়ের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের মতো এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির বেশ কয়েকটি দেশ গত বছর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে বর্তমান মূল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা সবাই এখন স্পট মার্কেটে ফিরে আসছে। বিশেষ করে থাইল্যান্ড ও ভারত আবারো স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চাহিদা বেড়ে গিয়ে পণ্যটির মূল্য আবারো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা।
বাজারদর এ মুহূর্তে নিম্নমুখী থাকলেও এলএনজির আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে রেফিনিটিভের এলএনজি বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ওলুমিদে আযায়ির ভাষ্য হলো, সামনের দিনগুলোয় বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছ থেকে আরো অনেক ক্রয়াদেশ পাবে।
তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে বাজারের নিয়ন্ত্রক হলো সরবরাহকারীর। এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলাদেশ ব্রুনেইর প্রত্যাশা পূরণের মতো কোনো প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে কিনা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেসিনে এখন অন্য কয়েকটি উৎপাদনকারী দেশ রয়েছে, যাদের বাংলাদেশে খুব সহজেই পণ্য পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। এমন বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে পাপুয়া নিউগিনি, ব্রুনাই ও ইন্দোনেশিয়ার বোন্টাং এলএনজি প্রকল্প।
বাংলাদেশ এখন স্পট মার্কেটের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়ও ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করছে এর মধ্যে ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে। কাতারের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ১৫ বছরের।
প্রিন্ট